আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকি ও ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। ছবি: সংগৃহীত
আফগানিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির নয়াদিল্লি সফর এবং বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে তার বৈঠক ঘিরে ভারত-আফগান সম্পর্ককে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। চিরকাল তালেবানকে জঙ্গি, সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে এলেও পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সেই তালেবান সরকারকেই কাছে টানছে নরেন্দ্র মোদির হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার। খবর এনডিটিভির।
তবে গতকাল শুক্রবারের (১০ই অক্টোবর) একটি ঘটনা তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। ভারতে আফগানিস্তানের দূতাবাসে আয়োজিত মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলনে নারী সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকার অভিযোগ উঠেছে।
শুক্রবার আফগান দূতাবাসে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে কোনো নারী সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন না। একাধিক নারী রিপোর্টার অভিযোগ করেছেন, তারা পোশাকবিধি মেনে এলেও তাদের ভেতরে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার পরপরই অনেক সাংবাদিক সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা প্রশ্ন তোলেন, ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এমন ঘটনা কীভাবে ঘটতে পারে!
এই গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর ভারত সরকার দ্রুত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ শনিবার (১১ই অক্টোবর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই সংবাদ সম্মেলনে ‘ভারত সরকারের কোনো ভূমিকা ছিল না’।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আফগানমন্ত্রীর সফরকে কেন্দ্র করে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের তালিকা মুম্বাইয়ে অবস্থিত আফগান কনস্যুলেট জেনারেল তৈরি করেছিল। আফগান দূতাবাসের এলাকা ভারতীয় ভূখণ্ড হলেও তা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ভারতীয় সরকারের আইনি এখতিয়ারের বাইরে।
ঘটনাটি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় ধরনের বিতর্ক তৈরি করেছে। বিরোধী দলের নেতারা এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া সমালোচনা করেছেন।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ করে বলেন, ‘যখন একটি প্রকাশ্য মঞ্চে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তখন আপনি ভারতের প্রত্যেক নারীকে জানান দিচ্ছেন যে আপনি তাদের পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য সবল নন।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের দেশে নারীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে সমান অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে। এই ধরনের বৈষম্যের মুখে আপনার নীরবতা “নারী শক্তি” স্লোগানের অন্তঃসারশূন্যতা উন্মোচন করে।’
কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রধানমন্ত্রী মোদিকে এই ঘটনার বিষয়ে তার অবস্থান ‘স্পষ্ট’ করার দাবি জানান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘যে দেশের নারীরা দেশের মেরুদণ্ড এবং গর্ব, সেই দেশে ভারতের সবচেয়ে সক্ষম নারীদের অপমান কীভাবে সহ্য করা হলো?’
সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম পুরুষ সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, ‘আমি মর্মাহত যে আফগানিস্তানের আমির খান মুত্তাকির সংবাদ সম্মেলন থেকে নারী সাংবাদিকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। আমার ব্যক্তিগত মত, পুরুষ সাংবাদিকদের উচিত ছিল তাদের নারী সহকর্মীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে দেখে প্রতিবাদ করে ওয়াকআউট করা।’
এই বিতর্কের নেপথ্যে রয়েছে আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের নারীবিরোধী কঠোর নীতি। তালেবান সরকার নারীদের কাজ করা থেকে শুরু করে শিক্ষার অধিকারের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
সম্প্রতি আফগান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারী অধিকার-সংশ্লিষ্ট বই নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং লিঙ্গ ও উন্নয়ন, নারী সমাজবিদ্যা, মানবাধিকার, আফগান সাংবিধানিক আইন এবং বিশ্বায়ন ও উন্নয়নসহ ১৮টি কোর্স বাতিল করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আফগান দূতাবাসের ঘটনাটি আরও বেশি সমালোচিত হয়েছে।
খবরটি শেয়ার করুন