মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকার আবাসিক চরিত্র ফিরিয়ে আনতে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০২:৫৬ অপরাহ্ন, ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি - সংগৃহীত

রাজধানী ঢাকা একসময় বসবাসের জন্য উত্তম নগরী হিসেবে স্বীকৃত ছিল। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এখন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ঢাকায় বর্তমানে বসবাসের জন্য আবাসিক এলাকা বলে কিছু নেই। আবাসিক এলাকার কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। সেখানে মানুষের মৌলিক প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের সুযোগ থাকতে হবে। যেমন: খাবার ও ব্যবহার্য পানি, রান্নার জন্য গ্যাস/জ্বালানি, স্যানিটেশন, পয়ঃনিষ্কাশন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা (স্যুয়ারেজ), বিদ্যুৎ, প্রয়োজনীয় গাছপালা ও উন্মুক্ত স্থান—এগুলো মানসম্মতভাবে থাকতে হবে। এছাড়া মানুষের বিনোদন, শরীর চর্চা, খেলাধুলার সুযোগ থাকতে হবে।

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (চাল-ডাল-তেল-লবণ, শিশুখাদ্য ও ওষুধ) নাগালে পাওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। আবাসিক এলাকা থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়), কর্মস্থল (ব্যবসা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান) বা অন্যত্র যাতায়াতের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনায় বিদ্যমান বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করে সেখানকার স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। তবেই তাকে একটি পরিপূর্ণ ও মানসম্মত আবাসিক এলাকা বলা হবে।

ঢাকার প্রথম আবাসিক এলাকা ছিল বর্তমান পুরাণ ঢাকার ওয়ারী। তারপর অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত ধানমণ্ডি, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বারিধারা, বনানী, বনশ্রী আবাসিক শহর হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সবগুলোই হারিয়েছে আবাসিক চরিত্র। মোহাম্মদপুর আর ওয়ারী এখন ঘিঞ্জি এলাকা হিসেবে পরিচিত। ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোর খুব কম ভবনই আছে, যেটা শুধু আবাসিক।

আবাসিক এলাকায় মানুষের মৌলিক প্রয়োজনগুলো থাকতে হবে, হতে হবে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যবান্ধব। আবার আবাসিক এলাকায় নতুন ভবন নির্মাণে বেশি শব্দ করা যাবে না, বেশি জোরে মাইক বাজানো যাবে না। যথাযথভাবে পানি ও পয়োঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থাটা থাকতে হবে। কিন্তু ঢাকার আবাসিক এলাকাগুলোতে এসবের কিছুরই বালাই নেই। নগর ও পরিবেশবিদরা বলছেন, আবাসিক এলাকায় সেলুন, ফটোকপির দোকান, মুদির দোকান, কাঁচাবাজার, ডাক্তারখানা থাকতে পারে। তার মানে এই নয় যে বিশাল হাসপাতাল থাকবে, বড় বড় শপিং মল থাকবে। একটি পরিবেশবান্ধব আবাসিক এলাকার নিত্যপ্রয়োজনীয়  চাহিদা মেটানোর জন্য কিছু বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড চলতে পারে। কিন্তু সেটার পরিমাণও নির্ধারণ করে দেয়া আছে, অর্থাৎ ৩০ কিংবা ৩৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না।

রাজধানীর অধিকাংশ  আবাসিক এলাকা মিশ্র ও বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। এসব এলাকায় মিশ্র ব্যবহার হচ্ছে। ধানমন্ডি, গুলশান, উত্তরার মতো অভিজাত আবাসিক এলাকাকে এখন আর আবাসিক এলাকা বলা যাচ্ছে না। এগুলো এখন মিশ্র ও বানিজ্যিক এলাকা হয়ে গেছে।

একসময় বাণিজ্যিক এলাকা বলতে মতিঝিল ও দিলকুশাকে বোঝানো হতো। এখন বিভিন্ন আবাসিক এলাকার কাছেও বাণিজ্যিক এলাকা গড়ে উঠছে। যেমন উত্তরা, গুলশান এর মতো অভিজাত এলাকার মূল সড়কের কাছাকাছি বাণিজ্যিক এলাকা হয়ে উঠছে। ধানমণ্ডি, গুলশান ও বনানীর মতো আবাসিক এলাকার কিছু সড়ককে অনাবাসিক ঘোষণার মধ্য দিয়ে  বাণিজ্যিক করতে গিয়ে সেখানে বহুতল ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এভাবে দেখা গেল, ধানমণ্ডিতে সারি সারি রেস্তোরাঁ হয়ে গেল। অন্যান্য ভবন করা হয়েছে। গুলশান আবাসিক এলাকাও বাণিজ্যিক হয়ে গেছে। ফলে এসব এলাকাকে এখন পুরোপুরি আবাসিক এলাকা না বলে মিশ্র এলাকা বলা যায়। তবে ডিওএইচএস এলাকাগুলো এখনও আবাসিক এলাকা হিসেবে টিকে আছে।
 
বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর মধ্যে একটি ক্ষুদ্র অংশ মিশ্রভাবে ব্যবহার করা হয়। আর অধিকাংশ এলাকা থাকে আবাসিক। আবাসিক মানে সম্পূর্ণভাবে আবাসিকই। কিন্তু ঢাকা শহর তার বিপরীত গতিতে চলছে। আবাসিক চরিত্র হারিয়ে ঢাকা শহর এখন মিশ্র ও বাণিজ্যিক শহরে পরিণত হয়েছে। নগরবিদগণ ঢাকাকে একটি মানসম্মত আবাসিক এলাকা গঠন করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়হীনতা ও জবাবদিহিতার অভাবকে দায়ী করেছেন। ঢাকার কোনো একটি অংশকে পরিবেশবান্ধব মানসম্মত আবাসিক নগরী হিসেবে গঠন করতে রাজউক, সিটি করপোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, ঢাকা ট্রান্সপোর্ট কোঅর্ডিনেশন অথরিটি (ডিটিসিএ), পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় জরুরি।

আই.কে.জে/

ঢাকা

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন