শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাগরে ডুবে মরছে, তবু কেন থামানো যাচ্ছে না যুবকদের ইতালি যাত্রা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৯:৩৯ অপরাহ্ন, ২৩শে ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

কোটি কোটি টাকা উপার্জন, বিত্তবৈভব আর উন্নত জীবনের মোহে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরছেন বাংলাদেশি তরুণরা। অবৈধ পথে যাত্রা বন্ধে নানা উদ্যোগ ও প্রচার থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না।

দেশে বেকারত্ব, বৈধ পথে ইউরোপে যাওয়ার সুযোগ কম থাকায়, সাগর, তুষার ও বনভূমি পাড়ি দেওয়ার ঝুঁকি নিচ্ছেন তারা। গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি ইতালির পথে ভূমধ্যসাগরে প্রাণ গেছে আট বাংলাদেশির। 

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত শুধু ইতালিতে অবৈধভাবে পাড়ি দিয়েছেন ২২ হাজার ৭৭৮ বাংলাদেশি, যা দেশটিতে মোট অবৈধ অভিবাসীর ১৪ শতাংশ।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) মিসিং মাইগ্রেন্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আগের বছরগুলোর তুলনায় ভূমধ্যসাগরে ডুবে মৃত্যু এবং নিখোঁজের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২১ সালে ২ হাজার ৪৮ জন, পরের বছর ২ হাজার ১১ এবং ২০২৩ সালে ৩ হাজার ৪১ জন নিখোঁজ অথবা ডুবে মারা গেছেন ভূমধ্যসাগরে। তাদের মধ্যে কয়েকশ বাংলাদেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি অভিবাসনপ্রত্যাশী একটি দল নৌকায় করে লিবিয়ার জুয়ারা উপকূল থেকে ইউরোপের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। নৌকাটি তিউনিসিয়ার উপকূলে ডুবে যায়। এতে চালকসহ ৫৩ জন ছিলেন। আট বাংলাদেশিসহ ৯ জন ডুবে মারা গেছেন। উদ্ধার করা ৪৪ জনের ২৭ জনই বাংলাদেশি। প্রাণ হারানো আটজনের পাঁচজন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার এবং বাকি তিনজন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার। 

আফগানিস্তান, সিরিয়া, লিবিয়া ও ইরাকের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অনেক নাগরিক প্রাণ বাঁচাতে অবৈধ পথে ইউরোপ যান। বাংলাদেশিরা কেন যাচ্ছেন– এ প্রশ্নের জবাবে পাওয়া যায়, যত বাংলাদেশি লিবিয়া, ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি যান, তাদের বড় অংশ বৃহত্তর ফরিদপুরের।

এই পথ ধরে যাওয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, প্রায় দুই দশক ধরে এভাবে দেশান্তর হচ্ছেন অনেকে। আগে সরাসরি লিবিয়া যাওয়া যেত। কিন্তু ২০১১ সালে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ এবং ভূমধ্যসাগরে ডুবে মৃত্যুর কারণে এখন আর যাওয়া যায় না। 

আদম ব্যবসায়ীদের সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশের গ্রামে গ্রামে, বিশেষত মাদারীপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ জুড়ে রয়েছে ‘রিক্রুটার’। এরা প্রথম ধাপের দালাল, যারা মূল দালালের হয়ে ইউরোপ যেতে ইচ্ছুক যুবকদের সংগ্রহ করে। মূল দালালরা গ্রাম থেকে তরুণ ও যুবকদের লিবিয়া পর্যন্ত পাঠায়। সেখানে থাকে আরেক দালাল চক্র। তারা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের কয়েক মাস পর্যন্ত লিবিয়ায় নিজেদের জিম্মায় রাখে।

তারপর সময়-সুযোগ বুঝে নৌকায় করে ইউরোপে পাঠায়। এই প্রক্রিয়াকে ‘গেম’ বলা হয়। ইতালির কোস্টগার্ড নৌকা ফিরিয়ে দিলে, কয়েকদিন পর আবার পাঠায়। লিবিয়া, তিউনিসিয়া এবং ইতালিতে যাতে নৌকা না আটকায় সেজন্যও দালাল রয়েছে। 

স্থানীয় দালাল সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ইতালি যেতে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত লাগে। তবে শুরুতে অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বলা হয় ৭-৮ লাখ টাকা লাগবে। এর পর লিবিয়ায় নিয়ে আটকে আরো ৭-৮ লাখ টাকা নেওয়া হয়। টাকা আদায়ে মারধর, খুন পর্যন্ত করা হয়।

লিবিয়ায় আবার দালালদের অনেক দল-উপদল রয়েছে। এক দালাল চক্র আরেক চক্রের আনা অভিবাসনপ্রত্যাশীকে জিম্মি করে। মারধর করে মুক্তিপণ আদায় করে। ২০২০ সালের মে মাসে ২৬ বাংলাদেশি গুলিতে মারা গিয়েছিল দুই দালাল চক্রের দ্বন্দ্বে। 

আরো পড়ুন: শাহজালালে চার যাত্রীর কাছে মিললো পৌনে দুই কোটি টাকার সোনা

যারা দেশে টাকা পাঠিয়ে দালান তোলেন, তাদের দেখে বাকিরা উৎসাহিত হয়। তাই উৎসমুখে তরুণদের থামাতে হবে। এ জন্য তাদের জন্য নিরাপদ অভিবাসন বাড়াতে দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে। দক্ষতা এবং দেশে কর্মসংস্থান না থাকলে তরুণরা অবৈধ পথে পা বাড়াবেই। 

এইচআ/ আই.কে.জে/  


মৃত্যু ইউরোপ যাত্রা বাংলাদেশি তরুণ

খবরটি শেয়ার করুন