ছবি: সংগৃহীত
তামাকবিরোধীদের কর ও মূল্য প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা হলে ধূমপান হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। একই সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদে অন্তত নয় লাখ তরুণসহ মোট সতেরো লাখের বেশি মানুষের অকাল মৃত্যুরোধ করা সম্ভব হবে।
এছাড়াও আগামী অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের নিম্ন ও মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে দাম বাড়ানো হলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী এবং তরুণ প্রজন্ম ধূমপানে নিরুৎসাহিত হবে। তামাকখাতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
রাজধানীর বিআইপি কনফারেন্স রুমে ১৩ই এবং ১২ই মার্চ অনুষ্ঠিত ‘তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ: বাজেট ২০২৫-২৬’ শীর্ষক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব বিষয় তুলে ধরেন আলোচকরা। গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত দুটি কর্মশালায় প্রিন্ট, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ায় কর্মরত মোট ৫০ সাংবাদিক অংশ নেন।
আলোচকরা বলেন, সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর (নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও প্রিমিয়াম) থাকায় তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। বিশেষ করে, নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেটের দাম কাছাকাছি হওয়ায় ভোক্তা যে কোনো একটি স্তরের সিগারেট বেছে নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
কর্মশালায় জানানো হয়, বাংলাদেশে তামাকপণ্য অত্যন্ত সস্তা এবং নিত্যপণ্যের তুলনায় এগুলো আরো সস্তা হয়ে পড়ছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ৭টি মহানগরীর (ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল ও রংপুর) নিত্যপণ্যের গড় খুচরা মূল্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০২১ সালের (৪ঠা জুলাই) তুলনায় ২০২৩ সালে (৪ঠা জুলাই) খোলা চিনির দাম ৮৯, আলু ৮৭, খোলা আটা ৭৫, পাঙ্গাস মাছ ৪৭, ডিম ৪৩, সয়াবিন তেল ৩৪, গুঁড়ো দুধ ৩০ এবং ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ২৭ শতাংশ। অথচ একই সময়ে বিভিন্ন স্তরের সিগারেটের দাম বেড়েছে মাত্র ৬ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে তরুণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী এই ক্ষতিকর পণ্য ব্যবহারে বিশেষভাবে উৎসাহিত হচ্ছে।
আসন্ন বাজেটে তামাকপণ্যের কর ও মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত যেসব প্রস্তাব কর্মশালায় তুলে ধরা হয়, সেগুলো হচ্ছে, নিম্ন স্তর এবং মধ্যম স্তরকে একত্রিত করে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ করা; উচ্চ স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৪০ টাকায় অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা। সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭ ভাগ সম্পূরক শুল্ক, ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২৫ টাকা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ২০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৫৫ টাকা এবং ১০ গ্রামগুলের খুচরা মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা। এছাড়া সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখা।
কর্মশালাগুলোতে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দৈনিক জনকণ্ঠের সিটি এডিটর কাওসার রহমান, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের ডেপুটি এডিটর সাজ্জাদুর রহমান, আত্মার কনভেনর লিটন হায়দার, কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ ও মিজান চৌধুরী এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের, মো. হাসান শাহরিয়ার প্রমুখ।
কেসি/এইচ.এস
খবরটি শেয়ার করুন