শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টেকসই না হওয়ায় গোটা বিশ্বে কমছে চীনা অস্ত্র বিক্রি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:২৩ অপরাহ্ন, ২০শে এপ্রিল ২০২৪

#

ছবি: সংগৃহীত

চীনা খেলনার মতোই চীনা অস্ত্রও মোটেই টেকসই নয়। অত্যন্ত নিম্নমানের কারণে গোটা বিশ্বেই চীনা অস্ত্রের কদর কমছে। নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকেই ক্রেতা দেশগুলি বুঝেছে, দাম কম হলেও চীনা প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বর্তমানে অচল। বরং নিরাপত্তার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে চীনা অস্ত্র। তাই দিন দিন কমছে চীনের তৈরি অস্ত্রের রপ্তানি। বেশিরভাগ দেশই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে চীন থেকে। পশ্চিমাদের তুলনায় কমিউনিস্ট দেশটির অস্ত্রের দাম অনেক কম। তাই সহজেই অনেক দেশই আকৃষ্ট হয়েছিল। চীনের অস্ত্রের বাজারও বেড়েছিল বহরে। কিন্তু কেনার পর প্রতিটি দেশেরই অভিজ্ঞতা ভালো নয়। রক্ষণাবেক্ষণে ব্যয় হচ্ছে প্রচুর অর্থ। অস্ত্রের সার্ভিসিংও চীনা সংস্থাগুলির মোটেই ভালো নয়। যন্ত্রাংশও মেলে না সহজে। সব মিলিয়ে আপাত দৃষ্টিতে দাম কম হলেও খরচ বেশিই পড়ছে চীনা সমরাস্ত্রে। সেইসঙ্গে বাড়ছে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ঝুঁকির পরিমাণ।

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানকে সাহায্য করেছিল চীন। আমেরিকার সঙ্গে তারাও হাত মিলিয়েছিল অগণিত বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাদের মদদ জোগাতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বেঁচে থাকতে তারা বাংলাদেশের স্বীকৃতিটুকুও দেয়নি। বিরোধিতা করেছে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার। বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পরই বেজিং ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে। সেই চীন এখন বাংলাদেশের বন্ধু সাজতে চাইছে। মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব কিছুতেই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ভারতের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটাতে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করতে চাইছে চীন। বন্ধুত্বের মুখোশের আড়ালে বেজিংয়ের রয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক স্বার্থ। বাংলাদেশের বাজার দখল করতে চায় তারা। সেইসঙ্গে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো বাংলাদেশেও তারা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে চায়।  

আন্তর্জাতিক বাজারে চীনের অস্ত্র বিক্রি মারাত্মকভাবে কমছে। গত এক দশকে অন্তত ২৫ শতাংশ কমেছে তাদের অস্ত্র রপ্তানি। বেশিরভাগ দেশই চীন থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ চীনা অস্ত্রের গুণগত মান অতি নিকৃষ্ট। চীনের তৈরি যুদ্ধাস্ত্র প্রয়োজনের সময় কাজ করে না। অস্ত্রগুলি কার্যক্ষম থাকেও কম সময়। তাছাড়া রক্ষণাবেক্ষণের খরচও অনেক বেশি। তাই গুণগত মান খারাপ হওয়ায় বিভিন্ন দেশ চীনা অস্ত্র পরিত্যাগ করছে। 

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা ডিরেক্টাস তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, গত এক দশকে চীনের অস্ত্র রপ্তানি কমেছে এক-চতুর্থাংশেরও বেশি। অস্ত্রের গুণগত মানকেই তারা এর জন্য দায়ী করেছে। এক সময় যুক্তরাষ্ট্র-সহ পশ্চিমাদের কাছে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের কারণ হয়ে উঠেছিল চীন। বিভিন্ন দেশে অস্ত্র রপ্তানিতে পশ্চিমাদের বাজার দখল করে নিয়েছিল কমিউনিস্ট শাসিত দেশটি। কারণ তাদের তৈরি অস্ত্রের দাম অনেক কম। সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার নামে ছিল চীনা ফাঁদ। 

কিন্তু কিছুদিন পরেই ধরা পড়ে চীনা অস্ত্রের সার্বিক দুর্বলতা। বহু যুগ আগের প্রযুক্তিতে তৈরি চীনা অস্ত্রগুলি মোটেই বর্তমান সময়ের উপযুক্ত নয়। বেশিরভাগ অস্ত্রের আয়ুও অনেক কম। আধুনিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম অনেকটাই বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কারের ওপর নির্ভর করে তৈরি। কিন্তু চীনারা সেই মান্ধাতার আমলের প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের দেশের বাতিল অস্ত্রশস্ত্র বিদেশে রপ্তানি করছে। 

সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের প্রতিবেদনেও উঠে এসেছে চীনের অস্ত্র ব্যবসায় মন্দার কথা। বিভিন্ন দেশ চীন থেকে অস্ত্র কেনা কমিয়ে ফেলায় গত ৫ বছরে তাদের অস্ত্র বিক্রি কমেছে ৭ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্বের ৫৩টি দেশ চীন থেকে অস্ত্র কেনে। এদের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। চীনা অস্ত্রের আকর্ষণের কারণটিই হচ্ছে দাম কম। কিন্তু কথায় আছে সস্তার তিন অবস্থা! বুঝতে পেরেই বিশ্ববাজারে চীনা অস্ত্রের শেয়ার মারাত্মক হারে কমছে। গত এক বছরে গোটা দুনিয়ার অস্ত্রবাজারে চীনাদের শেয়ার ৫ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। পয়সা দিয়ে কেউ আর বাজে মাল কিনতে চাইছে না। বিশেষ করে দেশের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে ঝুঁকি নিতে চায় না কোনও দেশ।

আই.কে.জে/

চীনা অস্ত্র বিক্রি

খবরটি শেয়ার করুন