ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
সরকারিভাবে বেশ কয়েক বছর ধরে গ্যাসের নতুন সংযোগ দেয়া বন্ধ রয়েছে। কিন্তু তারপরও বেড়েই চলেছে অবৈধ সংযোগের ছড়াছড়ি। অনুমোদনহীন এই সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেও প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। গত চার মাসে তিতাসের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ করা হয়েছে ২০ হাজারের বেশি অবৈধ সংযোগ। তিতাস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও কোম্পানির নিজস্ব জনবল দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ কেরানীগঞ্জ, সাভার, টঙ্গী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও ময়মনসিংহ এলাকায় এই অভিযান চালানো হয়েছে। অভিযানে ১৪৫টি শিল্প কারখানা, ৯০টি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ২০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিছিন্ন করা হয়েছে। অভিযানে ৯২ কিলোমিটার গ্যাস লাইন অপসারণ করা হয়। এই তদারকি শুধু মাস কিংবা বছরে একবার করলেই হবে না, নিয়মিত চলমান রাখতে হবে। জড়িতদের কঠিন শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা করতে হবে।
অবৈধ গ্যাস সংযোগের ফলে সরকার বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। একইভাবে অবৈধ বিদ্যুৎ-পানি সংযোগের ক্ষেত্রেও অভিযোগ রয়েছে।
তিতাস গ্যাসের আওতাধীন এলাকায় গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত রাখায় গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বিপুল অর্থনৈতিক সাশ্রয় হয়েছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে গত আগস্ট পর্যন্ত গ্যাসের বকেয়া বিল দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে পাওনা ১৯ হাজার কোটি টাকার বেশি। সরকারি সার কারখানায় গ্যাস বিল পাওনা ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। তবে শিল্প খাতে গ্যাসের দাম বেশি, পাওনা আদায়ের হারও বেশি। এসব কারণে এমনিতেই গ্যাসের চাহিদার তুলনায় জোগানের সংকট চলছে।
আরো পড়ুন : আমেরিকায় গ্রিন কার্ডের আবেদনে করোনা টিকার সনদ লাগবে না
খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় বলেছে, চলতি বছরের মধ্যে ৩৫টি কূপ খনন করা হবে। এর মধ্যে ১১টি কূপ খনন করবে বাপেক্স, বাকি ২৪টি উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কাজ দেয়া হবে। এখন থেকে জি টু জির ভিত্তিতে করা হবে না, উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে করা হবে। ফলে সবার জন্য সুযোগ থাকবে। এছাড়াও ২০২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খনন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব করা হলে গ্যাস সংকট অনেকটাই কেটে যাবে।
বাংলাদেশে গ্যাস বিতরণ সংস্থা ৬টি। এর মধ্যে ৫৫ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ করে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। এই প্রতিষ্ঠান ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গ্যাস সরবরাহ করে।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ২২ থেকে ২৪ লাখ লোক চাকরির বাজারে প্রবেশ করছে। এছাড়া অনেক কর্মজীবী নানা প্রতিকূলতার কারণে চাকরি হারিয়ে কিংবা কৃষি খাত থেকে বিচ্যুত হয়ে বেকার জীবন-যাপনে বাধ্য হন। তারা কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে শিল্প খাতের ওপর নির্ভরশীল হন। আর শিল্পের মূল উপাদান হলো তেল, গ্যাস ও বিদ্যুৎ। তাই এগুলোতে সমস্যা হলে দেশে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন বাধাগ্রস্ত হয়। আর উৎপাদন যদি কম হয়, তাহলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক।
গ্যাস ও জ্বালানি সংকট নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও মনোযোগী হতে হবে। অবৈধ গ্যাস সংযোগ ছড়াছড়ি বন্ধ করতে হবে। নিয়মিত তদারকি করতে হবে। দেশের শিল্প খাতে যাতে কোনোভাবে জ্বালানি ও গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে গ্যাসের অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পাশাপাশি নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
এস/ আই.কে.জে