ছবি : সংগৃহীত
আয়ান আহমেদ ও আহনাফ তাহমিদ আয়হাম-- ৪৪ দিনের ব্যবধানে ভুল চিকিৎসায় এ দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর কারণও অভিন্ন। খতনা করাতে গিয়ে অ্যানেসথেশিয়ার বাড়তি মাত্রা। রাজধানীর ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকের অবহেলা ও গাফিলতিতে গেল ৭ই জানুয়ারি যখন শিশু আয়ানের জীবন আলো নিভে যায়, তখন প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছিল অনেকেই।
তুমুল সমালোচনার মুখে সে সময় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত মঙ্গলবার (২০শে ফেব্রুয়ারি) মধ্যরাতে একই ঘটনার জন্ম দেন মালিবাগের জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারের চিকিৎসকরা। এবার অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় কাঁদে আহনাফ তাহমিদের পরিবার। পরে রাতেই দুই চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আর বুধবার (২১শে ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ডায়াগনস্টিক সেন্টারটি সিলগালা করে আপাত দায় সারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। স্বাস্থ্য খাতের এমন অব্যবস্থাপনা নিরসনে আগামী রোববার (২৫শে ফেব্রুয়ারি) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জে এস ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড মেডিকেল চেকআপ সেন্টারে খতনা কিংবা অ্যানেসথেশিয়া প্রয়োগেরই অনুমোদন ছিল না। অভিযুক্ত দুই চিকিৎসকের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) নিবন্ধনও নেই। অন্যদিকে, ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটির নিবন্ধনই ছিল না।
জনস্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ভুল চিকিৎসায় কারও মৃত্যুর পর দেশজুড়ে সমালোচনা শুরু হলেই কেবল নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দলবল নিয়ে লাইসেন্সহীন হাসপাতালের খোঁজে অভিযানে নামে। কেঁচো খুঁড়তে বের হয় সাপ! তবে কিছুদিন পর থেমে যায় ‘লোক দেখানো’ এসব তৎপরতা। হাসপাতালগুলো আবারো নামে খামখেয়ালিপনায়।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের নামে মামলাও হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তবে এ ধরনের অভিযোগে একজন চিকিৎসকের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা কিংবা বিচার হওয়ার নজির নেই।
গত বছরের ১৭ই জুন রাজধানীর গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যু হয়। পরের সপ্তাহেই মা মাহবুবা আক্তার আঁখিরও হয় একই পরিণতি। সে সময় দু’জন চিকিৎসকসহ সেন্ট্রাল হাসপাতালে সব ধরনের অস্ত্রোপচার বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে দুই মাস পরই ফের অস্ত্রোপচারের অনুমতি পেয়ে যায় সেন্ট্রাল হাসপাতাল। আর গত ১৮ই জুলাই ওই দুই চিকিৎসক জামিনে ছাড়া পেয়ে ফের একই হাসপাতালেই রোগী দেখছেন।
অবৈধ হাসপাতাল ১২৮৫, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নীরব
সারাদেশের বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার দেখভালের দায়িত্ব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিলে চিকিৎসাকেন্দ্র পরিচালনার সুযোগ মেলে। তবে অবৈধ হাসপাতালকে জাগিয়ে রেখে যেন ঘুমাচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সাম্প্রতিক সময়ে ১ হাজার ২৮৫ অবৈধ হাসপাতালের তালিকা করা হলেও এগুলো বন্ধে নিষ্ক্রিয় অধিদপ্তর। এ ছাড়া সারাদেশে লাইসেন্সধারী বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ব্ল্যাড ব্যাংক আছে ১৫ হাজার ২৩৩টি। এগুলোতেও ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায় মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে প্রতিনিয়ত। তবে কর্তৃপক্ষকে কোনো সময় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পথে হাঁটতে দেখা যায় না।
আরো পড়ুন: জে এস ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
এইচআ/ আই. কে. জে/