ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
মাগুরায় আট বছরের মেয়ে শিশুর ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় চলছে। সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন আছে শিশুটি। তার ছবি ও নাম-পরিচয় জাতীয় একাধিক এবং দেশের বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত-প্রকাশিত হয়েছে।
ঢাকায় জাতীয় দৈনিক পত্রিকা, বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত এমন অন্তত ১০ জন সাংবাদিক শিশুটির নাম ও ঠিকানা প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছেন। এমনকি ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর শিশুটিকে অভিভাবকরা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়ার মুহূর্তের ভিডিওচিত্র অন্তত ১২ জন সাংবাদিক ফেসবুকে পোস্ট দেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুর ছবি বা পরিচয় সংবাদমাধ্যম, বা ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে কেউ প্রকাশ করলে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাকে আটক করতে পারবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারায় বর্ণিত এই অপরাধ আমলযোগ্য হওয়ায় জড়িত অভিযোগে কোনো ব্যক্তিকে সঙ্গে সঙ্গে আটক করা যায়।
পরে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে অভিযুক্তকে জেল-হাজতে পাঠানো যাবে। এই আইন দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান। সাংবাদিকদের দেশের আইন-কানুন সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা থাকা জরুরি। সাংবাদিকতা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ পেশা। এ পেশা মহত্ত্বের দাবিদার। সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে এ ধরনের ঘটনা মানুষ আশা করে না বলে তাদের অভিমত।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমলযোগ্য ধারায় পুলিশের কাছে তথ্য এলেই আপরাধীকে গ্রেপ্তার করতে পারবে। তথ্য যে কোনো উৎস (সোর্স) থেকে আসতে পারে। ভিকটিম কখন এসে থানায় অভিযোগ করবে, সে জন্য পুলিশকে অপেক্ষা করতে হবে না।’
তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের কোথাও বলা হয় নেই যে, কোথায় প্রকাশ হলে সেটা প্রকাশ বলে গণ্য হবে। ফেসবুক ও সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, যেখানেই প্রকাশ করা হোক, সেটা প্রকাশই। সোশ্যাল মিডিয়া এখন কমিউনিটি জার্নালিজমের মধ্যেই পড়ে।’
জানা যায়, ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী, ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর পরিচয় সংবাদপত্রে বা অন্য কোনো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ বা পরিবেশন করা যায় না। এই বিধান লংঘনের অনধিক দুই বৎসর কারাদণ্ডে বা অনূর্ধ্ব এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
এছাড়া, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ছাড়াও ২০২৩ সালের সাইবার নিরাপত্তা আইনে অনুমতি ছাড়া ছবিসহ ব্যক্তির পরিচিতি প্রকাশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
ওই আইনের ২৬(১) ধারায় বলা আছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।’
২৬(২) ধারা মতে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ২ (দুই) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।’
একাধিক আইনজীবী সুখবর ডটকমকে বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবাদপত্রের পাশাপাশি ফেসবুক ও ইউটিউবসহ সব মিডিয়ার উপরই নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
এইচ.এস/