সোমবার, ১লা সেপ্টেম্বর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১৭ই ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ গঠনে সিইসির আশ্বাস *** তিন দলের তিন মত, ফেব্রুয়ারিতেই ভোট করতে অনড় সরকার *** চীন সফর শেষে দেশে ফিরলেন এনসিপির নেতারা *** মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতিকে ধারণ করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে: হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ *** কেউ যদি নির্বাচনের বিকল্প নিয়ে ভাবে, সেটা হবে জাতির জন্য গভীর বিপজ্জনক: প্রধান উপদেষ্টা *** জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে আলোচনা হয়নি: বিএনপি *** ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে হাজারো মানুষের বিক্ষোভ *** ট্রাম্পের শুল্কের যে প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ১৫ হাজার গার্মেন্টসে *** বিস্ফোরণ-গুলি-ড্রোনের শব্দকে শ্রুতিমধুর সংগীতে রূপান্তর করছেন গাজার শিল্পী *** অশান্ত বিশ্বে সি–মোদির বন্ধুত্বের বার্তা

সিনেমার ডাবিং করবে এআই, মিলিয়ে দেবে ঠোঁটের নড়াচড়া

বিনোদন ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৭:০৯ অপরাহ্ন, ১৮ই আগস্ট ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রকে আমেরিকার মূলধারার বাজারে পৌঁছে দেওয়ার নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত ভিজ্যুয়াল ডাবিং প্রযুক্তি। লস অ্যাঞ্জেলেসভিত্তিক স্বাধীন প্রযোজনা সংস্থা এক্সওয়াইজেড ফিল্মসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ম্যাকসিম কট্রে জানান, এতদিন বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র আমেরিকায় সীমিত দর্শকের মধ্যেই আবদ্ধ ছিল। কারণ, আমেরিকান সমাজ ইউরোপের মতো সাবটাইটেল বা ডাবিং-এ অভ্যস্ত নয়। খবর বিবিসির।

তিনি বলেন, ‘আমেরিকার বাজার বিদেশি চলচ্চিত্রের জন্য বরাবরই কঠিন। এর প্রধান কারণ ভাষা। আমেরিকার দর্শকেরা সাবটাইটেল বা ডাবিং-এ অভ্যস্ত নন। তাই তারা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র খুব একটা দেখতে চান না।’ তবে নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-নির্ভর ডাবিং প্রযুক্তি এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করছে বলে মনে করেন তিনি।

এরইমধ্যে আমেরিকার প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি দেওয়া হয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্ত-চালিত ডাবিং প্রযুক্তির দিয়ে ডাবিংকৃত সুইডিশ সায়েন্স ফিকশন চলচ্চিত্র ‘ওয়াচ দ্য স্কাইজ’। চলচ্চিত্রটির অডিও ও ভিডিও প্রক্রিয়াজাত করা হয় ‘ডিপএডিটর’ নামের একটি ডিজিটাল টুলে, যা এমনভাবে সংলাপকে রূপ দেয় যে মনে হয় অভিনেতারা ওই ভাষাতেই কথা বলছেন।

এক্সওয়াইজেড ফিল্মসের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ম্যাক্সিম কট্রে বলেন, ‘প্রথম যখন এই প্রযুক্তির ফলাফল দেখেছিলাম, তখন ভালো লেগেছিল। কিন্তু সর্বশেষ সংস্করণ দেখে আমি অভিভূত। আমি নিশ্চিত, সাধারণ দর্শক বুঝতেই পারবে না এটি ডাব করা—তারা ধরে নেবে অভিনেতারাই ওই ভাষায় কথা বলছেন।’

এই বছরের মে মাসে ‘ওয়াচ দ্য স্কাইজ’-এর ইংরেজি সংস্করণ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ১১০টি এএমসি থিয়েটারে মুক্তি পায়। কট্রে জানান, ‘ইংরেজিতে ডাব না করা হলে এই ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছানো সম্ভব হতো না। ফলে মার্কিন দর্শকরা এমন একটি সুইডিশ স্বাধীন চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ পেয়েছেন, যা অন্যথায় কেবল সীমিত পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকত।’ তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে এএমসি একই ধরনের আরও আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পরিকল্পনা করছে।

ডিপএডিটর প্রযুক্তিটি তৈরি করেছে ফ্ললেস নামক লন্ডনভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালে ফ্ললেস প্রতিষ্ঠা করেন লেখক ও পরিচালক স্কট ম্যান। তিনি হেইস্ট, দ্য টুর্নামেন্ট এবং ফাইনাল স্কোরসহ একাধিক চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।

স্কট ম্যান জানান, আন্তর্জাতিক সংস্করণের জন্য প্রচলিত ডাবিং কৌশল তার চলচ্চিত্রগুলোর আসল আবেগ ও প্রভাবকে যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালে হেইস্ট ছবিতে রবার্ট ডি নিরোসহ দুর্দান্ত একটি কাস্ট নিয়ে কাজ করেছিলাম। কিন্তু যখন সেই ছবিটি অন্য ভাষায় ডাব করা সংস্করণে দেখলাম, তখনই বুঝলাম কেন সিনেমা আর টেলিভিশন আন্তর্জাতিকভাবে তেমন সাড়া পায় না। কারণ পুরনো ধাঁচের ডাবিং আসলে পুরো চলচ্চিত্রের আবেগ ও অনুভূতি নষ্ট করে দেয়। সবকিছু তালছাড়া হয়ে যায়, অভিনয়ও ভিন্নভাবে প্রতিফলিত হয়। আমি বলব, ডাবিংয়ের কারণে আন্তর্জাতিক দর্শকেরা প্রকৃত মান তো পানই না, বরং নিম্নমানের সংস্করণ তাদের কাছে পৌঁছায়।’

অভিনয়ের আবেগ অক্ষুণ্ণ রেখেই বিভিন্ন ভাষায় চলচ্চিত্রটি উপস্থাপন করতে সক্ষম ডিপএডিটর। ২০১৮ সালের একটি গবেষণাপত্র থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই প্রযুক্তির নাম রাখা হয় ‘ডিপএডিটর’। স্কটম্যান জানান, ফেস ডিটেকশন, ফেসিয়াল রিকগনিশন, ল্যান্ডমার্ক শনাক্তকরণ এবং থ্রিডি ফেস ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে প্রতিটি দৃশ্যে অভিনেতার চেহারা, অঙ্গভঙ্গি ও আবেগ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়। এতে নতুন করে শুটিং বা ডাবিং ছাড়াই অভিনয়ের মূল আবেগ ধরে রেখে এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তর করা সম্ভব হয়। স্কট বলেন, ‘ওয়াচ দ্য স্কাইজ’ ছিল বিশ্বের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ভিজ্যুয়ালি-ডাবড ফিচার ফিল্ম। শুধু অন্য ভাষায় উপস্থাপনই নয়, একই দৃশ্যের অন্য টেক থেকে উন্নত অভিনয় এনে ব্যবহার করতে পারে এই প্রযুক্তি।

শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম যেমন নেটফ্লিক্স ও অ্যাপল টিভির প্রসারের কারণে বৈশ্বিক ডাবিং বাজার ২০২৪ সালের ৪ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩৩ সালে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। স্কট বলেন, ‘ডিপ এডিটর দিয়ে ডাবিংয়ে যে খরচ হয়, তা প্রচলিত শুটিং বা ডাবিংয়ে খরচের প্রায় দশভাগের একভাগ।’ তিনি আরও জানান, তাঁর গ্রাহকদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মই রয়েছে।

প্রযুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে স্কট বিবিসিকে বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে অসংখ্য সিনেমা ও টিভি শো আছে, যা ইংরেজিভাষী দর্শকেরা দেখেন না। কারণ অনেকেই সাবটাইটেল বা ডাবিং পছন্দ করেন না। এই প্রযুক্তি সেই সীমাবদ্ধতা দূর করবে।’ তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই প্রযুক্তি অভিনেতাদের বিকল্প নয়। এখানে সিনথেটিক ভয়েসের পরিবর্তে শুধু অভিনেতাদের আসল কণ্ঠস্বর ব্যবহার করা হয়।

তবে, এই প্রযুক্তির নেতিবাচক দিক কী হতে পারে তা নিয়ে শঙ্কিতও অনেকে। ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলচ্চিত্র ও গণমাধ্যমের সহকারী অধ্যাপক নেত্তা আলেকজান্ডার বলেন, বিদেশি চলচ্চিত্রকে কৃত্রিমভাবে ইংরেজি ভাষায় রূপান্তর করলে ভাষা, সংস্কৃতি ও অঙ্গভঙ্গির স্বকীয়তা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়। তার ভাষ্য—‘যদি সব বিদেশি ছবি ইংরেজি ভাষার মতো শোনায় ও দেখায়, তাহলে দর্শকদের অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে কৃত্রিম ও নির্জীব। এতে আন্তঃসাংস্কৃতিক বোঝাপড়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সাবটাইটেল বা মূল ভাষায় সিনেমা দেখার প্রবণতাও কমে যাবে।’

আলেকজান্ডার আরও সতর্ক করেন, সাবটাইটেল সরিয়ে দেওয়ার ফলে ভাষাশিক্ষার্থী, অভিবাসী, শ্রবণপ্রতিবন্ধীসহ নানা দর্শক বঞ্চিত হতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ক্লোজড ক্যাপশনিং শুধু একটি বিকল্প নয়, বরং এটি ভিজ্যুয়াল ও অডিও—উভয় দিকের গল্প বলাকে সবার জন্য অক্ষুণ্ণ রাখার উপায়। বিদেশি সিনেমাকে সহজভাবে ইংরেজিভাষীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেয়ে বরং ভাবা উচিত—কীভাবে দর্শকদের ভিন্ন সংস্কৃতির সিনেমা তাদের নিজস্ব শর্তে গ্রহণে উৎসাহিত করা যায়।’


সিনেমা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন