ছবি: সংগৃহীত
নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুতে 'সুশীল ঘরানার সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের প্রাধান্য' দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনার শুরুতে সুশীলদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আনন্দে প্রভাবশালী এক উপদেষ্টার উচ্ছ্বাস প্রকাশের বিষয়ে তাকে বিদেশিরা জানানোর বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন। একইসঙ্গে তার অভিযোগ, 'ইসলামিস্টদের প্রতি ক্রমেই বৈরী হয়ে উঠেছে বিএনপি'।
সাংবাদিকতায় একুশে পদকপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান বলেন, 'রাষ্ট্র পরিচালনার একেবারে শুরুতেই সুশীলদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আনন্দে একজন প্রভাবশালী উপদেষ্টা বিদেশিদের সঙ্গে আলাপচারিতায় একটি বিশেষ সুশীল পত্রিকার আধা ডজন প্রতিনিধির সরকারে জায়গা করে নেওয়ার বিষয় উল্লেখ করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিলেন। এ কথা আমাকে সেই বিদেশিরাই জানিয়েছেন।'
তিনি বলেন, 'এখানে উল্লেখ্য, ২০০৭ সালে একই সুশীল পত্রিকার ডাকসাইটে সম্পাদক তৎকালীন তথ্য উপদেষ্টা মইনুল হোসেনকে প্রকাশ্যে ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ওই সরকারটি তারাই গঠন করেছিলেন। এভাবেই এই গোষ্ঠী সব সরকারের আমলেই প্রভাব বিস্তার করে থাকে। সেই সম্পাদক সম্প্রতি অবশ্য ড. ইউনূসের কঠোর সমালোচনা করতে আরম্ভ করেছেন।'
দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত এক লেখায় সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এসব কথা বলেন। তার লেখা বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদন 'অসমাপ্ত জুলাই বিপ্লব পূর্ণ করুন' শিরোনামে পত্রিকাটির ছাপা সংস্করণে আজ শুক্রবার (২৩শে মে) প্রকাশিত হয়েছে। আলোচ্য সেই উপদেষ্টা, পত্রিকা ও সম্পাদকের নাম লেখায় উল্লেখ করেননি তিনি।
তবে ধারণা করা হচ্ছে, মাহমুদুর রহমানের লেখায় উল্লেখিত ওই সম্পাদক ইংরেজি পত্রিকা ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম। গত ১৬ই মে ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক কলামে মাহফুজ আনাম প্রথমবারের মতো অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেন। এক এগারোর সেনা সমর্থিত জরুরি অবস্থার সরকার তারাই গঠন করেছেন, এ কথা মাহফুজ আনাম তখন বলেছিলেন।
মন্তব্য প্রতিবেদনে মাহমুদুর রহমান বলেন, 'এক দশক ধরে বিএনপিতে বাম ও ভারতপন্থীদের উত্থানের ফলে দলটি ইসলামিস্টদের প্রতি ক্রমেই বৈরী হয়ে উঠেছে। কথিত স্বচ্ছ চরিত্রের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দলে প্রবেশকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা সাম্প্রতিক সময়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটি দলের রাজনৈতিক আদর্শগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।'
বিদ্যমান বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ''ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে বাংলাদেশে ফিরেই অধ্যাপক ইউনূসকে উদ্দেশ করে আমি একাধিকবার বলেছিলাম, ‘Either Rule or Quit.’ অর্থাৎ, ‘হয় শাসন করুন, নইলে দায়িত্ব ছাড়ুন।’ রাজনীতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হওয়ায় তিনি সম্ভবত আমার বক্তব্যের অর্থ অনুধাবন করেননি। তিনি, তার উপদেষ্টামণ্ডলী ও ছাত্রনেতারা এক ধরনের আত্মম্ভরিতাপূর্ণ ‘কমফোর্ট জোন’-এ ঢুকে পড়েছিলেন।"
মাহমুদুর রহমান বলেন, 'তারা বাইরের শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ আমলে নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। এ সরকারের ব্যর্থতা এবং রাজনীতিবিদদের হঠকারিতা ও ক্ষমতার উদগ্র আকাঙ্ক্ষা ভারতকে আবারও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ করে দিল।' 'অসমাপ্ত জুলাই বিপ্লবকে পূর্ণতা দিতে আবারও লড়াইয়ের প্রস্তুতি নেওয়ার' আহ্বান জানিয়ে বিশেষ মন্তব্য প্রতিবেদনটি শেষ করেন তিনি।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন