প্রতীকী ছবি (সংগৃহীত)
রবিউল হক
জেল একদিকে অপরাধীদের বিচারের রায়ের শাস্তিকেন্দ্র। অন্যদিকে এটি ক্ষমতাবান লোকের আশ্রয়কেন্দ্র। জেল কখনো ন্যায়বিচারের প্রতীক আকারে সমাজের রক্ষা-কবজের ভূমিকা নেয়, আবার কখনো সরকার ও প্রশাসন তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে সংগ্রামী, ত্যাগী জননেতাদের আটক করে অন্যায়-অবিচারের সাজঘরে পরিণত করে। সবই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির ফসল। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, সত্যেন সেনদেরকেও জেল-জুলুম বরণ করতে হয়েছে। সেখানে তারা জীবনের শ্রেষ্ঠ রচনাকর্মগুলো সৃষ্টি করেছেন। ১৯২৩ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কারাগারে থাকা অবস্থায় রচনা করেছিলেন ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’। সেখানে তিনি লিখেছিলেন-
‘ঐ অত্যাচারীর সত্যপীড়ন
আছে তার আছে ক্ষয়
সেই সত্য আমার ভাগ্যবিধাতা
যার হাতে শুধু রয়’
১৯৪৩ সালে চার কৃষক নেতার প্রহসনমূলক ফাসিঁ হয়। শিল্পী বিনয় রায় সেই কৃষক নেতাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন-
‘আর কতকাল, বল কতকাল
সবই এ মৃত্যু অপমান।
প্রাণ আর মানে না।।
শহর বন্দরে চাষীর কুটিরে
নর খাদক দলের অভিযান।
আরো পড়ুন : সাম্প্রদায়িকতা ও দাঙ্গাবিরোধী গান
আর সহে না।
১৯৪৯ সালে রাজশাহী জেলে নিহত হয়েছিলেন কৃষক মাধব নাথ। তার স্মরণে হেমাঙ্গ বিশ্বাস লিখেছিলেন-
‘আমরা তো ভুলিনাই শহীদ একথা ভুলবো না
তোমার কলিজার খুনে রাঙাইলে কে আম্বর জেলখানা।…
বলো কি করে ভুলি সে কথা
খুন করে গোপনে তোমার জ্বালাইল চিতা
সেই চিতার আগুন জ্বলে দ্বিগুণ
জ্বলে দিকে দিকে রে বন্ধু।।’
এই গান জেলের মধ্যে প্রহসনকে উদ্দেশ্য করে লেখা। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামও লিখেছিলেন জেলে বসে জেলের তালা ভেঙে ফেলার স্লোগান-
কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙে ফেল কররে লোপাট
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী
ওরে ও তরুণ ঈশান
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ
ধ্বংস- নিশান উঠুক প্রাচী’র প্রাচীর ভেদী’।
জ্যোতিরিন্দ্রো মৈত্রের অনন্য সাধারণ সৃষ্টি ‘নবজীবনের গান’, যেখানে জেলকে অস্বীকার করে রচিত একটি অংশ সমবেত কন্ঠে গীত-
অসহ্য অসহ্য অসহ্য!!
ভেঙে ফেল ভেঙে ফেল
ভেঙে ফেল এই কারা,
শত পাকে ঘিরে বধেঁ নিষ্ঠুর লৌহ,
তবু প্রাণ পাক ছাড়া।…
ভাঙো ভাঙো ভাঙো
ভেঙে ফেল এই কারাগার
প্রাণ কল্লোলে হরজে মুক্তি পারাবার’।
এছাড়া ১৯৪২ সারে হিজলী বন্দিশালায় বসে ত্রিদিব চৌধুরী রচনা করেন-
‘মোদের পতাকা লাল বরণ
শহীদ হল সে করিয়া রণ’।
তথ্যসূত্র
১. সাইম রানা, বাংলাদেশের গণসংগীত: বিষয় ও সুর বৈচিত্র্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৯
২. আবদুশ শাকুর, বাঙালির মুক্তির গান, মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা, ২০০৭
৩. আবদুল ওয়াহাব, বাংলাদেশের লোকগীতি: একটি সমাজতাত্ত্বিক অধ্যয়ন, (দ্বিতীয় খণ্ড), বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৮
এস/ আই.কে.জে/