ছবিসূত্র : ফেসবুক থেকে নেওয়া।
বাজেট ঘোষণার পরপরই প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের নেতৃত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে বৃটেনে ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির এমপিদের একাংশের মধ্যে জল্পনা চলছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, লেবার দলের সংসদ সদস্যদের (এমপি) পক্ষ থেকে তার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কোনো চ্যালেঞ্জ এলে তিনি লড়াই করবেন। সূত্র : রয়টার্স।
স্যার কেয়ার স্টারমারের অনুগতরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তার পদটি তাৎক্ষণিকভাবে হুমকির মুখে পড়তে পারে। সম্ভবত আগামী দুই সপ্তাহ পর বাজেট ঘোষণার পরপরই।
সমালোচকরা বলছেন, ‘ডাউনিং স্ট্রিট এখন সম্পূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে চলে গেছে, যা সরকারকে বর্তমান সংকট থেকে উদ্ধার করতে কোনোভাবেই সাহায্য করবে না।’
স্যার কেয়ারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তারা বলছেন, কেয়ার স্টারমারকে সরানোর জন্য ভেতরে ভেতরে ষড়যন্ত্র চলছে। তারা সতর্ক করে বলছেন, নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এমন কোনো চ্যালেঞ্জ দলের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি বয়ে আনতে পারে।
লেবার দলের এমপিদের মধ্যে যেসব নাম স্যার কেয়ার স্টারমারের সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে আলোচনায় আছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন তার মন্ত্রিসভার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ কয়েকজন সহযোগীও। বিশেষ করে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওয়েস স্ট্রিটিং এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ। কেউ কেউ ধারণা করছেন, জ্বালানি মন্ত্রী এড মিলিব্যান্ড এবং প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী ও বর্তমান ব্যাকবেঞ্চার লুইস হেইগও নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন।
এক মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি (স্যার কেয়ার) এই লড়াই করবেন। এরপর তিনি ২০২১ সালের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করেন, যেখানে লেবার পার্টি কনজারভেটিভদের কাছে পরাজিত হয়েছিল এবং সেই সময় স্যার কেয়ার লেবার দলের নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন।
ওই মন্ত্রী বলেন, ‘তিনি লেবার পার্টির ইতিহাসে জীবিত থাকা মাত্র দুইজন ব্যক্তির একজন, যিনি সাধারণ নির্বাচনে জয় পেয়েছেন। মাত্র ১৭ মাস পর তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা পাগলামি হবে।’ বিগত কয়েক মাস ধরে লেবার পার্টির অনেকেই স্বীকার করেছেন, আগামী মে মাসে স্কটল্যান্ড ও ওয়েলসের আঞ্চলিক নির্বাচন এবং ইংল্যান্ডের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় নির্বাচনের পর সরকার এক কঠিন মোড়ের মুখে পড়তে পারে।
সাধারণভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ঐ নির্বাচনে লেবার পার্টির ফলাফল ভালো হবে না। তবে দলের ভেতরে অনেকেই এখন উদ্বিগ্ন। তারা ভাবছেন, নেতৃত্ব পরিবর্তনের চিন্তা করতে মে পর্যন্ত অপেক্ষা করা সম্ভব নাও হতে পারে। ডাউনিং স্ট্রিটও জানে, তাদের বিরুদ্ধে এমন হুমকি খুব শিগগিরই বাস্তব হয়ে উঠতে পারে।
এক জ্যেষ্ঠ লেবার এমপি বলেন, ‘লোকাল নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করতে বলাটা সহজ, কিন্তু আমি তো আমার কর্মীদেরই যুদ্ধে পাঠাচ্ছি। আমি আমার সব কাউন্সিলর হারাতে পারি না।’
আরেকটি লেবার সূত্র জানায়, ‘বাজেট ঘোষণার পর নেতৃত্ব পরিবর্তনের পক্ষে যুক্তিগুলোর তালিকা প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে। যদি ওয়েস সাহস দেখায় এবং উদ্যোগ নেয়, তাহলে বড়দিনের আগেই সে প্রধানমন্ত্রী হতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রীর অনুগতদের মধ্যে অনেকেই ওয়েস স্ট্রিটিংয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে সন্দেহের চোখে দেখছেন। স্ট্রিটিংয়ের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেন, ‘এই দাবিগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রী স্ট্রিটিংয়ের একাধিক সাক্ষাৎকার দেওয়ার কথা রয়েছে, যা মূলত ইংল্যান্ডে এনএইচএস সংস্কার পরিকল্পনাকে কেন্দ্র করে হওয়ার কথা।
অন্যদিকে সরকারের অভ্যন্তরেই অনেকে বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ বলে বর্ণনা করছেন। এক মন্ত্রী স্পষ্টভাবে বলেন, ‘অবস্থা ভয়াবহ। জনগণ ওকে (স্টারমারকে) ঘৃণা করে। (জেরেমি) করবিনের সময়ের চেয়েও খারাপ অবস্থা এখন। মে মাস পর্যন্ত টিকে থাকা সম্ভব বলে মনে হয় না।’
বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে, স্যার কেয়ার স্টারমার আধুনিক ব্রিটিশ ইতিহাসের অন্যতম অজনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অবস্থান করছেন। গত কয়েক মাসে লেবার পার্টি ভোটারদের এক-পঞ্চমাংশেরও বেশি সমর্থন অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
স্টারমারের এক ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীর ভাষায়, ‘অনেকে ভাবছেন, এখন লেবার সরকার আর এক ‘আদর্শ সরকার’-এর মধ্যে বেছে নিতে হবে। কিন্তু বাস্তবে বিকল্পটা আমাদের আর পরিপূর্ণতা নয়—আমাদের আর রিফর্ম ইউকের মধ্যে।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন