মঙ্গলবার, ১৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বই সংকটে ব্যাহত লেখাপড়া, দ্রুত মিলবে কি সমাধান?

উপ-সম্পাদকীয়

🕒 প্রকাশ: ০১:৪৭ অপরাহ্ন, ২৯শে জানুয়ারী ২০২৫

#

ছবি - সংগৃহীত

বই নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চলছে রীতিমতো হাহাকার। এরই মধ্যে নতুন বছরের প্রায় এক মাস হয়ে  গেলেও বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাও অনেকটা বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে  অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বছর শুরু হওয়ার অনেক আগেই এক বছরের শিক্ষাপঞ্জি প্রকাশ করে। এতে এক বছরে মোট কত দিন ক্লাস হবে, কবে পরীক্ষা নেয়া হবে—এসব বিষয়ের উল্লেখ থাকে। যেসব স্কুল শিক্ষাপঞ্জির বাইরে আরো কিছু ক্লাস ও পরীক্ষা নেয়, তারাও বছরের শুরুতে সেটা ঠিক করে দেয়। কিন্তু ২০২৫ শিক্ষাবর্ষ শুরু হলেও এবার এখনো বেশির ভাগ শিক্ষার্থী পাঠ্যবই হাতে পায়নি। যার কারণে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

আগের বছরগুলোতে প্রথম দিন বই উৎসব করা হলেও সব বই পেতে ফেব্রুয়ারি মাস লেগে যেত। তবে নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে অন্তত ৮০ শতাংশ বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে যেতো। কিন্তু এ বছর এখন পর্যন্ত প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির বেশির ভাগ শিক্ষার্থী বই পেলেও চতুর্থ থেকে দশম শ্রেণির  শিক্ষার্থীরা মাত্র তিনটি পর্যন্ত বই পেয়েছে। কিছু স্কুলের অনেক শিক্ষার্থী সেটাও পায়নি।

জাতীয় শিক্ষাক্রম  ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্য মতে, এবার প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন। তাদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই। প্রাথমিকের দুই কোটি ৯ লাখ ৪৪ হাজার ৪৭৯ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৫৪ হাজার ৩৫৫ কপি। মাধ্যমিক পর্যায়ের দুই কোটি ২৪ লাখ ৫৮ হাজার ৮০৪ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপানো হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ বই। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই ছাপা হচ্ছে। শিক্ষকদের জন্য প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপা হওয়ার কথা রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই না পাওয়ায় অনেকের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ কমেছে। ফলে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কমে গেছে। শিক্ষকদের বই ডাউনলোড করে পড়াতে বলা হলেও শিক্ষার্থীদের হাতে কপি না থাকায় তাতে কারো আগ্রহ তৈরি হচ্ছে না। এতে স্কুলগুলোতে মাত্র দু-একটি ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষকরা গল্পগুজব করে চলে যাচ্ছেন। আবার যে সমস্ত শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসে তাদের বেশির ভাগই  স্কুলে খেলাধুলা করে চলে যায়।

করোনা ভাইরাসের কারণে শিক্ষার্থীরা দুই বছর (২০২০-২১) ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেনি। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সাল ছিল নতুন শিক্ষাক্রম, যেখানে তেমনভাবে পড়ালেখা ছিল না। এখন আবার শিক্ষার্থীরা বছরের শুরুতে বই না পেয়ে নতুন সমস্যায় পড়েছে। বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই সময়ে একটি প্রজন্ম সঠিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রাইভেট-কোচিংয়ের পেছনে ছুটছে। যদিও সে সংখ্যাটি খুব কম। কারণ দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই কোচিং করার সুযোগ পায় না। সেসব শিক্ষার্থী উপযুক্ত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে বই সংকটে গোটা শিক্ষা কার্যক্রমই ব্যাহত হচ্ছে।

আই.কে.জে/    

বই সংকট

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন