ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের ‘দুর্নীতিবাজ’ নেতাদের তালিকা পেলে দুদককে তদন্ত করতে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শনিবার (৮ই জুন) দুপুরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বাজেট প্রতিক্রিয়া জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
আপনাদের দলের অনেক নেতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির নানা অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তাদের তালিকা দিন, আমরা দুদককে বলব তদন্ত করতে। যাদেরকে দুর্নীতিবাজ ভাবছেন, আপনারা তালিকা প্রস্তুত করুন। তালিকাটা দিন, আমরা দুদককে বলব তদন্ত করতে।"
বিএনপির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, "বিএনপি নিজেরাই হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে; বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডনে বসে- দণ্ডিত এই আসামি আরাম-আয়েশে দিন যাপন করছে। এই হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের হিসাব মির্জা ফখরুল সাহেবকে দিতে হবে।"
ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি নিয়ে বিএনপি সোচ্চার হতে চায় বলে সংবাদমাধ্যমে খবর এসেছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বিএনপি দুর্নীতিতে পাঁচবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন; এটা বাংলাদেশের সবাই জানে। তারা বলছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে। যাদের মূল নেতারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত, তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি দেবে- এটা এই বছরের সেরা জোকস।"
বাজেট বাস্তবায়নে ‘চ্যালেঞ্জ আছে’
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। আর খেলাপির স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকা।
খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা আছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে কাদের বলেন, "অর্থনীতিবিদও এখন পোলারাইজড হয়ে গেছে। তারা তাদের মনের যে ক্ষোভ, অসন্তোষ, ক্ষমতায় না থাকার যে বেদনা, ক্ষমতায় থাকলে যে সুযোগ সুবিধাপ্রাপ্তির ব্যবস্থা থাকে- সেটা ভেস্তে গেছে। ভেস্তে গেছে তাদেরই ভুলের কারণে।
"আমাদের উপদেষ্টাদের মধ্যে অর্থনীতিবিদ অনেকেই আছে, তারা সবাই একবাক্যে পরিণত ও সাহসী বাজেট বলেছেন। একটা চ্যালেঞ্জ আছে সেটা হলো বাস্তবায়ন।”
“দ্রব্যমূল্য, ডলার সংকট, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করা, পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এখন দেশের সংকট মোকাবেলা করার স্কিম রয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষকে সাহায্য করার জন্য- এইসব পদক্ষেপ সরকার নিচ্ছে।"
আরো পড়ুন : ‘বেনজীর-আজিজ আওয়ামী লীগের কেউ না’
পাচার রোধে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেন। সেখানে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় বিনা প্রশ্নে বৈধ করার সুযোগ রাখা হয়।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “পাচার যারা করে, এই পাচার থেকেও দেশকে রক্ষা করার জন্য, পাচারের অর্থ সবার অজান্তে চলে যায়, এই অর্থ যখন… এই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তখন সেই অর্থও মূল ধারায় ব্যাংকে ফিরে আসবে বলে আমরা মনে করছি।”
তিনি বলেন, "১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত আয় আমরা অর্থনীতির মূল ধারায় আনার ব্যবস্থা করছি। এর ফলে ব্যাংকিং সিস্টেমে অর্থপ্রবাহ বাড়বে। অনেকের হাতে গোপনে থাকা টাকা উদ্ধার করতে বাজেটে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ আছে।"
কাদের বলেন, "এই সুযোগ দানের মাধ্যমে অর্থ উপার্জনের ক্ষেত্রে অন্যায়, অবৈধ কাজের শাস্তি মওকুফের সুযোগ নেই। সেটা ফৌজদারি অপরাধ। সেটা প্রচলিত আইনেই হবে। অন্যদের মাধ্যমে ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করাসহ বিভিন্ন কারণে অনেকের ট্যাক্স রিটার্নে সকল সম্পদের বিবরণ থাকে না। এসব ভুল সংশোধন করার সুযোগ থাকতে হবে।
“অপ্রদর্শিত অর্থ, সম্পদ মূল ধারায় এনে ভবিষ্যতে তার উপর আয় থেকে সরকার আদায় করে রাজস্ব আহরণ অধিক পরিমাণে বাড়াতে চায়।"
বাজেটে সরকার মুন্সিয়ানা দেখাতে পারেনি, একইসঙ্গে কালো টাকা সাদার করার সুযোগ দেওয়া আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে সিপিডি।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কাদের বলেন, “অপ্রদর্শিত অর্থ ব্যাংকে আনার ব্যবস্থা করছি। প্রধানমন্ত্রী যেটা বলছেন ‘মাছ ধরতে গেলে আধার দিতে হবে’, সেই কথাই বাস্তব।
“এখন সিপিডি কী বলল, টিআইবি কী বলল, সুজন কী বলল- এসব নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। ওরা সবাই বিএনপির সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলে। কথার সঙ্গে যাদের বাস্তবের কর্মকাণ্ডে মিল নেই।”
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, সুজিত রায় নন্দী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এস/ আই.কে.জে