রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** আলোচনা-সমালোচনায় কবি-সাংবাদিক আলতাফ, সহকর্মীরা প্রতিবাদমুখর, সরব নারীনেত্রীরা *** জামায়াত সম্পর্কে কী এনসিপির নতুন উপলব্ধি *** খালেদা জিয়ার সংসদ নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়ার বিষয়ে যা জানাল বিএনপি *** একের পর এক অগ্নিকাণ্ড নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জরুরি বৈঠক *** জামায়াতসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নতুন কর্মসূচি *** আন্দোলনের জবাবে ট্রাম্প বললেন, ‘আমি রাজা নই’ *** পুঁজিবাজার চাঙা করতে আইসিবিকে ১০০০ কোটি টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা *** অগ্নিনির্বাপণে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে কাজ শুরু হয়েছে, দাবি উপদেষ্টার *** নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন যেতে পারবেন পর্যটকেরা *** দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ

বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৬:৪১ অপরাহ্ন, ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪

#

ছবি - সংগৃহীত

রবিউল হক
শিল্প-সংস্কৃতির নানা উপাদানের সাথে মানুষের যোগসূত্র সুপ্রাচীনকালের। আমাদের সুদীর্ঘকালের জীবন ব্যবস্থার শেকড় উদঘাটনে শিল্প-সাহিত্যের ইতিহাস অনুসন্ধান বিরাট ভূমিকা পালন করে। মানুষের বিনোদনের প্রাচীন মাধ্যম সংগীত ও নাটক। গীতিনাট্যপ্রবণ বাংলাদেশের মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক চেতনালব্ধ জ্ঞান, ধর্মীয় সাধনার ফলশ্রুতিতে লব্ধ জ্ঞান নানাভাবে পরিবেশিত হয়ে আসছে।

“প্রাচীন বাংলায় ঐতিহ্যবাহী নাট্যধারার অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রথম সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় ভরতমুণির নাট্যশাস্ত্রে। এখানে দেশ-কাল-ভাষা অনুসারে চার ধরনের প্রবৃত্তির উল্লেখ রয়েছে”।১ এছাড়া, বাংলা সাহিত্যের  আদি নিদর্শন চর্যাপদে বুদ্ধ নাটকের উল্লেখ রয়েছে চর্যার ১৭ সংখ্যক পদে। পদকর্তা বীণাপা তার রচিত পদে এ সম্পর্কে যেভাবে অবতারণা করেছেন তা নিম্নরূপ-

“নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী
বুদ্ধনাট্যম বিসমা হোই”।।২

বুদ্ধনাট্য চর্চায় সংগীত, বাদ্য ও নৃত্যের পাশাপাশি অভিনয় কলার উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে ডোম্বীকে কলাবতী রমণী হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। চর্যাপদে বহুবার নৃত্যের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। নৃত্যক্রিয়ায় পারদর্শী ডোম্বীর চৌষট্টি পাপড়ীর উপর চড়ে নৃত্যের উল্লেখ রয়েছে চর্যার ১০নং পদে। কৃষ্ণপাদচার্য খুব সুন্দরভাবে তার পদে নৃত্যের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন-

“এক সো পদমা চউষট্ঠী পাখুড়ি।
তহি চড়ি নাচই ডোম্বি বাপুড়ি”।।৩

প্রাচীন বাংলায় প্রচলিত বুদ্ধ নাটকের রূপ মধ্যযুগে এসে কিছুটা পরিবর্তিত হয়। কেননা, সে সময়ে বাংলাদেশে মধ্যপ্রাচ্য হতে মুসলমানদের আগমন ঘটে। ধীরে ধীরে বাংলার বৌদ্ধগণ ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে থাকেন। নৃত্য-গীত-অভিনয় ইসলাম ধর্মে বৈধতা না থাকলেও ধর্মান্তরিত মুসলমানগণ তাদের গ্রাম্যরীতি অত্যন্ত সজীবভাবে লালন করতে থাকেন। “এদেশের নাট্যরীতির স্বরূপ হিসেবে কবি জয়দেবের আসরকেন্দ্রিক পরিবেশনা ‘গীতগোবিন্দ’ কাব্যের অবতারণা করা যায়। এটি কৃষ্ণ, রাধা এবং সখি তিন চরিত্র বিশিষ্ট নৃত্য সম্বলিত আখ্যানধর্মী পরিবেশনা। এছাড়াও গীতগোবিন্দের যে ৮০টি শ্লোক রয়েছে সেই শ্লোকসমূহ এবং গানগুলি মূল গায়েন ও দোহার কণ্ঠে ধূয়াসহ গীতিনৃত্য ও বর্ণনার মাধ্যমে পরিবেশিত হতো বলে একে নৃত্য সম্বলিত গীতিনাট্য হিসেবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে”।৪

তাছাড়া, চৈতন্যের সময়েও অভিনয় কলার সমাদর এবং অভিনয়ের সাথে চৈতন্যের যোগসূত্র ছিল বলে জানা যায়। তবে, বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্যে গীত ও নৃত্যের এক অসাধারণ সমাবেশ লক্ষ করা যায়। এছাড়া লোকজীবনকে উপজীব্য করে প্রণয়মূলক আখ্যানের পরিবেশনা বেশ জনপ্রিয়।

রবিউল হক, লোক গবেষক ও শিল্পী

তথ্যসূত্র:
১. সেলিম আল দীন, মধ্যযুগের বাঙলা নাট্য, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০১৮, পৃ. ১৭
২. Muhammad Shahidullah, Buddhist Mystic Songs, Bangla Academy, Revised and Enlarged Eddition, Dhaka, 1996, p.53
৩. মুহম্মদ আবদুল হাই ও আনোয়ার পাশা (সম্পা.), চর্যগীতিকা, ষষ্ঠ সংস্করণ, স্টুডেন্ট ওয়েজ, ঢাকা, ১৪১৪ বঙ্গাব্দ, পৃ. ৫২-৫৩
৪. সাইমন জাকারিয়া, বাংলাদেশের লোকনাটক: বিষয় ও আঙ্গিক বৈচিত্র, বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ২০০৮
   
আই.কে.জে/

লোকনাট্য

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250