মঙ্গলবার, ৭ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জো বাইডেন ও তার দোসরেরা মিলে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করেছিল: গোলাম মাওলা রনি

নিজস্ব প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৭:২৪ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, বাংলাদেশকে ঘিরে আমেরিকার ডিপ স্টেটের যে পলিসি, তা বাস্তবায়নে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বড় বাধা ছিলেন। তাই তাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে (২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট)। তাকে সরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ একটি ডিপ স্টেট বানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আমেরিকানেরা। আমেরিকার সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও তার দোসেররা মিলে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করেছিলেন। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করেই আমেরিকা ও ভারতের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমেরিকা ও ভারতের সম্পর্ক দা-কুমড়ার মতো। অথচ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একটা ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর তাদের মধ্যে প্রথম বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয় বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে। জো বাইডেন বাংলাদেশের কর্তৃত্ব সরাসরি নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন। আমেরিকার ডিপ স্টেট পলিসি অনুযায়ী ডোনাল্ড লু, পিটার হাসসহ আরো যাদের নাম আসছে তারা এবং তাদের দোসরেরা মিলে ভারতের কর্তৃত্ব অস্বীকার করে শেখ হাসিনার সরকারকে উৎখাত করেছিলেন।

আজ সোমবার (২২শে সেপ্টেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ করা এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন গোলাম মাওলা রনি। 'বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ে মোদি-ট্রাম্প মুখোমুখি, হাসিনা ফিরবেন নাকি বার্মা অ্যাক্ট হবে' শিরোনামে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এটি দেখা হয়েছে ৩৮ হাজারের বেশি বার, এতে লাইক পড়েছে ১ হাজারের বেশি, মন্তব্য এসেছে ২০৪টি।

প্রসঙ্গত,  আমেরিকায় ‘ডিপ স্টেট’ বলতে কেন্দ্রীয় সরকারের সদস্যদের, বিশেষ করে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই ও সিআইএর কর্মকর্তাদের গোপন নেটওয়ার্ককে বোঝানো হয়ে থাকে। গোপন এই নেটওয়ার্কে অনির্বাচিত সরকারি-বেসরকারি প্রভাবশালী লোকজন থাকেন। রাজনৈতিক সরকারের সমান্তরালে নিজেদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে স্বাধীনভাবে এই নেটওয়ার্ক কাজ করার চেষ্টা করে থাকে। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন রাষ্ট্রে অনির্বাচিত গোষ্ঠীকে ক্ষমতা দখলে সহায়তা করা হয়।

বাংলাদেশের ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনাবলিতে আমেরিকার ‘ডিপ স্টেট’–এর কোনো ভূমিকা থাকার বিষয়টি চলতি বছর নাকচ করে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে আমেরিকায় সফররত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়। ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মোদি প্রতিবেশী বাংলাদেশের ঘটনাবলি নিয়ে তার উদ্বেগের কথা জানান বলে তখন আমেরিকা ও ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রশ্নোত্তর পর্বে সেদিন এক সাংবাদিক ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প, বাংলাদেশ ইস্যুতে আপনি কী বলতে চান? কারণ, আমরা দেখেছি বাইডেন প্রশাসনের সময় আমেরিকান ডিপ স্টেট (রাজনৈতিক পটপরিবর্তন) বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে জড়িত ছিল। এরপর জুনিয়র সরোসের (আমেরিকায় বিনিয়োগকারী এবং বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক আন্দোলনে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে) সঙ্গে বৈঠক করেছেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সুতরাং, বাংলাদেশের বিষয়ে আপনার অভিমত কী?'

তবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিয়েই প্রায় অর্ধশত নির্বাহী আদেশ জারি করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার বলিষ্ঠ প্রয়োগে দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর ইঙ্গিত দেন। ট্রাম্প প্রশাসনের এসব উদ্যোগে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘ডিপ স্টেট’ বলে যে ব্যবস্থা ছিল, সেটা ভেঙে দেওয়ার প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।

গোলাম মাওলা রনি পটুয়াখালী-৩ আসন থেকে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে তিনি দলটি থেকে বহিষ্কৃত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি তাকে। ২০১৮ সালের ২৬শে নভেম্বর তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজধানীর গুলশানের কার্যালয়ে গিয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর উপস্থিতিতে দলটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দেন।

আজকের ভিডিওতে রনি বলেন, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও ভারতের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়েছে। আমেরিকার ডিপ স্টেট পলিসিতে শেখ হাসিনা বড় বাধা ছিলেন। তাই তাকে সরিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ একটি ডিপ স্টেট বানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আমেরিকানেরা। বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে আমেরিকা ও ভারতের সম্পর্ক এখন দা-কুমড়ার সম্পর্কে পরিণত হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে একটা ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর তাদের মধ্যে প্রথম বিতণ্ডা শুরু হয় বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারে ডিপ স্টেট থিওরি, ডোনাল্ড লুকে (আমেরিকার দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী) চাকরিচ্যুত করা, পিটার হাসকে (বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক রাষ্ট্রদূত) চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। এই কাজগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্প করেছিলেন মূলত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খুশি করার জন্য।’

১৯৫৩ সাল থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে আমেরিকান প্রশাসন তাদের পলিসির ধারাবাহিকতা চালু রেখেছে বলে দাবি করেছেন গোলাম মাওলা রনি। তার দাবি, সেই পলিসিটা হলো বার্মা অ্যাক্ট। রনি বলেন, ‘সেই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান আমলেই আমাদের পার্বত্য জেলাগুলো উত্তাল হয়ে ওঠে। সেখানে শত শত খ্রিস্টান মিশনারিতে যারা রয়েছেন, তারা সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করেন। ওখানে যারা উপজাতি রয়েছেন, তাদের অর্থ এবং অস্ত্র সরবরাহ করা হয়। তাদের বলা হয় যে স্বাধীন-সার্বভৌম একটা পাহাড়ি জাতি থাকবে তোমাদের।’

১৯৯৬ সালে শান্তিবাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং পার্বত্য শান্তিচুক্তিতেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে উল্লেখ করেন গোলাম মাওলা রনি।

তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা ক্রাইসিস তৈরি করে আমেরিকা আজকের এই অবস্থানে। তারা তাদের যে ডিপ স্টেট পলিসি, সেই পলিসিতে সামনের সারির বাধাটা হলেন শেখ হাসিনা। তো সেই শেখ হাসিনাকে সরিয়ে এখানে ডিপ স্টেট পলিসি বাস্তবায়ন করার জন্য, বার্মা বাস্তবায়ন করার জন্য তারা একেবারে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। তবে এখানে সমস্যা হচ্ছে, ভারতের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাচ্ছে না আমেরিকা।’

গোলাম মাওলা রনি

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250