সোমবার, ৬ই অক্টোবর ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২০শে আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সর্বশেষ

*** গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ, কাল নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও নারী নেত্রীদের সঙ্গে *** জ্বর হওয়ার সাথে সাথে ডেঙ্গু পরীক্ষার অনুরোধ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের *** অ্যানথ্রাক্স প্রতিরোধে রংপুর বিভাগে ৩০ লাখ টিকা সরবরাহ করবে এলআরআই *** ধনসম্পদের দেবী লক্ষ্মীর পূজা আজ *** শহিদুল আলমদের জাহাজের ওপর দিয়ে উড়ে গেল ‘ইসরায়েলি সামরিক বিমান’ *** ধর্ম অবমাননার বিরুদ্ধে আরও কঠোর আইন প্রয়োজন: ছাত্রশিবির *** ফেব্রুয়ারিতেই অমর একুশে বইমেলা চায় সাংস্কৃতিক ঐক্য *** দুই দশক পর গণমাধ্যমে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার *** দায়িত্ব ছাড়ার আগে উপদেষ্টাদের পাসপোর্ট জব্দ করা উচিত: মাসুদ কামাল *** ৬১ শতাংশ আমেরিকান ইহুদির বিশ্বাস ইসরায়েল ‘যুদ্ধাপরাধী’

দায়িত্ব ছাড়ার আগে উপদেষ্টাদের পাসপোর্ট জব্দ করা উচিত: মাসুদ কামাল

বিশেষ প্রতিবেদক

🕒 প্রকাশ: ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, ৫ই অক্টোবর ২০২৫

#

ছবি: সংগৃহীত

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় ২০২৪ সালের ২৫শে আগস্ট অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে প্রথম যে ভাষণ দেন, সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, শিগগিরই তার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা নিজের আয়-ব্যয় ও সম্পদের বিবরণী জনগণের সামনে প্রকাশ করবেন। পর্যায়ক্রমে এটি সব সরকারি কর্মকর্তার ক্ষেত্রেও নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক করা হবে।

তার ওই ভাষণের পর উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশে সরকার আলাদা একটি নীতিমালাও তৈরি করেছিল। কিন্তু সরকারের এক বছরের বেশি সময়ের পর এসে দেখা যাচ্ছে, উপদেষ্টাদের কারো আয় ও সম্পদের হিসাব জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। তা প্রকাশ করার কোনো উদ্যোগও আপাতত নেই বলে সরকারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র সুখবর ডটকমকে নিশ্চিত করেছে।

এর মধ্যেই কয়েক উপদেষ্টা, তাদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও চাঁদাবাজিতে সহযোগিতার একের পর এক সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠতে দেখা যাচ্ছে। যদিও উপদেষ্টারা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছেন। চলতি সপ্তাহে দুর্নীতির আরেকটি চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এসেছে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রতিবেদনে। যা দেশের প্রশাসনিক নৈতিকতার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে এবং সরকারকে আরো প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এতে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

অভিযোগটি হলো- একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮০ কোটি টাকার লেনদেন। যার অর্ধেক যাওয়ার কথা ছিল ‘একটি বিশেষ স্থানে’ এবং বাকি অংশ তৃতীয় পক্ষের হাতে। এই টাকার একাংশের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার নাম। যেখানে বর্তমানে অবস্থান করছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূস। ফলে যমুনাকে ঘিরেও নানামুখী আলোচনা চলছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাসুদ কামাল এসব প্রসঙ্গে বলেন, ‘জনদুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের দায়িত্ব ছাড়ার আগে তাদের পাসপোর্ট জব্দ করা জরুরি। তদন্তের আগে তাদের বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। এতে সন্দেহভাজনদের পালিয়ে যাওয়া রোধ হবে, স্বাধীন ও কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত হবে এবং জনগণের আস্থাও রক্ষিত থাকবে।’

আজ রোববার (৫ই অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেল কথা'য় প্রকাশিত এক ভিডিওতে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন।' এক পদে নিয়োগের দর ৮০ কোটি টাকা' শিরোনামে ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ভিডিওটি দেখা হয়েছে প্রায় ২৩ হাজার বার, এ সময়ের মধ্যে এতে মন্তব্য এসেছে ৪১১টি। অধিকাংশ মন্তব্যে বর্তমান সরকারের আমলে দুর্নীতি বেড়ে যাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নেটিজেনরা।

মাসুদ কামাল বলেন, দৈনিক মানবজমিনে ৪ঠা অক্টোবরের সংখ্যায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ‘প্রফেসর ইউনূস নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন’ শিরোনামে, এর শেষভাগে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। যা দেশের প্রশাসনিক নৈতিকতার ভিত্তিকে নাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছিল ৮০ কোটি টাকার লেনদেন। যার অর্ধেক যাওয়ার কথা ছিল ‘একটি বিশেষ স্থানে’ এবং বাকি অংশ তৃতীয় পক্ষের হাতে। এই বিশাল অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোনো কাজ করতে হতো না; শুধু বাণিজ্যিক কারসাজিতে সম্মতি জানালেই হতো।

প্রসঙ্গত, 'প্রফেসর ইউনূস নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন' শিরোনামে গতকাল শনিবার দৈনিক মানবজমিনের প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন। মানবজমিনের ওই প্রতিবেদন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর লেখা। পুরো প্রতিবেদনের কোথাও তথ্যের কোনো সূত্রের কথা উল্লেখ নেই। এর আগে প্রতিবেদনটি গত শুক্রবার মানবজমিনের অনলাইন সংস্করণে প্রচারিত হয়েছিল। তবে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদনটির বিষয়ে সরকারের কোনো সংস্থা থেকে ব্যাখ্যা, বা প্রতিবাদ আসেনি।

মতিউর রহমান চৌধুরীর প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট একটি পোস্ট লিখে শনিবার প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। এতে তিনি দাবি করেন, প্রফেসর ইউনূস নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙলেন শিরোনামে তিনি (মতিউর রহমান চৌধুরী) সূত্রহীন এক প্রতিবেদন লিখেছেন, যার প্রতিটি প্যারা তিনি সাজিয়েছেন ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে। ফেসবুক থেকে পাওয়া তথ্য দিয়ে কোনো প্রতিবেদন শুরু হলে সেটা সবসময় বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর ঝুঁকিতে থাকে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিদেশে কত টাকা পাচার করা হয়েছে এবং এর ফলে দেশের অর্থনীতি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরতে অন্তর্বর্তী সরকার যে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছিল, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সেটির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি সুখবর ডটকমকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের আমলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যেভাবে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে দেখা গেছে, সেটার বিপরীতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার নজির স্থাপন করার সুযোগ ছিল অধ্যাপক ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সামনে।

তিনি বলেন, অনেক প্রত্যাশা ছিল যে, বর্তমান সরকার একটা নতুন নজির স্থাপন করবে। কিন্তু দুঃখজনকভাবে সেটাও হয়নি। এসব বিষয়ে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও প্রাসঙ্গিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ব্যাখ্যা দেওয়া উচিৎ। বর্তমান সরকারের কোনো রাজনৈতিক ভিত্তি নেই, সেই অর্থে। তারা কোনো দলের থেকে আসেনি। সেজন্য তাদের নৈতিক ভিত্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিষয়গুলোকে সাধারণ সুশাসনের দৃষ্টি থেকে দেখছি না, আমি এটা দেখছি, একটা ভালো নির্বাচনের পূর্বশর্ত অনেকখানি দুর্বল করে ফেলছে- এ রকম একটা অবস্থার মধ্য দিয়ে।

যোগাযোগ করে বক্তব্য জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ সুখবর ডটকমকে বলেন, একের পর এক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। এসব ঘটনায় সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা কমছে। এখন যদি আস্থার সূচক দেখা যায়, তাহলে প্রথমদিকে সরকারের প্রতি মানুষের যে আস্থা ছিল, প্রত্যাশা ছিল, সেটি কীভাবে নেমেছে বোঝা যাবে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর সেগুলো খতিয়ে না দেখে যেভাবে অস্বীকার করা হচ্ছে, সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এই অর্থনীতিবিদ।

তিনি বলেন, আগের সরকারের মতো এই সরকারেরও অস্বীকারের প্রবণতা আছে, অস্বীকারের সংস্কৃতি আছে। তারা প্রশ্ন তোলা পছন্দ করে না। সমালোচনা করলে ট্যাগিং করতে চায়, যেটা হাসিনা সরকারের সময়ে দেখা যেত।

মাসুদ কামাল ভিডিওতে বলেন, মানবজমিনের ওই প্রতিবেদনে আরো ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, এই টাকার একাংশের সঙ্গে নাকি যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় অতিথিভবন যমুনার নাম। যেখানে বর্তমানে অবস্থান করছেন ড. ইউনূস। সরাসরি কিছু বলা না হলেও এই ইঙ্গিতই এখন নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। দুর্নীতির এই আলোচনায় কেন বা কিভাবে তার বাসভবনের নাম জড়াচ্ছে? এই দুর্নীতির প্রসঙ্গটি শুধু একটি রিপোর্টের অংশ নয় বরং এটি দেশের নীতি-নৈতিকতার এক গভীর সংকটের প্রতিচ্ছবি। ড. ইউনূস যেভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন, তার ঠিক উল্টো চিত্রই ফুটে উঠেছে প্রতিবেদনের এই অংশে।

মাসুদ কামাল উল্লেখ করেন, ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা হয়তো জানেন না, আজকাল আলোচনার টেবিলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। অর্থাৎ চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে বিভিন্ন মহলের আলোচনায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার নামও আসছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একটি সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদে নিয়োগের জন্য ৮০ কোটি টাকার লেনদেনের প্রস্তাব উঠেছিল। বলা হয়েছে, নিয়োগ সম্পন্ন হলে ৪০ কোটি টাকা যাবে একটি বিশেষ স্থানে, আর বাকি ৪০ কোটি পাবে তৃতীয় পক্ষ।

মাসুদ কামাল বলেন, ‘৮০ কোটি টাকার ওই দুর্নীতির প্রস্তাবের একাংশ একটি বিশেষ জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, যার সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার নামও যুক্ত হয়েছে। এখন প্রশ্ন উঠছে—যেখানে বর্তমানে প্রফেসর ইউনূস থাকেন, সেই বাসভবনের নামও যদি এই দুর্নীতির আলোচনায় আসে তবে কি তার সঙ্গে কোনোভাবে সংশ্লিষ্টতা আছে? প্রতিবেদনে সরাসরি কিছু না বললেও, ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে প্রফেসর ইউনূসের বাসভবনের নামও আজকাল দুর্নীতির প্রসঙ্গে উচ্চারিত হচ্ছে।’

তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছে তারা জনগণের অধিকারকেও নিলামে তুলছেন। গণ-অভ্যুত্থানের সুফল ভোগ করা উচিত ছিল সাধারণ জনগণের কিন্তু এখন তা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।

মাসুদ কামাল আরো বলেন, ‘আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার প্রতি অনুরোধ জানাই, এই সরকারের বিদায়ের পর যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের কর্মকাণ্ড তদন্ত করার আগে বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে। বিচারের প্রক্রিয়া অনুসারে দায়ীদের দায়মুক্ত করা বা শাস্তি প্রদান করা উচিত। যারা নির্দোষ প্রমাণ হবেন তাদের মুক্তি দেওয়া উচিত। দোষীরা যেন বিদেশ পালিয়ে যেতে না পারেন, প্রয়োজন হলে তাদের পাসপোর্ট জব্দসহ উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’

সাংবাদিক মাসুদ কামাল

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন

Footer Up 970x250