শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জার্মানিতে চালু হলো চার কর্মদিবসের সপ্তাহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৫:৪১ অপরাহ্ন, ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

পর্যাপ্ত কর্মীর অভাবে হিমশিম খাচ্ছে জার্মানি। তবে এই সংকটের মাঝেই কয়েক ডজন কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে কর্মীদের কাজের সময় কমিয়েছে। চলতি মাস থেকে ইউরোপের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটির ৪৫টি কোম্পানি ও সংস্থা ছয় মাসের জন্য চার কার্যদিবসের সপ্তাহ চালু করছে। 

তবে এ সময় কাজ কম করলেও কর্মীরা পুরো বেতনই পাবেন। অলাভজনক সংস্থা ফোর ডে উইক গ্লোবালের (৪ডিডব্লিউজি) সঙ্গে যৌথভাবে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইন্ট্রাপ্রেনর-এর নেতৃত্ব এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জার্মানিতে। তারা বলছে, সপ্তাহে চার কার্যদিবস চালু হলে কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। ফলে দেশটির দক্ষ কর্মী সংকটের উপশম হবে। জার্মানি দীর্ঘদিন ধরেই পরিশ্রম ও দক্ষতার জন্য বিখ্যাত। তারপরও গত কয়েক বছরে দেশটিতে উৎপাদনশীলতা কমে গেছে।

অর্থনৈতিক ফলাফলকে কর্মঘণ্টা দিয়ে ভাগ করে উৎপাদনশীলতার হিসাব করা হয়। কাজেই কর্মীরা যদি কম সময়ে একই ফলাফল দিতে পারেন, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই কোম্পানি এবং দেশের উৎপাদনশীলতা বাড়বে।  চার কার্যদিবস চালু করার পক্ষের লোকজন বলছেন, সপ্তাহে পাঁচ দিনের বদলে চার দিন কাজ করা কর্মীরা বেশি উদ্যমী ও চনমনে থাকেন। সে কারণে তারা বেশি উৎপাদনশীল হন। এছাড়া যারা সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ করতে আগ্রহী নন, এমন অনেক লোককে শ্রমশক্তিতে যুক্ত হতে আগ্রহী করবে এই মডেল। এতে কর্মী সংকটও অনেকটাই কমবে। 

সপ্তাহে চার কার্যদিবসের ধারণা নিয়ে আগেও কাজ হয়েছে। ৪ডিডব্লিউজি ২০১৯ সাল থেকে ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড, আমেরিকায় পাইলট কর্মসূচি চালিয়েছে। ৫০০-র বেশি কোম্পানি পরীক্ষামূলকভাবে চার কার্যদিবসের সপ্তাহ চালু করেছে। আর প্রাথমিকভাবে ছুটি বাড়িয়ে ও কার্যদিবস কমিয়ে ভালো ফল পাওয়া গেছে।

ব্রিটেনে প্রায় ৩ হাজার কর্মীকে নিয়ে চার কার্যদিবসের পরীক্ষা চালিয়েছিলেন কেমব্রিজ ও বোস্টনের গবেষকরা। তারা দেখেছেন, ৪০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী এ পরীক্ষার পর চাপ কম অনুভব করার কথা জানিয়েছেন। আর কর্মীদের চাকরি ছাড়া কমেছে ৫৭ শতাংশ। এছাড়া কাজের সময় কমানোর ফলে অসুস্থতাজনিত ছুটিও কমেছে দুই-তৃতীয়াংশ। 

জার্মান স্বাস্থ্যবিমা কোম্পানি ডিএকের সাম্প্রতিক তথ্য বলছে, গত বছর দেশটিতে কর্মীরা গড়ে ২০ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি নিয়েছেন। অর্থাৎ ২০২৩ সালে জার্মানিতে চাকরিতে অসুস্থতাজনিত অনুপস্থিতির কারণে প্রায় ২৮ বিলিয়ন ডলার প্রকৃত আয় হারিয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মান অ্যাসোসিয়েশন অভ রিসার্চ-বেজড ফার্মাসিউটিক্যালস (ভিএফএ)।

আরো পড়ুন: বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী আমেরিকা

ব্রিটেনে পরীক্ষায় গবেষকরা আরো দেখেছেন, অংশগ্রহণকারী ৬১টি কোম্পানির মধ্যে ৫৬টি কোম্পানির আয় প্রায় ১.৪ শতাংশ বেড়েছে। অধিকাংশ কোম্পানিই জানিয়েছে, পরীক্ষামূলক পর্যায়ের পরও তারা চার কার্যদিবসের সপ্তাহ চালু রাখতে আগ্রহী। 

তবে কিছু বিশেষজ্ঞ জার্মানিতে এই মডেলের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। তারা বলছেন, যেসব কোম্পানির সঙ্গে চার কার্যদিবসের সপ্তাহ সামঞ্জস্যপূর্ণ, কেবল ওই কোম্পানিগুলোই এই মডেল থেকে উপকৃত হবে। গবেষক হোলগার শেফার বলেন, কর্মঘণ্টা ২০ শতাংশ কমিয়ে উৎপাদনশীলতা ২৫ শতাংশ বাড়ানোর আশা করাটা অলীক চিন্তা।

অর্থনীতিবিদ বার্ন্ড ফিটজেনবার্গ বলেন, নার্সিং, সিকিউরিটি পরিষেবা কিংবা পরিবহনের মতো খাতগুলোতে চার কার্যদিবসের সপ্তাহ বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে। 

তবে বিরোধিতা থাকা সত্ত্বেও চার কার্যদিবসের সপ্তাহ মনোযোগ কাড়তে পেরেছে। বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠানও এখন সপ্তাহে চার দিন কাজ করার কথা বলছে। 

সূত্র: ডয়চে ভেলে 

এইচআ/ ‪আই.কে.জে


জার্মানী কর্মী সংকট কার্যদিবস

খবরটি শেয়ার করুন