মঙ্গলবার, ১৫ই জুলাই ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩১শে আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** কমিশন যদি ব্যর্থ হয়, সেটা সবার ব্যর্থতা হবে: আলী রীয়াজ *** হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের দাবির বিষয়ে ব্যাখ্যা দিল পুলিশ সদর দপ্তর *** দেশের সোনালি মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া: গবেষণা *** প্রাথমিকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগে দ্রুত পদক্ষেপের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার *** ওয়ারীতে জনপ্রতিরোধে বাঁচল কিশোরের প্রাণ *** মিটফোর্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার মাহিনের সঙ্গে এনসিপি নেতাদের ছবি, বিএনপির কারো নয়: মির্জা আব্বাস *** লক্ষ্য একটাই, ২৬ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন: মির্জা ফখরুল *** ফিল্ম ফেডারেশনের সভাপতি মসিহউদ্দিন শাকের *** এ সরকারের শাসনামলেই জুলাই গণহত্যার বিচার হবে: আসিফ নজরুল *** আগামী বছরের হজের রোডম্যাপ প্রকাশ সৌদি আরবের

বেড়েছে শিক্ষার হার, এবার জরুরি গুণগত মান বাড়ানো

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০৪:১১ অপরাহ্ন, ৩০শে এপ্রিল ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

দেশে শিক্ষার মান কেমন, এ প্রশ্ন দীর্ঘ দিনের। কোনো শিক্ষার্থী যখন উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা যাচাইয়ে নামেন, তখন তিনি বিগত বারো-তেরো বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজ থেকে কী শিখেছেন, এ বিষয়ে যাচাইয়ের একটা সুযোগ হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪-’২৫ শিক্ষাবর্ষে তিনটি ইউনিটে ভর্তির জন্য মোট তিন লাখ দুই হাজার ৬০৬ শিক্ষার্থী আবেদন করেন। এর মধ্যে ডাবল জিপিএ-৫ (এসএসসি ও এইচএসসি) পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক লাখ ৪১ হাজার ৯৪ জন।

তাদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী এক লাখ ১৩ হাজার ৭২২ জন, মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া ১৯ হাজার ৮৩৯ জন এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী আট হাজার ৫৩৩ জন।

গত বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাশের হার ছিল ৭৮ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন প্রায় এক লাখ ছেচল্লিশ হাজার শিক্ষার্থী। তাদের মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এসব শিক্ষার্থী যখন কোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নেন, তখন তাদের দূর্বলতা ফুটে ওঠে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের এমন দুর্বলতার চিত্র ফুটে উঠেছে। ২০২৪-’২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় বিজ্ঞান ইউনিটে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ৯৪ শতাংশ ফেল করেছেন। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটেও ৯০ শতাংশের বেশি ভর্তিচ্ছু ফেল করেন। এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েও প্রায় সোয়া লাখ শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করার বিষয়টি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও অভিভাবকসহ সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে।

গবেষকরা মনে করেন, এর জন্য বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতি দায়ী। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষার হার বাড়ানোর একটা প্রবণতা লক্ষ করা যায়। তারা মনে করে, যত বেশি এ প্লাস দেখানো যাবে, সেটা তাদের অর্জন ও সাফল্য হিসেবে আমজনতা ধরে নেবে। এ জন্য যারা খাতা দেখেন, তাদেরও ‘ওভার মার্কিং’ করতে বলে দেওয়া হয়। ফলে যে শিক্ষার্থীর পাওয়ার কথা বি প্লাস, তিনি পাচ্ছেন এ প্লাস। 

সরকার কম সময়ে ফল প্রকাশ করে তাদের সাফল্য দেখাতে চায়। এজন্য শিক্ষককে অনেক বেশি খাতা দেখতে দেওয়া হয়। ফলে ওই শিক্ষক যে মার্কিংটা করেন, সেটাও অনেক সময় ঠিকঠাক হয় না।

শিক্ষার্থীদের যারা শেখাবেন, সেই শিক্ষকদের মধ্যে অনেকের নেই আলাদা প্রশিক্ষণ। স্কুল-কলেজের শ্রেণিকক্ষে যথাযথভাবে পড়ানো হয় না। যা পড়ানো হয়, তা প্রাইভেট-কোচিংয়ে। কর্তৃপক্ষের কোনো তদারিক ও জবাবদিহি নেই। মুখস্থ বিদ্যা আর সীমিত সাজেশন নিয়ে তথাকথিত ভালো ফল করার ওপর নির্ভর করেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকাসহ নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষায় যে স্ট্যান্ডার্ডে প্রশ্ন করা হয়, ডাবল জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকে এর সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন না। যার কারণে অধিকাংশই ফেল করেন। দেখা যায়, একজন শিক্ষার্থী এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৮০ প্লাস নম্বর পেয়েছেন, কিন্তু ভর্তি পরীক্ষায় পাস মার্কসই উঠাতে পারছেন না।

শিক্ষার মান তুলে ধরে—এমন তিনটি বৈশ্বিক সূচকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অবস্থান দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বেশ খারাপ। এর মধ্যে দুটি সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। 

ফ্রান্সভিত্তিক ‘বিজনেস স্কুল ইনসিয়েড’ এবং ওয়াশিংটনভিত্তিক ‘পোর্টুল্যান্স ইনস্টিটিউটের’ ২০২১ সালের ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট কম্পিটিটিভনেস ইনডেক্সে’ ১৩৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩ নম্বরে। প্রতিভা সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচে। 

জাতিসংঘের সংস্থা ‘ওয়ার্ল্ড ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি অর্গানাইজেশনের’ প্রকাশিত ২০২১ সালের বৈশ্বিক উদ্ভাবন সূচকে ১৩২টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৬ নম্বরে। উদ্ভাবন সূচকেও দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে অবস্থান বাংলাদেশের।

বর্তমান শিক্ষা পদ্ধতিতে গলদ আছে। এখানে শিক্ষা হচ্ছে কত শর্টকাট পদ্ধতিতে ভালো মার্কস পাওয়া যায়। গুণগত মান নিশ্চিত করা হয় না। যার ফলে ভালো মার্কস পাওয়া শিক্ষার্থীদের একটা অংশ উচ্চশিক্ষায় গিয়ে ঝরে পড়ে। ভর্তি পরীক্ষাগুলো প্রমাণ করে, আমাদের শিক্ষার হার বাড়লেও গুণগত মান কমেছে।

আমরা অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশকে আরো উন্নত অবস্থানে নিয়ে যেতে চাচ্ছি, জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করার আওয়াজ তুলি, কিন্তু সেই জনসম্পদ তৈরির প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি ক্রমাগত অবহেলা করে আসছি। এভাবে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন ও অগ্রগতি সম্ভব কি? যেসব দেশ অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগতভাবে প্রভূত উন্নতি করেছে, তারা শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।

এইচ.এস/


শিক্ষার মান

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন