ছবি- সংগৃহীত
গ্যাসের নতুন করে দাম বৃদ্ধির নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে জ্বালানি মন্ত্রণালয়। প্রস্তাবটি এখন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) রয়েছে। প্রস্তাব অনুসারে নতুন কারখানার জন্য গ্যাসের দাম হবে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি ব্যয়ের সমান। ফলে নতুন কারখানাগুলোকে বর্তমান দরের চেয়ে আড়াই গুণ বেশি দামে গ্যাস কিনতে হবে। পুরনো শিল্প-কারখানায় লোড বাড়াতে চাইলেও গুনতে হবে আড়াই গুণ মূল্য। বর্তমানে শিল্প-কারখানার গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাস কিনতে ৩০ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্পে ব্যবহৃত নিজস্ব বিদ্যুৎ) ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা দিতে হয়। এখন প্রতি ঘনমিটারে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে নতুন দামে পুরো গ্যাস বিল হবে।
শিল্পকারখানায় দুই ধরনের গ্যাস–সংযোগ আছে। একটি কারখানার বয়লার চালাতে নেয়া হয়। আর বড় কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ক্যাপটিভ সংযোগ। দুটি সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম এখন একই। পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুরোনো গ্রাহকের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের বাড়তি ব্যবহৃত গ্যাসের বিল হবে নতুন দামে। যেসব শিল্পকারখানা নতুন সংযোগের প্রতিশ্রুতি পেয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে অনুমোদিত লোডের ৫০ শতাংশ পর্যন্ত আগের দাম দিতে হবে। এর বাইরে বাকিটুকুর জন্য নতুন দাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
পেট্রোবাংলা দুটি উৎস থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে। বিভিন্ন কোম্পানি থেকে দেশি গ্যাস কিনে নেয়। এতে প্রতি ইউনিটে তাদের গড়ে খরচ হয় ৬ টাকা ৭ পয়সা। কিন্তু তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করতে খরচ হচ্ছে ৭৫ টাকার বেশি। এখানেই সংস্থাটির বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখন সরকার বলছে তারা ভর্তুকি দিতে রাজি নয়। তাই এখন সরকার বলছে, এলএনজি আমদানির খরচ পুরোটাই শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে বহন করতে হবে।
দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, গ্যাসের দাম আড়াই গুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে শিল্প খাত আরো ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নিরুৎসাহীত হবে। রপ্তানিশিল্পে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে। এতে শিল্পের প্রসার তো ঘটবেই না বরং ছোট ছোট শিল্পপ্রতিষ্ঠান হারিয়ে যাবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামাজিক অস্থিরতা,বাজারে অস্থিতিশীলতা, সুদহার বৃদ্ধি, ডলার সংকটের অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে বিপুলসংখ্যক কলকারখানা এমনিতেই বন্ধ হয়েছে। যেগুলো টিকে আছে সেগুলোও অস্তিত্বের সংকটে ধুঁকছে। এমন অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ালে নতুন করে সংকট আরো বাড়বে।
গ্যাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ভারী শিল্প। আর এসব শিল্পে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ থাকে। শিল্পটির ক্ষতি হলে, ঋণখেলাপি হওয়ার পাশাপাশি বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ব্যাহত হবে। অনেকে চাকরি হারাবেন। ইতোমধ্যে বহু শিল্প বন্ধ হয়ে হওয়ার কারণে বিপুলসংখ্যক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। নতুন করে শিল্পের ওপর চাপ এলে, বেকারত্ব আরো বেড়ে যাবে।
ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গ্যাস বৃদ্ধির প্রস্তাব পাস হলে শিল্পায়ন থমকে যাবে। নতুন করে বিনিয়োগ আসবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অন্য গন্তব্যে চলে যাবেন। এতেই আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে কষ্ট হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড রীতিমতো শিল্প ধ্বংসের লক্ষণ।
রপ্তানিমুখী শিল্পকে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকিয়ে রাখতে হলে গ্যাসের দাম বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। গ্যাসের দাম বাড়লে এমনিতে পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাবে, আবার গ্যাস তো নিরবিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া যায় না। তখন বিদেশি কোম্পানিগুলো মুখ ফিরিয়ে নিবে।
আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন বাস্তবায়নের আগে দেশের স্বার্থ প্রাধান্য দিতে হবে। গ্যাসের দাম বাড়লে শিল্পে নতুন বিনিয়োগ আসবে না, কর্মসংস্থানও হবে না। বিদেশি বিনিয়োগও আসবে না। এমনিতেই বর্তমানে শিল্পখাত নানা সংকটের মুখে থাকার কারণে বেশ কিছু কারখানা এরই মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের ব্যবসায়ী সমাজ গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবকে শিল্প ধ্বংসের অশনিসংকেত হিসেবে দেখছেন।
আই.কে.জে/
খবরটি শেয়ার করুন