ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের কয়েকজন উপদেষ্টা আরব সাগরে একটি বন্দর নির্মাণের জন্য আমেরিকার কাছে প্রস্তাব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এক প্রতিবেদনে ব্রিটিশ দৈনিক ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের হাতে পাওয়া ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী, মার্কিন বিনিয়োগকারীরা এই বন্দর নির্মাণ ও পরিচালনা করবেন। পাকিস্তানের গোয়াদর জেলার পাশনি শহরে বন্দরটি নির্মাণ করা হবে। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা মৎস্যনির্ভর এই শহরকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ রপ্তানির টার্মিনালে রূপান্তর করবে, যার মাধ্যমে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়া হবে।
আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী এলাকা পাশনি বেলুচিস্তান প্রদেশে অবস্থিত। এই অঞ্চল ইরান সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ মাইল এবং চীন নিয়ন্ত্রিত গোয়াদর বন্দর থেকে মাত্র ৭০ মাইল দূরে অবস্থিত।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, গত মাসে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগেই আসিম মুনিরের উপদেষ্টারা কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তার কাছে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগে মুনিরকেও এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জানানো হয়েছিল।
তবে প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় বন্দরটিকে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়নি; বরং বন্দরের সঙ্গে পাকিস্তানের পশ্চিমাঞ্চলীয় খনিজসমৃদ্ধ প্রদেশগুলোর রেল সংযোগ গড়ে তুলতে কিছু পরিকল্পনা রাখা হয়েছে।
এই প্রস্তাব পাকিস্তানের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন প্রচেষ্টার অংশ। এর মধ্যে রয়েছে ট্রাম্প-সমর্থিত ক্রিপ্টো উদ্যোগে সহযোগিতা, আফগানিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট খোরসান দমনে সমন্বয়, গাজা শান্তি পরিকল্পনায় সমর্থন এবং খনিজ সম্পদে মার্কিন প্রবেশাধিকার ইস্যু।
গত মে মাসে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছিল। একসময় এই সংঘর্ষ পারমাণবিক যুদ্ধের দিকে মোড় নিচ্ছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের দাবি, তিনিই দুই দেশের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন।
তারপর থেকে ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনির ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। পাকিস্তানও এই যুদ্ধ থামাতে প্রকাশ্যে ট্রাম্পকে কৃতিত্ব দিয়েছে এবং তাকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে।
এর বিপরীতে ট্রাম্প মুনিরকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। সাম্প্রতিক বৈঠকে (গত ২৬শে সেপ্টেম্বর) সেনাপ্রধান আসিম মুনির ও প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ট্রাম্পকে খনিজ নমুনাসহ বিশেষ উপহারও দেন।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাশনি বন্দরটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ খনিজসমৃদ্ধ অঞ্চলগুলোর সঙ্গে নতুন রেলপথে যুক্ত হবে। বিশেষত কপার ও অ্যান্টিমনি পরিবহনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অ্যান্টিমনি ব্যাটারি, অগ্নিনিরোধক ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অপরিহার্য।
পুরো প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার, যার অর্থায়ন হবে পাকিস্তানি ও মার্কিন উন্নয়ন তহবিলের যৌথ অংশীদারত্বে।
পরিকল্পনার নথিতে বলা হয়েছে, ‘পাশনির ভৌগোলিক অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বাণিজ্য ও নিরাপত্তার নতুন সুযোগ এনে দিতে পারে, যা গোয়াদরের চীনা প্রভাবকে ভারসাম্যপূর্ণ করবে।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন