ছবি: সংগৃহীত
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার এক নিভৃত পল্লি কাপাসহাটিয়া। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেতা মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ ও স্বদেশি চেতনায় দীক্ষিত এক অনুসারী এখানে গড়ে তোলেন গান্ধী আশ্রম।
ব্রিটিশরা এ দেশ ছেড়ে যাওয়ায় গঠিত হয় ভারত ও পাকিস্তান নামে আলাদা রাষ্ট্র। পাকিস্তান সৃষ্টির গোড়ার দিকে আশ্রমটি বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর ফের পুনর্জাগরিত হয় এ গান্ধী আশ্রম। এ আশ্রমকে ঘিরে ভারতবর্ষের ব্রিটিশপর্ব, পাকিস্তানপর্ব, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধসহ ইতিহাসের অবিচ্ছিন্ন ধারাকে তুলে ধরতে আশ্রম প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর।
মূলত ব্রিটিশশাসিত ভারতবর্ষের মানুষ গান্ধীর স্বদেশি মন্ত্রে দীক্ষিত হয়েছিলেন। স্বদেশি চেতনায় ভারতবর্ষজুড়ে বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছিল গান্ধী আশ্রম। এ আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সে সময় গান্ধীভক্ত নাসির উদ্দিন সরকার এ আশ্রমের গোড়াপত্তন করেন। আশ্রমে তিনি গ্রামের মানুষকে স্বদেশি চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে চরকায় সুতা তৈরি, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, লেখাপড়া ও শরীরচর্চা কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।
১৯৪৮ সালে পাকিস্তানি শাসক বাহিনী গান্ধী আশ্রমটি গুঁড়িয়ে দেয় এবং আশ্রমটির প্রতিষ্ঠাতা নাসির উদ্দিন সরকারকে ব্যাপক মারধর করে। একপর্যায়ে তাকে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায়। এরপর পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় গান্ধী আশ্রমের কার্যক্রম। পরে জাতিসংঘ ২০০৭ সালের ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক অহিংস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। সেদিনই স্থানীয়দের উদ্যোগে পুনরায় গড়ে তোলা হয় গান্ধী আশ্রমটি।
২০০৮ সালে গান্ধী আশ্রমের আঙিনায় প্রতিষ্ঠা করা হয় মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর। ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর বর্তমানে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে হয়ে উঠেছে ইতিহাস শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র। এ ছাড়া ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এ স্থান দেখতে আসেন বিশ্বের নানা প্রান্তের পর্যটক ও বিদেশি অতিথিরা।
গান্ধী আশ্রম ও মুক্তি সংগ্রাম জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বাঙালি ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নতুন প্রজন্মের কাছে ছড়িয়ে দিতে এখানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। বিশেষ করে বাঙালি সংস্কৃতি থেকে যেসব অনুষঙ্গ, আচার-অনুষ্ঠান প্রায় বিলীন, সেসব নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রয়াস থাকে এসব অনুষ্ঠানে।
এখানে প্রতিবছর ‘লোক সংস্কৃতি উৎসব ও লোকজ মেলা’ আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ মেলায় গ্রামীণ জীবনের দৈনন্দিন ও কৃষিকাজে যেসব তৈজসপত্র বা জিনিসপত্র ব্যবহৃত হয় তার প্রদর্শনী করা হয়। আবহমান গ্রাম বাংলার জারি, সারি, কীর্তন, ঘেটু, পালা, লাঠিখেলা, মালশী গান, ক্বাসিদা, বাউল গান, ধুয়া গান, পুঁথিপাঠ ও যাত্রাপালাসহ নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনা থাকে উৎসবে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন