ছবি: সংগৃহীত
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল শুনানিতে ইন্টারভেনার হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আবেদন গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার (২৯শে অক্টোবর) বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ মির্জা ফখরুল ইসলামকে পক্ষভুক্ত করে আদেশ দেন।
আদালতে শুনানিতে অংশ নেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের জানান, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল চেয়ে করা রিটে পক্ষভুক্ত হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) করা রিটে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পুরো বিষয়টি না আসায় বিএনপি পক্ষভুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। শুনানিতে সাথে ছিলেন ব্যারিস্টার বদরোদ্দোজা বাদল।
এই আবেদনের মাধ্যমে ১তম সংশোধনীর মামলায় রিভিউ করার পর এবার পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় করা রিট শুনানিতে যুক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ইন্টারভেনার (মতামত উপস্থাপন করতে) হিসেবে যুক্ত হতে বিএনপির পক্ষে আবেদন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট ।
এর আগে ১৯শে আগস্ট জনস্বার্থে পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তির করা রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি নাইমা হায়দার ও বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
আরও পড়ুন: আ.লীগ-জাপাসহ ১১ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ চেয়ে করা রিট প্রত্যাহার
সেদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফয়েজ আহমেদ।
পরে আবেদনকারীর পক্ষে রুলটি শুনানির জন্য বিচারপতি ফারাহ মাহবুবের নেতৃত্বাধীন কোর্টে উপস্থাপন করেন। এরপর আদালত রুল শুনানির জন্য ৩০শে অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন।
অন্য চারজন হলেন, তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজ উদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান।
পঞ্চদশ সংশোধনী আইনে (২০১১) বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল।
২০১১ সালের ৩০শে জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতি ২০১১ সালের ৩রা জুলাই তাতে অনুমোদন দেন। ওই সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতা হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
এছাড়া জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়; সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয়। রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয় ওই সংশোধনীর মাধ্যমেই।
১৯শে আগস্ট আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে আছে একসঙ্গে অনেকগুলো অনুচ্ছেদে পরিবর্তন বা সংশোধনী আনতে হলে গণভোট করতে হবে। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অনেকগুলো অনুচ্ছেদের পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু কোনো গণভোট করা হয়নি। গণভোট না করে সংশোধনী পাস করা সংবিধান পরিপন্থি।
‘তাছাড়া ত্রয়োদশ সংশোধনী সংক্রান্ত মামলার লিখিত সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ বলেছিলেন, পরবর্তী দুটি (দশম এবং একদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে। কিন্তু সেই আদেশকে অমান্য করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া হয়। ফলে দশম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে না করে দলীয় সরকারের অধীনে করা হয়। এ কারণে পঞ্চদশ সংশোধনী আপিল বিভাগের আদেশের সাথেও সাংঘর্ষিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিপন্থি’ -বলে জানান আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া।
এসি/কেবি
খবরটি শেয়ার করুন