কেটে ফেলার আগে ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাতীয় উদ্যানের সেই গাছটি। ছবি: বিবিসি
২০২৩ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর। ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাতীয় উদ্যানের রেঞ্জার গ্যারির কাছে অন্য দিনের মতোই ছিল সেদিনের সকালটা। একটি ফোন সব গোলমাল করে দিল। ফোনটি এসেছিল এক কৃষকের কাছ থেকে। তিনি জানান, বিখ্যাত সাইকামোর গ্যাপের গাছটি পড়ে গেছে!
গ্যারি প্রথমে ভেবেছিলেন, হয়তো কেউ ঠাট্টা করছে। কিন্তু কৃষকের কণ্ঠস্বরের দৃঢ়তা শুনে তিনি বুঝতে পারেন, বিষয়টি সত্যি হতে পারে। দ্রুততম সময়ে ভ্যানে করে ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দেন গ্যারি।
গন্তব্যে গিয়েই গ্যারি দেখলেন অবিশ্বাস্য সেই দৃশ্য। আলোকচিত্রী আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বদৌলতে পৃথিবীজুড়ে বিখ্যাত হয়ে ওঠা সেই গাছ মাটিতে পড়ে আছে। গ্যারি বলেন, ‘সত্যিই একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছিল। যেন প্রকৃতি হঠাৎ নিশ্বাস বন্ধ করে দিয়েছে।’ খবর বিবিসির।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে নর্থাম্বারল্যান্ড ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষকে জানান গ্যারি। এ খবরে ন্যাশনাল পার্কের অনেক কর্মী কেঁদে ফেলেছিলেন বলেও জানা যায়।
খবরটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোতে দেখা যায়, গাছটি পাশেই থাকা হ্যাড্রিয়ানস ওয়ালের ওপর পড়ে আছে। ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে জানায়, গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে। কিন্তু কে কেটেছে, তা অজানা। পুলিশ জানায়, এটি ইচ্ছাকৃত নাশকতা।
এরপর স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ঘটনাস্থল পরিণত হয় এক সংবাদ-সাগরে। ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা প্রমাণ হিসেবে ডিএনএ সংগ্রহ করেন গাছের গুঁড়ি থেকে।
সেই ঘটনার দেড় বছরের বেশি সময় পর অবশেষে বিচার পেল বিখ্যাত সাইকামোর গ্যাপ গাছটি। আজ শুক্রবার (৯ মে) বিবিসি জানিয়েছে, গাছটি কেটে ফেলার অভিযোগে ইংল্যান্ডের নিউক্যাসল ক্রাউন কোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ডেনিয়েল গ্রাহাম ও অ্যাডাম ক্যারাদার্স নামের দুই ব্যক্তি।
২০২৩ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর রাতে ঝড়ের মধ্যে ৪০ মিনিট গাড়ি চালিয়ে তারা কুমব্রিয়া থেকে নর্থাম্বারল্যান্ডের হ্যাড্রিয়ানস ওয়ালে গিয়েছিলেন। সেখানে একজন করাত দিয়ে গাছটি কাটেন এবং অন্যজন তা ভিডিও করেন।
প্রসিকিউশন জানিয়েছেন, তারা দুজনই পরিকল্পিতভাবে এ কাজ করেন এবং একে অপরকে সহায়তা করেন। এ ঘটনায় হ্যাড্রিয়ানস ওয়ালও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ অপরাধে সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। তবে বিচারক ল্যামবার্ট জানিয়েছেন, এ ঘটনার সাংস্কৃতিক ও সামাজিক প্রভাব ছিল গুরুতর। অভিযুক্তরা দীর্ঘ মেয়াদের কারাবাসের মুখে পড়তে পারেন। আগামী ১৫ই জুলাই তাদের দণ্ড ঘোষণা করা হবে।
আদালতের সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর ৩৯ বছরের গ্রাহাম এবং ৩২ বছরের অ্যাডাম একটি কাঠের টুকরো ‘ট্রফি’ হিসেবে রেখে দিয়েছিলেন। শুধু তা-ই নয়, মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া সংবাদ নিয়ে তারা আনন্দ প্রকাশ করেছিলেন। গ্রাহামের ফোনে পাওয়া একটি ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে গাছটি কাটা হচ্ছে এবং সেই ভিডিও পাঠানো হয় অ্যাডামকে।
মজার বিষয় হলো, একসময় ঘনিষ্ঠ এই দুই বন্ধুর এখন সম্পর্ক ভেঙে গেছে। একে অপরকে দোষারোপ করছেন তারা। গ্রাহাম দাবি করেছেন, তার অজান্তে অ্যাডাম তার গাড়ি ও ফোন নিয়ে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে গাছ কাটার বিষয়টি কোনো গুরুত্ব না দিয়ে অ্যাডাম বলেছেন, ‘ওটা তো শুধু একটা গাছ, তাই না?’
তবে স্থানীয়দের কাছে এ গাছ শুধু একটি গাছ ছিল না। এটি ছিল উত্তর-পূর্ব ইংল্যান্ডের এক আবেগময় সাংস্কৃতিক প্রতীক। ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এ গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক নিদর্শন এবং অনেকের স্মৃতির অংশ ছিল।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন