প্রাডার মডেলের পায়ে ভারতীয় কলাপুরি নকশার স্যান্ডেল। ছবি: সংগৃহীত
ইতালিয়ান বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রাডা সম্প্রতি তাদের নতুন কিছু স্যান্ডেলের নকশায় ভারতের ঐতিহ্যবাহী ছাপ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছে। মিলান ফ্যাশন সপ্তাহে প্রদর্শিত প্রাডার একটি স্যান্ডেল মডেলের খোলা আঙুল ও বোনা চামড়ার ডিজাইন ভারতের মহারাষ্ট্র ও কর্ণাটকে প্রচলিত প্রথাগত ‘কলাপুরি’ স্যান্ডেলের সঙ্গে মিল রয়েছে বলে অনেকেই দাবি তুলেছিলেন।
বিবিসি জানিয়েছে, প্রাথমিকভাবে ওই স্যান্ডেলটিকে শুধু চামড়ার জুতা হিসেবে উল্লেখ করেছিল প্রাডা। তবে ভারতীয় উৎসের কথা বাদ পড়ায় সামাজিক মাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং বিষয়টিকে ‘সাংস্কৃতিক লুণ্ঠন’ হিসেবে সমালোচনা করা হয়।
এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার পর বিবৃতি দিতে বাধ্য হয় প্রাডা। বিবৃতিতে তারা বলে, তাদের ওই স্যান্ডেলের ডিজাইনটি ভারতীয় ঐতিহ্যবাহী জুতার দ্বারা অনুপ্রাণিত। ব্র্যান্ডটি আরও জানায়—তারা কারুশিল্প, ঐতিহ্য ও নকশার চর্চাকে সবসময় গুরুত্ব দেয় এবং বর্তমানে ভারতের মহারাষ্ট্র চেম্বার অব কমার্স, ইন্ডাস্ট্রি ও এগ্রিকালচারের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রাখছে।
মহারাষ্ট্রের ওই শিল্প সংগঠনের প্রধান ব্র্যান্ডটিকে একটি চিঠি দিয়ে জানান, স্থানীয় কারিগরদের অবদান স্বীকার না করেই এ ডিজাইন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রাডার কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি প্রধান লরেঞ্জো বার্তেল্লি চিঠির উত্তরে জানান, এ স্যান্ডেল এখনো ডিজাইনের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং তারা ভারতীয় কারিগরদের সঙ্গে অর্থবহ সংলাপে আগ্রহী।
কলাপুরি স্যান্ডেলের উৎপত্তি ১২শ শতাব্দীতে। ২০১৯ সালে এ নকশাটি ভারতের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি পায়। চামড়ায় তৈরি, হাতে বানানো এ স্যান্ডেল গরম আবহাওয়ায় টেকসই ও আরামদায়ক হিসেবে পরিচিত।
এদিকে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী স্যান্ডেল নিয়ে বিতর্কের খবর পৌঁছে গেছে কলাপুরি কারিগরদের কাছেও। কলাপুরি কারিগর প্রভা সাতপুতে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এ স্যান্ডেল আমাদের ঘাম আর শ্রমে তৈরি হয়। এগুলোর নাম হোক কলাপুরি। অন্যের শ্রমের সুবিধা কেউ না নিক।’
বিবিসির তথ্য অনুযায়ী, ভারতে একজোড়া কলাপুরি স্যান্ডেলের দাম মাত্র কয়েক শ রুপি হলেও প্রাডার ওই ধরনের জুতা ব্রিটেনে ১ হাজার পাউন্ডেও বিক্রি হয় (বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা)। এ ব্যাপারে শিল্পপতি হর্ষ গোয়েঙ্কা মন্তব্য করেন, ‘স্থানীয় কারিগররা উপার্জন করতে পারেন না, অথচ বৈশ্বিক ব্র্যান্ডগুলো আমাদের সংস্কৃতি দিয়ে মুনাফা করে।’
খবরটি শেয়ার করুন