ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ২০২৫ সালের ৩রা জুন ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন’ সংশোধন করে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের পরিচয় ও মর্যাদা নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। এ সংশোধিত আইনে প্রথমবারের মতো ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ – দুটি পৃথক শ্রেণির বিস্তারিত সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, যা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও উত্তরাধিকার সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ।
আইনের ১০ ধারা অনুযায়ী, ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ বলতে ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যে যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশে ও দেশের বাইরে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নেন, তাদের বোঝানো হয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন:
যারা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে দেশের অভ্যন্তরে বা সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন এবং যুদ্ধ করেছেন; যারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ করেছেন বা গেরিলা হামলা চালিয়েছেন;
যারা পাক-সমর্থিত রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস, শান্তি কমিটি এবং অন্যান্য সহযোগী শক্তির বিরুদ্ধে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন; যারা বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) নিয়ন্ত্রণাধীন সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ, ইপিআর, রেডিও কর্মী, চিকিৎসক, নার্স, সেবিকা ইত্যাদি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন;
বিশেষভাবে, যারা পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে নির্যাতিত নারী (বীরাঙ্গনা) হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত হয়েছেন এবং যুদ্ধকালীন সময় আহত হয়ে যারা চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন বা শহীদ হয়েছেন, তাদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আইনের ১৫ ধারা অনুযায়ী, ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এমন সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীকে, যারা ২৬শে মার্চ ১৯৭১ থেকে ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত স্বাধীনতা সংগ্রামে পরোক্ষভাবে অবদান রেখেছেন। তারা হলেন:
ক) প্রবাসী সহায়ক
যেসব প্রবাসী বাংলাদেশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গঠন, প্রচার ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা সংযোগের মাধ্যমে ভূমিকা রেখেছেন।
খ) প্রশাসনিক ও স্বাস্থ্য সহায়তাকারী
যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধকালে মুজিবনগর সরকারের অধীনে কর্মকর্তা, কর্মচারী, ডাক্তার, নার্স বা অন্য কোনোভাবে সেবা দিয়েছেন।
গ) গণপ্রতিনিধি
যেসব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য), এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), বা গণপরিষদের সদস্য মুজিবনগর সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন।
ঘ) বিদেশে কর্মরত সংহতিশীল শক্তি
যারা প্রবাসে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, কনসার্ট বা কূটনৈতিক প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। যেমন—জর্জ হ্যারিসনের কনসার্ট ফর বাংলাদেশ।
ঙ) স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল
যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলে অর্থ সংগ্রহ ও জনমত গঠনে ভূমিকা রাখেন।
এ সংশোধনীতে ‘সহযোগী’ শব্দের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত অংশগ্রহণকারীদের পরিধি সম্প্রসারিত হয়েছে। এতদিন যারা আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা পাননি, কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে সহায়ক ছিলেন, তারা এখন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাবেন।
একইসঙ্গে ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি আগের তুলনায় আরও সুসংহতভাবে সংজ্ঞায়িত হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধার তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের কাজও আইনি ভিত্তি পাচ্ছে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন