ছবি: বিবিসি
ভারতের এক নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। গবেষণায় বলা হয়েছে, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর কানে সফট সঙ্গীত বাজালে অ্যানেস্থেশিয়া ও ব্যথানাশক ওষুধের প্রয়োজন কমে যায় এবং রোগী দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। এমনকি রোগীর অচেতন অবস্থায়ও প্রভাব ফেলতে পারে সঙ্গীত। খবর বিবিসির।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, দিল্লির একটি অপারেশন থিয়েটারে সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়া দেওয়া এক রোগীর পিত্তথলি অপসারণের প্রস্তুতি চলছিল। গভীর ঘুমে অচেতন থাকলেও তার কানে হেডফোনে ধীরে বাজছিল বাঁশির সুর। অ্যানেস্থেশিয়ার ওষুধে মস্তিষ্ক অনেকটাই নিস্তেজ হয়ে গেলেও শ্রবণ স্নায়ুর কিছু অংশ সক্রিয় থাকে। আর এ কারণেই সঙ্গীত তার শরীরে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, সঙ্গীত শোনানো রোগীদের ক্ষেত্রে প্রোপোফল এবং অপিওইড ব্যথানাশকের মাত্রা তুলনামূলকভাবে কম লাগে, ফলে দ্রুত ও পরিষ্কারভাবে চেতনা ফেরে ওই রোগীদের।
বিবিসি বলছে, গবেষণাটি করেছে দিল্লির মাওলানা আজাদ মেডিকেল কলেজ ও লোক নায়েক হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাদের গবেষণা ‘মিউজিক অ্যান্ড মেডিসিন’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এতে বলা হয়, ল্যাপারোস্কোপিক কোলেসিস্টেকটোমি—অর্থাৎ ছোট ছিদ্র করে পিত্তথলি অপসারণের মতো স্বল্প সময়ের অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে সঙ্গীত শোনানো বা বাজানো হলে তা রোগীর দ্রুত সেরে ওঠার প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে পারে।
অ্যানেস্থেশিয়া বিশেষজ্ঞেরা জানান, এমন অস্ত্রোপচারের পর রোগীর দ্রুত, স্বাভাবিক ও সচেতন অবস্থায় জেগে ওঠা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যথানিয়ন্ত্রণ হলে শরীরের চাপ সামলানো সহজ হয়। সাধারণ অ্যানেস্থেশিয়ার সঙ্গে এখন প্রায়ই দেওয়া হয় আল্ট্রাসাউন্ড-গাইডেড নার্ভ ব্লক, যাতে পেটের স্নায়ু কিছু সময়ের জন্য অবশ থাকে।
তবে অস্ত্রোপচার শরীরের জন্য স্বাভাবিকভাবেই এক ধরনের চাপ। আর তাই অচেতন অবস্থাতেও হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, হরমোন নিঃসরণ, রক্তচাপ বৃদ্ধির মতো প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশেষ করে শ্বাসনালি খুলে রাখতে টিউব ঢোকানোর সময় শরীরের চাপ বাড়ে। চিকিৎসকেরা জানান, অস্ত্রোপচারের পুরোটা সময় এই চাপ নিয়ন্ত্রণ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রোপোফল নামের দ্রুত কার্যকরী অ্যানেস্থেটিক এখন স্বল্প সময়ের অস্ত্রোপচারে বেশি ব্যবহৃত হয়, কারণ এতে গ্যাসভিত্তিক অ্যানেস্থেশিয়ার মতো ‘হ্যাংওভার’ থাকে না।
আর তাই গবেষণা দলের লক্ষ্য ছিল- সঙ্গীত শোনালে প্রোপোফল ও ফেন্টানিলের ব্যবহার কমে কি না, তা দেখা। এজন্য তারা ১১ মাসে ২০-৪৫ বছর বয়সী ৫৬ জন রোগীর ওপর পরীক্ষা চালান। সবার কানে নয়েজ-ক্যান্সেলিং হেডফোন পরানো হলেও, কেবল একটি গ্রুপ সঙ্গীত শুনেছে।
ফলাফলে দেখা যায়, সঙ্গীত শোনানো রোগীদের অ্যানেস্থেশিয়ার মাত্রা কম লাগে, রক্তচাপ স্থিতিশীল থাকে, কর্টিসলসহ স্ট্রেস-হরমোনের পরিমাণও কম থাকে। গবেষকদের মতে, অচেতন অবস্থাতেও মস্তিষ্কের শ্রবণ পথ সক্রিয় থাকে এবং সংগীত সেই অভ্যন্তরীণ চাপ কমাতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকদের ভাষায়, অস্ত্রোপচারের সময় রোগীর মস্তিষ্ক পুরোপুরি নিশ্চুপ থাকে না। কখনও কখনও রোগীরা অপারেশন থিয়েটারের কথা টুকরো টুকরো মনে রাখতে পারেন, আর এতেই বোঝা যায়- অচেতন অবস্থাতেও মস্তিষ্ক শব্দগ্রহণ করতে পারে। সেই যুক্তিতেই চিকিৎসকেরা বলছেন, চাপ বাড়ানো শব্দ যেমন প্রভাব ফেলে, তেমনই কোমল সঙ্গীতও ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।
আর তাই শরীর স্থির ও মন অচেতন থাকলেও কয়েকটি কোমল সুর বা সঙ্গীত রোগীর সুস্থতার পথে যে সহায়ক হতে পারে, তা বর্তমান গবেষণাতে স্পষ্ট।
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন