শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৮ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে পুলিশের মনোবল ফেরানো জরুরি

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ১২:৫৩ অপরাহ্ন, ৩০শে অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। কোথাও কোথাও অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিতরাও অসহায় হয়ে পড়ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সবসময় এক ধরনের ভয়, শঙ্কা ও উদ্বেগ কাজ করছে। রাস্তা-ঘাটে ভয়ডরহীনভাবে চলতে পারছে না। তবে, আশার কথা, এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী বেশ কয়েকটি জায়গায় অপারেশন শুরু করেছে। বেশকিছু দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে।

বেশকিছু দিন ধরে রাজধানীর মোহাম্মদপুর অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছিল। দিনদুপুরে ছিনতাই, অপহরণ, ডাকাতির অহরহ ঘটনা ঘটেছে। দোকানে দোকানে ডাকাতি এবং এক তরুণীকে চাপাতি দিয়ে ধাওয়া করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে, জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে। গত এগার অক্টোবর মোহাম্মদপুরে সেনাবাহিনী ও র‌্যাবের পোশাক পরে যৌথবাহিনীর পরিচয়ে ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি করে ৭৫ লক্ষ টাকা ও ৭০ ভরি স্বর্ণ লুট করে নিয়ে যায় ডাকাতরা। সিসি ক্যামেরায় ধারণকৃত ঘটনাটি তখন ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। যদিও খুব দ্রুতই যৌথবাহিনী ডাকাতদের আটক করে।

মোহম্মদপুর এলাকায় বারবার এমন ঘটনার পর স্থানীয়রা বিক্ষোভ করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেয়। তারপর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে। এছাড়া উত্তরা,বাড্ডাসহ বেশকিছু জায়গায় যৌথবাহিনী অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করেছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলায় হামলা, ডাকাতি এবং গণধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মা-মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফরিদপুরে এক ব্যক্তিকে ছিনতাইয়ের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। নীলফামারীর সৈয়দপুরে এক ব্যক্তি ক্ষুদ্রঋণের পঁচিশ হাজার টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে বের হতেই ছিনতাইয়ের শিকার হন এবং দুঃখ সইতে না পেরে তাৎক্ষণিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় চালককে হত্যা করে সিএনজি অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এরকম ঘটনা দেশের অনেক জায়গায়ই অহরহ ঘটছে।

দণ্ডবিধির ৩৮৩ ধারায় বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে ভয় দেখিয়ে তার নিকট কোনো সম্পত্তি বা মূল্যবান জামানত কিংবা জামানত হিসেবে ব্যবহারযোগ্য সিলমোহরভুক্ত কোনো বস্তু প্রদানে বাধ্য করে, তাহলে সে ব্যক্তি বলপূর্বক আদায়ের দোষে দোষী অর্থাৎ ছিনতাইকারী হিসেবে সাব্যস্ত হবে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন ধরনের ছিনতাই চক্র আছে। আবার এলাকা ভিত্তিক ছিনতাই কম-বেশি হয়। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর বাড্ডা, মিরপুর, শাহবাগ, মগবাজার, রমনা, মালিবাগ রেলগেট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এলাকা, গুলিস্তান, ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিচার হয় না। ধরা পড়লেও কিছুদিন পর জামিনে বের হয়ে আসার পর আবারও একই কাজে জড়িয়ে পড়ে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু চলমান ঘটনা প্রবাহের পর পুলিশের মনোবল একেবারে ভেঙে পড়েছে। অনেক পুলিশ হতাহত হয়েছে। থানা ক্ষতিগ্রস্ত, অস্ত্র লুট ও যানবাহন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদস্যরা একটা ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনতে হবে। কেননা পুলিশের কার্যকর দায়িত্ব পালন ছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব নয়। সেনাবাহিনীর নেতৃত্বাধীন যৌথবাহিনীর অপারেশন হয়তো জনগণকে সাময়িক স্বস্তি দেবে, কিন্তু দিন শেষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশকেই কাজ করতে হবে।

আই.কে.জে/

পুলিশ

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন