প্রতীকী ছবি
প্রাচীন ইতিহাসে অসংখ্য নারী চরিত্রের মধ্যে রয়েছেন রহস্যময়ী সুন্দরী এই রানী। তার নাম ছড়িয়ে আছে ধর্মগ্রন্থ থেকে লোকগাঁথায়। তার রাজত্ব যেন ক্ষমতা আর প্রজ্ঞার প্রতিমূর্তি। কোরআন, বাইবেল ও ইহুদিদের তানাখসহ—প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থেই এই রানীর কাহিনী ঘুরে ফিরে এসেছে। তার ক্ষমতা, বুদ্ধিমত্তা সবকিছুই যেন এক রহস্যের জাল। তিনি শুধু একজন শাসক ছিলেন না, ছিলেন বুদ্ধিমতী আর শক্তির প্রতীক।
এ গল্পটি রানী বিলকিসের, যাকে কেউ বলেন ইয়েমেনের শাসক, আবার কেউ মনে করেন তিনি ইথিওপিয়ার রানী। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাসবিদদের মধ্যে তার রাজ্যের অবস্থান নিয়ে বিতর্ক চলেছে, তবে তার প্রজ্ঞা আর কৌশল সবসময়ই প্রশংসিত।
পবিত্র কোরআনের ২৭ নম্বর সূরা আন-নামল-এ নবী সুলায়মান (আ.) এবং বিলকিসের ঘটনা আল্লাহ তায়ালা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেছেন। সুলায়মান (আ.) তার দরবারের হুদহুদ নামক এক পাখির মাধ্যমে বিলকিসের রাজ্যের খবর পান। জানা যায়, তার রাজ্য ছিল ধন-সম্পদে সমৃদ্ধ, কিন্তু তারা সূর্য পূজা করত। সুলায়মান (আ.) এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের বার্তা পাঠান রানীর কাছে। রানী বিলকিস সেই বার্তা পেয়ে সুলায়মানের প্রজ্ঞা ও ক্ষমতা যাচাই করতে আসেন তার দরবারে।
বলা হয়ে থাকে তিনি শুধু সুলায়মান (আ.) কে পরীক্ষা করতেই যাননি, বরং তার সঙ্গে সোনা, মশলা, মূল্যবান পাথরসহ অমূল্য উপহারও নিয়ে গিয়েছিলেন। এই উপহারগুলো কেবল প্রতীকী নয়, বরং ছিল তার গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন। রানী তার কঠিন প্রশ্নগুলো দিয়ে সুলায়মানের জ্ঞান পরীক্ষা করেছিলেন, এবং সুলায়মান (আ.) সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেন। এতে রানী মুগ্ধ হয়ে সুলায়মানের প্রজ্ঞাকে স্বীকার করেন এবং ইসলামের প্রতি তার বিশ্বাস স্থাপন করেন।
ইহুদি ধর্মগ্রন্থ তারগুম শেনিতে বলা আছে রাজা সুলাইমান পশুপাখির ভাষা বুঝতে পারতেন। একদিন বনমোরগ জাতের একটি পাখি এসে জানায়, পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাবান ব্যক্তি আসলে রাজা সুলাইমান নন, বরং বিলকিস রানী। সুলাইমান (আ.) এই কথা শুনে বিলকিস রানীকে আমন্ত্রণ জানান, এবং সেই মুহূর্তে রাজা সুলাইমান তার ক্ষমতার পরিচয় দিতে শুরু করেন। এই গল্পটি বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন সংস্করণে বর্ণিত হয়েছে, যার মধ্যে রাজা সুলাইমান (আ.) জ্ঞান এবং রানীর বিচক্ষণতা নিয়ে আলোচনা বেশি পাওয়া যায়।
ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলাম ধর্মে রানী বিলকিসের কাহিনী প্রায় একইরকম। তবে ইথিওপিয়ার ‘কাবরা নাগাস্ট’ গ্রন্থে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের কথাও বলা হয়েছে। ঐতিহ্য অনুযায়ী, তাদের সন্তান মেনেলিক ইথিওপিয়ার প্রথম রাজা হয়েছিলেন, এবং রানী বিলকিস ইথিওপিয়ার গর্বিত পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত হন। আজও ইথিওপিয়ার মানুষ তাকে জাতীয় ইতিহাসের অংশ হিসেবে গর্বের সাথে স্মরণ করে।
রানী বিলকিসের এই গল্প শুধু প্রাচীন ধর্মগ্রন্থে স্থান পায়নি, বরং শতাব্দী পেরিয়েও বেঁচে আছে মানুষের মনের কোণে। তার প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা এবং ক্ষমতার এই গল্প হয়তো ভবিষ্যতে আরও শতাব্দী ধরে মানুষকে মুগ্ধ করে যাবে।
ওআ/ আই.কে.জে/