মঙ্গলবার, ২০শে মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরকের ফতোয়া, তা-ই কাটা হলো শতবর্ষী বটগাছ

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৫৫ অপরাহ্ন, ৬ই মে ২০২৫

#

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

মাদারীপুরে কুমার নদের পাশে শতবর্ষী একটি বটগাছ। অনেকে নানা বিশ্বাস-বোধ থেকে এ গাছের গোড়ায় মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালাতেন। পাশাপাশি নতুন গামছা, কাপড়, মিষ্টি, নাড়ু ও হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা জিনিসপত্র রেখে যেতেন। এমনকি গাছের শিকর, ডালপালা ও মাটি নিয়ে যেতেন।

গেল বৈশাখে ওই বটগাছের নিচে মেলা ও বাউল গানের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। এতে বাধা দেন স্থানীয় আলেম-ওলেমারা। পাপ ও শিরকের অভিযোগ এনে গতকাল সোমবার (৫ই মে) শতবর্ষী গাছটি কেটে ফেলেন তারা। ঘটনাটি ঘটেছে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরার কান্দি গ্রামে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, গাছটির গোড়ার দিকের কিছু অংশ এখনো কাটা অবশিষ্ট আছে। তবে ইতিমধ্যে বেশিরভাগই কেটে ফেলা হয়েছে। খবর পেয়ে সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগের লোকজন।

গাছ কাটার যে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, তা নিয়ে চলছে নানা মন্তব্য। স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলার সিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরার কান্দি গ্রামের কুমার নদের পাশে স্থানীয় সাত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন একটি বাগানের মধ্যে শত বছরের একটি বটগাছ ছিল। গত কয়েক বছর ধরে গাছটিকে ঘিরে কিছু লোকজন নানা কর্মকাণ্ড করে আসছিলেন। 

তারা মনের বাসনা পূরণ, রোগ বালাই থেকে মুক্তি, সন্তান কামনাসহ নানা বিষয় নিয়ে মানত করতেন। গাছের গোড়ায় মোমবাতি ও আগরবাতি জ্বালাতেন। পাশাপাশি নতুন গামছা, কাপড়, মিষ্টি, নাড়ু ও হাঁড়ি-পাতিলসহ নানা জিনিসপত্র রেখে যেতেন। এমনকি গাছের শিকর, ডাল পালা ও মাটি নিয়ে যেতেন।

সম্প্রতি বৈশাখকে ঘিরে শতবর্ষী এ বটগাছের নিচে মেলা ও বাউল গানের আয়োজন করেন স্থানীয়রা। এতে করে চোখে পরে স্থানীয় আলেম সমাজের। তারা বাধা দিলে আর সেখানে বৈশাখের এ আয়োজন হয়নি।

তারা আরও জানান, পাশের গ্রাম সদর উপজেলার চরঘুনসি গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর সাত্তার হাওলাদারের মালিকানাধীন জায়গার গাছটি ১৫০০ টাকায় স্থানীয় আলেমরা কিনে নেন। সোমবার সকাল থেকে গাছটি কাটা শুরু করেন তারা। গাছের বেশিরভাগ অংশ কাটা সম্পন্ন হলেও গোড়ালির কিছু অংশ বাকি থাকে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে সাত্তার হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক দেখে ঘটনাস্থল থেকে সরে পড়েন এবং মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখেন। গাছ কাটায় অংশ নেওয়া আব্দুল কুদ্দুস নামে এক ব্যক্তি বলেন, গতকাল আমিও গাছ কাটায় অংশ নিয়েছি। এ গাছকে ঘিরে শিরক চলে। গাছের গোড়ায় মোমবাতি, নতুন কাপড় ও মিষ্টি দেওয়া হয়। যা পাপ ও শিরক। আল্লাহ এগুলো মেনে নেবেন না। তাই শতাধিক আলেম ও জনতা মিলে গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে।’

শিরখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান বাবুল হোসেন বলেন, ‘এভাবে না কেটে গাছটি বাঁচিয়ে রাখা উচিত ছিল। যদি কেউ গাছের গোড়ায় মিষ্টি বা নতুন কাপড় দান কিংবা মোমবাতি বিতরণ করে থাকেন, তাহলে তাদের বোঝানো যেত। এভাবে পুরোনো একটি গাছ কেটে ফেলা উচিত হয়নি।’

মাদারীপুর বন বিভাগের জেলা বন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ঘটনাটি আমরা জানি। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ব্যাপারটি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। তারা যে সিদ্ধান্ত দেন, সেইভাবে পরবর্তী কাজ করা হবে।’

এইচ.এস/

ফতোয়া

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন