ছবি: সংগৃহীত
মানবপাচারবিরোধী লড়াইয়ে ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের নাগরিক আল-আমিন নয়ন আমেরিকার টিআইপি হিরো হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
সোমবার (২৪শে জুন) আমেরিকার ওয়াশিংটনে মানবপাচার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। এরপর তিনি মানবপাচার বিষয়ক (ট্রাফিকিং ইন পারসনস বা টিআইপি) প্রতিবেদনটি প্রকাশ ও বক্তৃতা দেন। প্রতিবেদনটি প্রকাশের আগে ‘টিআইপি হিরো’ স্বীকৃতি পাওয়া ব্যক্তিদের সম্মাননা জানান তিনি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাপক নয়ন বিমানবন্দরে বিদেশ-ফেরত ও পাচারের শিকার মানুষদের সহায়তায় কাজ করেন। নয়ন ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় চলতি বছর আর কেউ এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার পাননি। বাংলাদেশ ছাড়াও কেনিয়া, মালি, ফিলিপাইন, সার্বিয়া, স্পেন, সুরিনাম, বলিভিয়া এবং ইরাকের একজন করে মোট নয়জন ২০২৪ সালে টিআইপি হিরোর স্বীকৃতি পেয়েছেন।
অনুষ্ঠানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, সারা বিশ্ব থেকে নির্বাচিত নয় টিআইপি হিরোকে ধন্যবাদ। আমাদের এই নায়করাই সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছেন।
পাচারের শিকার থেকে টিআইপি হিরো হিসেবে মর্যাদা পাওয়ার অনুভূতি প্রসঙ্গে আল-আমিন নয়ন বলেন, মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে আমি নিজে পাচারের শিকার হয়েছিলাম। পরে দেশে ফিরে অনিয়মিত অভিবাসন ও পাচারের শিকার মানুষের পাশে থাকার কাজে যুক্ত হই।
আরো পড়ুন: পদ্মা সেতু: দুই বছরে ১৬০০ কোটি টাকা টোল আদায়
ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার হিসেবে বিদেশ-ফেরত অসহায় মানুষ ও সারাদেশে পাচারের শিকার মানুষের কল্যাণে কাজ করার চেষ্টা করি। এই কাজ করতে গিয়ে বহুবার নানা বিপদে পড়তে হয়েছে। এমনকি জেলেও গিয়েছি। এই পুরস্কার আমাকে আরো বেশি করে মানুষের জন্য কাজ করতে উৎসাহিত করবে।
বিশ্বজুড়ে মানবপাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিবেদিতভাবে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের ২০০৪ সাল থেকে প্রতি বছর সম্মানিত করে আসছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। আমেরিকা এই পুরস্কারকে মানব পাচারবিরোধী লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় পুরস্কার হিসেবে ধরা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মানবাধিকারকর্মী নয়ন সম্পর্কে বলা হয়, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীরা কোনো বিপদে পড়লে সবার আগে ছুটে যান নয়ন। ২০০৭ সালে মালয়েশিয়ায় কাজ করতে গিয়ে পাচারের শিকার হওয়া নয়ন এখন বিদেশ-ফেরত মানুষকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখান। ব্র্যাকের মাইগ্রেশন ওয়েলফেয়ার সেন্টারের ম্যানেজার হিসেবে বিদেশ-ফেরত ও পাচারের শিকার অন্তত ৩৪ হাজার মানুষকে তিনি সহায়তা করেছেন।
২০১৭ সালে তিনি ব্র্যাক মাইগ্রেশন প্রোগ্রামে কাজ শুরু করেন নয়ন। এরপর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসীরা কোনো বিপদে পড়লেই ছুটে যান তিনি। কোনো নারী অথবা বিদেশ থেকে ফিরেছেন, বিমানবন্দর থেকে বাড়ি যেতে পারছেন না, হয়ত ফিরে আসা কোনো প্রবাসীর খাবার প্রয়োজন এমন কাজে ছুটে যান নয়ন। প্রবাসীদের কাছে তিনি স্রেফ ‘নয়ন ভাই’নামে পরিচিত।
এইচআ/