বুধবার, ২৩শে অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সড়কে বন্ধ হোক মৃত্যুর মিছিল

সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৫৭ অপরাহ্ন, ২২শে অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

২২শে অক্টোবর জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস। প্রতিবছর নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয়। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ‘ছাত্র-জনতার অঙ্গীকার, নিরাপদ সড়ক হোক সবার’। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) দীর্ঘ ২৪ বছর ধরে সড়ককে নিরাপদ করার লক্ষ্যে আন্দোলেন করার ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সাল থেকে সরকার দিবসটি জাতীয়ভাবে পালন করার ঘোষণা দেয়।

১৯৯৩ সালের এই দিনে বান্দরবানে শুটিংয়ে থাকা স্বামী ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে যাওয়ার পথে চট্টগ্রামের অদূরে চন্দনাইশে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন জাহানারা কাঞ্চন। সেই থেকে নিরাপদ সড়কের জন্য আন্দোলন করে আসছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। এ লক্ষ্যে স্ত্রী হারানোর এক মাসের মধ্যে সড়ক নিরাপত্তায় কাজ করার উদ্যোগ নেন এবং ১লা ডিসেম্বর ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’ এই স্লোগান নিয়ে গড়ে তোলেন সামাজিক সংগঠন-নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগের কারণে খুব অল্প সময়েই নিসচা সারাদেশে বিস্তৃতি লাভ করে। ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতিবছর ২২শে অক্টোবর দিনটিকে ‘নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসাবে পালন শুরু হয়। শুরু থেকেই বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এই আন্দোলনের গুরুত্ব অনুধাবন করে সরকার ২০১৭ সালে দিবসটিকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকে সরকারিভাবে যথাযোগ্য মর্যাদায় দেশে দিবসটি পালিত হচ্ছে।

বড় বড় শহর ও মহাসড়কগুলোতে বেশিরভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। সড়ক ও মহাসড়কে অনুমতিহীন অবৈধ যানবাহন— ভ্যান, রিকশা, নছিমন, অটোরিকশার বেপরোয়া চলাচল বেশিরভাগ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী। আইনকে অমান্য করে ধীরগতির বাহন মহাসড়কে চলাচল করার কারণে দূরপাল্লার বড় গাড়িগুলোর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করে দুর্ঘটনা ঘটায়। স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব অবৈধ গাড়ি সড়কে চলে। এজন্যই স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশকে এই ব্যাপারে তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা নিতে দেখা যায় না।

অনেক সময় পথচারীদের অসতর্ক ও অজ্ঞানতার কারণেও দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রাফিক আইন সম্পর্কে ধারণা না থাকা, রাস্তা চলাচল ও পারাপারে মোবাইল ব্যবহার, জেব্রা ক্রসিং, আন্ডারপাস, ওভার ব্রিজ ব্যবহার না করা, যত্রতত্র পারাপারের ফলে পথচারীরা নিয়মিত দুর্ঘটনায় পড়ছে।

আমাদের দেশে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। তারপরই শোনা যায়, গাড়ির ফিটনেস নেই, গাড়ির কাগজপত্র নেই, কিংবা চালকের লাইসেন্স নেই। অথবা চালকের হেলপার গাড়ি চালাচ্ছে। অথচ এগুলো দেখার কথা দুর্ঘটনা ঘটার আগে। কিন্তু এক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনো ধরনের মনিটরিং নেই। অধিকাংশ দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয় না। কিন্তু দুর্ঘটনার কারণ কী এবং কিভাবে কমানো যায়, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে সবসময় উদাসীন দেখা যায়।

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত পরিবহন ব্যবস্থাকে আইনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সেক্ষেত্রে লাইসেন্সবিহীন গাড়ি যাতে কেউ রাস্তায় নামাতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। চালকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, তারপরই চালককে সরকারি উদ্যোগে ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবস্থা করতে হবে। লাইসেন্স প্রদানের জন্য অবশ্যই চালকের ডোপ টেস্ট করতে হবে। যাতে করে কোনো প্রকার মাদকাসক্ত ব্যক্তি লাইসেন্স গ্রহণ না করতে পারে।

সর্বোপরি সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে সচেতনতার বিকল্প নেই। তাই এই ব্যাপারে সবাইকে সর্বাত্মক সচেতন করতে হবে। সব শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা এবং ট্রাফিক আইন ও শাস্তির বিষয় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও স্যোশাল মিডিয়ায় প্রচারণা চালাতে হবে।

সড়কে দুর্ঘটনার হার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা মহামারি আকার ধারণ করছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সরকারকে কার্যকর ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই সড়কে বন্ধ হবে মৃত্যুর মিছিল।

আই.কে.জে/

সড়কে বন্ধ হোক মৃত্যুর মিছিল

খবরটি শেয়ার করুন