ছবি: সংগৃহীত
আমেরিকার সরকার নির্বাহী আদেশে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পণ্যের উপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করেছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ শুল্কারোপ করে। যা বাংলাদেশের বেলায় আগের ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৭ শতাংশ হয়েছে। অর্থাৎ, এক লাফে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে, বা বেড়েছে।
দেশীয় অর্থনীতিবিদ ও পোশাক খাতসংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, এতে দেশের অর্থনীতি বড় ধরনের চাপে পড়বে। তারা বলেছেন, আমেরিকার প্রশাসনের সঙ্গে টিকফা চুক্তির আলোকে আলোচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে।
বাংলাদেশ প্রতিবছর আমেরিকায় ৭০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের তৈরি পোশাক রপ্তানি করে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এ খাতে কাজ করেন ৪০ লাখের বেশি মানুষ, যাদের বেশিরভাগই নারী।
যেসব দেশে বেশিসংখ্যক নারী কর্মী রয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে একটি হলো বাংলাদেশ। নারীর কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ দেশকে দারিদ্র্যতা থেকে বের করে আনতে সাহায্য করেছে।
দেশে অনেক তৈরি পোশাক কারখানা আছে, যারা শুধু আমেরিকার বাজারে পণ্য সরবরাহ করে থাকে। অনেক কারখানা ৮০ শতাংশ, আবার অনেক কারখানা ১০০ শতাংশ পণ্য আমেরিকায় রপ্তানি করে। এসব কারখানা শুধু আমেরিকার ক্রয়াদেশ পাওয়ার জন্য বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে। ওই শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত এসব ব্যবসায়ীকে মারাত্মক বিপদে ফেলবে।
একটি দেশের অর্থনীতি কতটুকু রক্ষা পাবে, সেটা নির্ভর করে সে দেশের রপ্তানি কতটা বহুমুখীকরণ করতে পেরেছে, তার ওপর। বিভিন্ন কৌশলে ব্যবসার বহুমুখীকরণ করতে হয়। তবেই কোনো একটি দেশ শুল্ক আরোপ করলে সমস্যায় পড়তে হয় না। তখন কোনো দেশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করলে তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা শুল্ক বসানো সম্ভব হয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে চাইলেও হুট করে আমেরিকা থেকে পণ্য রপ্তানি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এ বাজার একদিনে তৈরি হয়নি, দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে একটা জায়গা তৈরি হয়েছে। দেশের রপ্তানির ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। পোষাক খাতের বড় বাজার হলো আমেরিকা। তাই চাইলেই পোশাক রপ্তানি অন্য কোনো দেশে স্থানান্তর করা সম্ভব নয়।
ইতোমধ্যে আমেরিকায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের নতুন প্রতিযোগী তৈরি হয়েছে। চীন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনামের পর হন্ডুরাস, মিসর ও তুরস্কের মতো দেশগুলো পোশাক রপ্তানিতে উঠে আসছে। নতুন এসব দেশে অর্ডার দেওয়া ও দেশগুলোতে শিল্পের অবস্থানের কারণে আমেরিকার জন্য আরো সহজ হবে।
ছোট দেশ হলেও অবস্থানের দিক থেকে আমেরিকার কাছের দেশ হন্ডুরাস। লোকেশনের সুবিধার জন্য তারা এসব সুবিধা পাবে। তুরস্ক ও মিসরও এ সুবিধা পাবে। যার ফলে এমনিতেই বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের একটা চাপ তৈরি হচ্ছে। বাংলাদেশ বহু বছর ধরে চেষ্টা করেও রপ্তানিতে কোনো বৈচিত্র্য আনতে পারেনি।
শুল্কারোপ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নির্বাহী আদেশে হয়েছে। এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব আমেরিকার বাণিজ্য দপ্তরকে দেওয়া হয়েছে। এতে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ ছাড়া এ সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
এখন বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। নতুবা তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার ভারত, তুরস্ক, মিসর ও হন্ডুরাসের মতো দেশগুলোতে চলে যেতে পারে। এমনটা ঘটলে বাংলাদেশের অর্থনীতির মারাত্মক বিপর্যয় ঘটবে।
এইচ.এস/
খবরটি শেয়ার করুন