শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফেসবুকের কল্যাণে এক যুগ পর মাকে ফিরে পেল সন্তানরা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৫৫ অপরাহ্ন, ৩রা মে ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

মানসিক ভারসাম্যহীন জগুনা বিবি। সেজন্য মাঝেমধ্যে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে চলে যেতেন। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে পুনরায় খুঁজে বাড়ি ফিরিয়ে আনতেন। তবে শেষবারের ঘটনাটি একটু ভিন্ন। এর আগে তাঁকে নিজ জেলার মধ্যে খুঁজে পাওয়া গেলেও, শেষবার কোথাও সন্ধান মিলছিল না। পরিবারের সদস্যরা ভেবেছিলেন হয়তো আর পাওয়া যাবে না। এভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময়। 

অবশেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে খুঁজে পাওয়া যায় জগুনা বিবিকে। এরইমধ্যে বাড়িও ফিরেছেন তিনি। তাঁকে ফিরে পেয়ে আনন্দিত স্বজন ও এলাকাবাসী। 

পরিবার সূত্রে জানা যায়, জগুনা বিবির বয়স এখন ৭০। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার জাজিরা ইউনিয়নের ডেঙ্গর বেপারী কান্দি এলাকায়। স্বামীর নাম লাল মিয়া বেপারী। ২০১১ সালে তিনি নিখোঁজ হন। এরপর আর সন্ধান মিলছিল না তাঁর। 

গত রমজান মাসে জাজিরা উপজেলার মাসুদ রানা নামের এক যুবকের ফেসবুক আইডিতে কমেন্ট করেন আজিজুল শেখ নামের এক ব্যক্তি। যার বাড়ি ভারতের কলকাতায়। তিনি কমেন্টের মাধ্যমে জানান তাঁর কাছে আট বছর ধরে বাংলাদেশের জাজিরার জগুনা নামের একজন বৃদ্ধা রয়েছেন। এরপর মাসুদ রানা জাজিরার কয়েকটি ফেসবুক গ্রুপে জগুনা বিবির ছবি দিয়ে তাঁর পরিবারের সন্ধান চেয়ে পোস্ট করেন। আর সেখান থেকেই খোঁজ মেলে জগুনা বিবির পরিবারের। এরপর পরিবারের সদস্যরা কলকাতার আজিজুল শেখের সাথে যোগাযোগ করে গত ৩০শে এপ্রিল কলকাতা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন জগুনা বিবিকে। দীর্ঘদিন পর তাঁকে কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত পরিবারের সদস্যরা।

জগুনা বিবির ছেলে জয়নাল বেপারী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার মা হারিয়ে যাওয়ার পর অনেক জায়গায় খোঁজ করেছি, কিন্তু পাইনি। ভেবেছিলাম মাকে আর খুঁজে পাবো না। পরে মাসুদ ভাইয়ের মাধ্যমে আমার মায়ের খোঁজ পাই। আমরা সাথে সাথে কলকাতার সেই ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করে মায়ের পরিচয়পত্রসহ সকল প্রকার ডকুমেন্টস পাঠাই। উনি আমার মাকে দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। আমি আমার মাকে পেয়ে অনেক খুশি।’ 

জগুনা বিবিকে নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেওয়া যুবক মাসুদ রানা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্টে পোস্ট দেওয়ার পর সেখানে আজিজুল শেখ নামের একজন কমেন্ট করেন। পরে হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর নিয়ে আমার সাথে মোবাইলে কথা বলেন। তিনি জানান আমাদের জাজিরা এলাকার জগুনা বিবি নামের একজন বৃদ্ধা তাঁর কাছে আছেন। আমি তাঁর সাথে কথা বলে তথ্য নিয়ে “প্রাণের জাজিরা” নামের ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট দিলে জগুনা বিবির পরিবার আমার সাথে যোগাযোগ করে। পরে আমি কলকাতার আজিজুল শেখের সাথে তাদের কথা বলিয়ে দিই।’

জগুনা বিবির আশ্রয়দাতা কলকাতার আজিজুল শেখ মোবাইল ফোনে গণমাধ্যমকে জানান, অন্তত আট বছর আগে অসুস্থ অবস্থায় জগুনা বিবিকে খুঁজে পান। এরপর থেকেই তিনি তাদের পরিবারের সাথে থাকা শুরু করেন। চার মাস আগে হঠাৎ করে তিনি তার ছেলেমেয়ে ও আগের বাসস্থানের কথা বলতে থাকেন। এরপর ফেসবুকে সার্চ করে জাজিরার মাসুদ রানা নামের এক তরুণের সন্ধান পান আজিজুল। সেখান থেকে জগুনা বিবির পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে তাঁর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে আবেদন করলে অনুমতি পাওয়ার পর বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে পরিবারের কাছে পাঠানো হয় তাঁকে।

জগুনা বিবির পাসপোর্টবিহীন ভারত থেকে বাংলাদেশে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজহারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি কারো পাসপোর্ট হারিয়ে যায় বা কোনো কারণে কেউ পাসপোর্টবিহীন অন্য দেশে প্রবেশ করেন কিন্তু কোনো অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত না হন এমন ব্যক্তিদের দুই দেশের সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে আউটপাস বা ট্রাভেলপাসের মাধ্যমে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনা বা নেওয়া যায়।’

এই বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া ইসলাম লুনা গণমাধ্যমকে জানান, দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর জগুনা বিবিকে তাঁর পরিবার ফিরে পেয়েছে। এটি আসলেই আনন্দের সংবাদ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁর বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হবে। যদি জগুনা বিবি অসুস্থ থাকেন প্রয়োজনে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।

এইচআ/ আই.কে.জে

ভারত ফেসবুক মা জাজিরা ভারসাম্যহীন

খবরটি শেয়ার করুন