বুধবার, ২৩শে অক্টোবর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
৭ই কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যেভাবে কালোজিরা চাষ করলে অধিক ফলন মিলবে

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন, ২২শে অক্টোবর ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

কালোজিরা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কালোজিরাতে প্রায় শতাধিক পুষ্টি ও উপকারী উপাদান আছে। কালোজিরা আয়ুর্বেদীয়, ইউনানি, কবিরাজি ও লোকজ চিকিৎসায় বহুবিধ রোগ নিরাময়ের জন্য ব্যবহার হয়। 

শুকনা ও ঠাণ্ডা আবহাওয়া কালিজিরা আবাদে খুব অনুকূল। ফুল ফোটার সময় বৃষ্টি হলে কালিজিরার ফলন কমে যায়। ৩ থেকে ৪টি চাষ ও আড়াআড়ি মই দিয়ে মাটি ঝুরাঝুরা করে আগাছা পরিষ্কার করে জমি সমতল করে বীজ বপন করতে হয়। অল্প পরিমাণ এক বিঘা বা তার কম জমিতে চাষ করলে ৫ সেন্টিমিটার বা ২ ইঞ্চি উঁচু বেড তৈরি করা ভালো।

বপন : অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ বপন করা যায়। তবে নভেম্বর মাসের প্রথম-দ্বিতীয় সপ্তাহ বীজ বপন করার উত্তম সময়।  অগ্রহায়ণের শেষ থেকেই লাগানো যায়। বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকলে পৌষের প্রথমে লাগানো ভালো। সফলভাবে কালোজিরা উৎপাদনের জন্য ১৫x১০ সেন্টিমিটার দূরত্বে লাইনে বীজ বপন করলে ভালো হয়। ১-৪ ইঞ্চি গর্ত করে প্রতি গর্তে ২-৩টি করে বীজ পুঁততে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বীজ যেন বেশি গভীরে না যায়। বীজ বপনের আগে আলাদা করে শোধনের দরকার নেই। তবে বোনার আগে ভালো করে ধুয়ে ধুলাবালি ও চিটা বীজ সরিয়ে নেয়া ভালো। ভেজা বীজ বপন করা উচিত না। হেক্টরপ্রতি ৪ থেকে ৬ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।

সার প্রয়োগ : জমি তৈরি ও শেষ চাষের সময় প্রতি হেক্টরে পচা গোবর ৫ থেকে ১০ মেট্রিক টন, ইউরিয়া ৬৫ কেজি, টিএসপি ৯৫ থেকে ১০০ কেজি, এমওপি ৭৫ কেজি মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বীজ বপনের ৪০ দিন পর বাকি ইউরিয়া ৬৫কেজি উপরিপ্রয়োগ হিসেবে জমিতে মিশিয়ে দিতে হবে। কেউ কেউ ভালো ফলনের জন্য খৈল ব্যবহার করেন।

সেচ ও নিকাশ : সাধারণত সেচের প্রয়োজন নেই।  জমিতে রস না থাকলে বীজ বপনের পর হালকা সেচ দিতে হবে। তবে প্লাবন সেচ দিলে বীজ এক জায়গায় জমা হয়ে যেতে পারে। মাটির ধরন আর বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে পুরো জীবনকালে ২-৩ বার সেচ দিতে হবে। কোনো কারণে জমিতে পানি জমলে দ্রুত নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

পরিচর্যা : বীজ লাগানোর পরই হালকা করে মাটি দিয়ে গর্ত ঢেকে দিতে হবে। পাখিতে বীজ খেতে না পারে, সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া প্রয়োজন হলে আগাছা পরিষ্কার, গাছ পাতলাকরণ কাজগুলো নিয়মিত ও পরিমিতভাবে করতে হবে।

জীবনকাল : বীজ বপনের পর সর্বমোট ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনে গাছ হলদে বর্ণ ধারণ করে মরে যায়। ১৫-২০ সপ্তাহের মধ্যে ফসল পাকবে ও তোলার সময় হবে অর্থাৎ পৌষের প্রথমে চাষ করলে চৈত্রে ফসল তোলা যাবে।

আরও পড়ুন: ড্রাগন চাষ করে সফল কুড়িগ্রামের খোরশেদ আলম

বালাই ব্যবস্থাপনা : কালোজিরা সহজে তেমন কোনো পোকামাকড়ে আক্রান্ত করে না। বরং এর স্বাভাবিক পোকামাকড় ধ্বংসের ক্ষমতা আছে। সে রকম রোগবালাইও তেমন হয় না। মাঝে মাঝে কিছু ছত্রাক আক্রমণ দেখা দিলে রিডোমিল গোল্ড বা ডাইথেন এম ৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ২-৩ বার ১০ দিন পরপর ছিটিয়ে দিতে হবে।

ফসল সংগ্রহ ও ফলন : ১ বিঘা জমিতে চাষ করলে গড়ে ৯০ থেকে ১১০ কেজি কালোজিরা পাওয়া যাবে। একরপ্রতি ৩০০ কেজি থেকে ৩৩০-৩৪০ কেজি পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়। বারি কালোজিরা-১ সঠিক পরিচর্যায় হেক্টরপ্রতি ১ মেট্রিক টন পর্যন্ত ফলন দেয়। ফাল্গুন-চৈত্রে গাছ মরে গেলে গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করে ২ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে হাতে সাবধানে আঘাত করে মাড়াই করে বা লাঠি দিয়ে বীজ সংগ্রহ করা যায়। গাছে সামান্য রস থাকতেই ফল সংগ্রহ করা উচিত, তা নাহলে বীজ জমিতে ঝরে পড়তে পারে। বীজ রোদে শুকিয়ে ঠাণ্ডা করে কুলা দিয়ে পরিষ্কার করে চটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে বীজ সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে অন্তত এক বছর পর্যন্ত বীজ ভালোভাবে সংরক্ষণ করা যায়। মানসম্মত বীজ সংরক্ষণে পাত্র শুকনো, ঠাণ্ডা, অন্ধকার জায়গায় রাখতে হবে।

এসি/  আই.কে.জে

কালোজিরা

খবরটি শেয়ার করুন