প্রতীকী ছবি
ফুসফুসের ক্যানসার ক্রমেই ভয়াবহ আকার নিচ্ছে এ দেশে। এর কারণ, কেবল ধূমপান বা বাড়তে থাকা দূষণ নয়, ফুসফুসের ক্যানসারের আরও এক কারণ হলো জিনের রাসায়নিক বদল। এমনই দাবি করেছেন চিকিৎসকরা। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, ফুসফুসে একবার ক্যানসার বাসা বাঁধলে তা কেমোথেরাপি বা রেডিয়োথেরাপিতেও সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না। এমনকি ক্যানসার খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা বাড়িয়ে তুলছে। এর কারণই হলো বিশেষ কিছু জিন।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাউথ ক্যাম্পাস, মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল ক্যানসার সেন্টার এবং পুনের ওয়ান সেল ডায়াগনোসিস সেন্টারের চিকিৎসকরা দীর্ঘ সময় ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছেন, ফুসফুসের ক্যানসারে যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের অধিকাংশেরই শরীরে রয়েছে সেই বিশেষ কিছু জিন। ‘ইউরোপিয়ান সোসাইটি অফ মেডিক্যাল অনকোলজি ওপেন’ নামক জার্নালে এই গবেষণার বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কোন জিনের কারসাজিতে দফারফা হচ্ছে ফুসফুস?
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অমিত দত্ত জানিয়েছেন, ‘এপিডারমাল গ্রোথ রিসেপ্টর ফ্যাক্টর জিন’ (ইজিএফআর)-এ এমন ‘জেনেটিক মিউটেশন’ বা রাসায়নিক বদল হচ্ছে, যা থেকে কোষের অনিয়মিত ও অস্বাভাবিক বিভাজন দেখা দিচ্ছে। ফলে খুব তাড়াতাড়ি টিউমার কোষ তৈরি হচ্ছে, যা শ্বাসনালি অবধি ছড়িয়ে পড়ছে। আর একবার ক্যানসার কোষ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে, তার গতি রোধ করা খুব কঠিন।
শুধু এখানেই শেষ নয়। আরও একটি জিনের রাসায়নিক বদল শুরু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ৪৮৩ জন ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীকে পরীক্ষা করে দেখা গেছে, তাদের ফুসফুসে ইজিএফআর জিন তো বটেই, পাশাপাশি ‘টিএসজি’ জিনেরও বদল হচ্ছে। এ দুই জিনের রাসায়নিক বদলের কারণে ক্যানসার কোষ খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে।
ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের শরীর থেকে নেওয়া নমুনার জিনগত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যাদের ফুসফুসে কেবল ‘ইজিএফআর’ জিনটি বদলাচ্ছে, তারা সঠিক চিকিৎসায় থাকলে ৬ বছরের বেশি হয়তো বেঁচে থাকতে পারবেন।
কিন্তু যাদের ‘ইজিএফআর’ ও ‘টিএসজি’— দু’টি জিনই বদলে যাচ্ছে, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। খুব বেশি হলে বেঁচে থাকার মেয়াদ ৫১ মাস। কীভাবে এ দুই জিনের বদল ঠেকানো যায়, সে বিষয়ে গবেষণা এগিয়ে নিয়ে গেলেই এ মারণরোগকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
কেসি/এইচ.এস