ছবি: সংগৃহীত
বাজার বা হাট বলতে অনেকেই প্রথমে যা ভেবে থাকেন তা হলো শাকসবজি, মাছ, জামা-কাপড়, জুতা, গয়নাসহ বিভিন্ন কিছু যেখানে কিনতে পাওয়া যায়।
কিন্তু ইউরোপের বুলগেরিয়ার স্টারা জাগোরা শহরে প্রতি বছর বসে একটি বিয়ের বাজার।
এখানে পণ্য হিসেবে থাকে শুধু কুমারী-তরুণী মেয়েরা, যাদেরকে তাদের সম্ভাব্য বরদের সামনে প্রদর্শিত করা হয়।
পুরুষরা দরদাম করে বিয়ের পাত্রী কেনেন এই হাটে। স্থানীয়ভাবে এই বাজারকে ‘জিপসি বিয়ে বাজার’ বলে। মেয়েরা এখানে লম্বা ভেলভেট স্কার্ট ও উজ্জ্বল রঙের হেডস্কার্ফ পরিধান করে এবং সোনালি গয়নায় তাদের গলা, আঙুল, কান এবং দাঁত ঝকমক করে।
কালাইজ্জি রোমাদের প্রথা
বুলগেরিয়ায় রয়েছে প্রায় ১৮ হাজার কালাইজ্জি রোমা গোত্রের অধিবাসী। এই গোত্রের লোকদের ইউরোপ জুড়ে একটু বাঁকা চোখে দেখা হয়। ইউরোপে জীবন সঙ্গী খোঁজার জন্য ডেটিং একটি প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি হলেও এই গোত্রে ডেটিং একেবারে অবাঞ্ছিত। ফলে কালাইজ্জি জনসাধারণের জন্য এই বাজারই একমাত্র সুযোগ, যেখানে যুবক-যুবতীরা একে অপরের সাথে দেখা করতে পারে এবং সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী খুঁজে পেতে পারে।
যেভাবে বসে বাজার
৩০০ থেকে ৫০০ ডলারে পাত্রী কেনাবেচা হয়ে থাকে এই বাজারে। বছরে চারবার বসে এই বাজার। সারা বুলগেরিয়ায় ছড়িয়ে থাকা ক্যালাইজ্জি সম্প্রদায় এসে মিলিত হন এই বউ বাজারে। সেখানে স্বর্ণালংকার পরে সেজেগুজে গাউন পরে কুমারীরা একে একে লাল রঙা কার্পেটের ওপর দিয়ে হেঁটে বেড়ান।
যুবক-যুবতীরা এই বাজারে একে অন্যকে ধরে নাচে, গান গায় ও নানা ফুর্তিতে মেতে ওঠে। এমনকি হালকা পানীয়ও পান করে। আবার কেউ কেউ খোশগল্পে মশগুল হয়ে সময় কাটায়। নতুন সঙ্গী খোঁজার জন্য তাদের এই ‘বউ বাজারে’ তুলে মা-বাবারা। তারপর তারা নিজেদের জীবনসঙ্গী নির্বাচন করে।
পাত্রপাত্রী পছন্দের পর শুরু হয় আসল পর্ব। এবার আসরে অবতীর্ণ হন অভিভাবকরা। দু’পক্ষের অভিভাবকদের মধ্যে শুরু হয় দর কষাকষি। চাহিদামতো পণ পাওয়ার আশ্বাস থাকলে তবেই মেয়ের বিয়ে দিতে সম্মত হন অভিভাবকরা।
সাধারণত কুমারীদের রূপ ও গুণের ওপর নির্ভর করেই নির্ধারিত হয় কন্যার ‘মূল্য’ বা কন্যাপণ। কে কত কন্যাপণ দিল বা কত কন্যাপণ পেল, সেটা এই সমাজে সামাজিক পরিচয়ের মাপকাঠিও বটে। দাম দিয়ে কেনার পর ছেলেটি মেয়েটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে এবং মেয়েটি তার স্ত্রীর মর্যাদা পায়।
রয়েছে অনেক নিয়ম
মেয়েকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার আগে বেশ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রথমত মেয়েটিকে কুমারী হতে হবে। তবেই তার দর বেশি হবে। শুধু কালাইজ্জি সম্প্রদায়ের লোকেরাই তাদের মেয়েদের এই বাজারে নিয়ে যেতে পারবে। পাশাপাশি পরিবারটির দরিদ্র হওয়া আবশ্যক। আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী বা ধনী পরিবারের মেয়েদের বিক্রি করার নিয়ম নেই। এ ছাড়া বাজারে কেনা মেয়েটিকে পুত্রবধূর মর্যাদা দিতে হবে।
কালাইজ্জি সম্প্রদায়ের মধ্যে এশীয় ও ইউরোপীয় দুই জনজাতির বৈশিষ্ট্য বর্তমান। নৃতত্ত্ববিদদের ধারণা, সুদূর অতীতে আজকের রাজস্থান, হরিয়ানা ও পাঞ্জাব এই অঞ্চলগুলো থেকে এই জিপসিদের উৎপত্তি। তারপর তারা ছড়িয়ে পড়েন সারা বিশ্বে।
এই সম্প্রদায় সতর্কভাবে ইউরোপের খোলা হাওয়া থেকে নিজেদের সনাতন ও রক্ষণশীল রীতিনীতিকে রক্ষা করে এসেছে। তারা যে এখনো কঠোরভাবে যাযাবর জীবনযাপন করে, তা নয়। অনেক ক্ষেত্রেই লোপ পেয়েছে যাযাবরি ঘরানার বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ‘বিয়ের বাজার’ এখনো পালিত রীতি।
ওআ/ আই.কে.জে