ফাইল ছবি (সংগৃহীত)
মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান মিন অং হ্লাইং গত শনিবার (৩০শে আগস্ট) চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মূলত, চীন-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় স্থানীয় জাতিগত বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে মাধ্যমে জান্তা সরকারকে সহায়তা করায় এই ধন্যবাদ জানান তিনি।
থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতীর এক খবরে বলা হয়েছে, এক ভিডিওতে মিন অং হ্লাইংকে বলতে শোনা যায়, ‘উত্তর মিয়ানমারের উন্নয়নের জন্য সীমান্তবর্তী এলাকায় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে চীনের প্রচেষ্টার কারণে যে শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।’
মিন অং হ্লাইং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থার (এসসিও) শীর্ষ সম্মেলনে অংশ তিনে চীন সফর করেন কিছুদিন আগেই। চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাকে এই সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। গত ৩০শে আগস্ট তিয়ানজিন শহরে তিয়ানজিন গেস্ট হাউসে সি’র সঙ্গে বৈঠক করেন মিন।
জান্তা সরকার প্রধানের এই বক্তব্য মিয়ানমার শাসকদল বা চীন সরকারের অফিশিয়াল কোনো বিবৃতিতে আসেনি। তবে ভিডিওটি জান্তাপন্থী একটি সংবাদমাধ্যম পোস্ট করেছে। এই সংবাদমাধ্যমটির সাংবাদিকেরা মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে চীন সফরে ছিলেন।
চীন সাধারণত নিজেকে মিয়ানমারের বিষয়ে নিরপেক্ষ মধ্যস্থতা প্রদানকারী হিসেবে উপস্থাপন করে। বিশেষ করে, সীমান্ত স্থিতিশীলতা, সংলাপ ও শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে জোর দেয়। কিন্তু ভিডিওটি নিশ্চিত করে যে, চীন সত্যিই উত্তরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে মিয়ানমারের শান রাজ্যে তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর যৌথ অভিযান ‘অপারেশন-১০২৭’ এর সময় জান্তা বাহিনী পরাজিত হয়। এই সময় জান্তাবাহিনী চীনা সীমান্ত থেকে দেশের অভ্যন্তরের মান্দালয় কাছে কেন্দ্রীয় মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত ভূমির নিয়ন্ত্রণ হারায়। এমনকি শান রাজ্যের রাজধানী লাশিও এবং মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর নর্থইস্টার্ন রিজিওনাল কমান্ড সেন্টারের নিয়ন্ত্রণও নেয় বিদ্রোহীরা।
এরপর চীন সংশ্লিষ্ট এথনিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে শান্তিচুক্তি করতে চাপ দিতে শুরু করে। ২০২৪ সালের আগস্টে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই নেপিদো সফরের পর, জান্তাবাহিনী বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় বিমান হামলা বৃদ্ধি করে এবং চীন মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), তা’আং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মিসহ (টিএনএলএ) অন্যান্য গোষ্ঠীর ওপর চাপ প্রয়োগ করে যুদ্ধ বন্ধে বাধ্য করে।
গত বছরের নভেম্বরে কূটনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে চীনের আমন্ত্রণে মিন অং হ্লাইং প্রথমবারের মতো চীন সফর করেন। মিন অং হ্লাইংয়ের সর্বশেষ চীন সফরের আগে, মিয়ানমারের সবচেয়ে শক্তিশালী এথনিক সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মি এমএনডিএএ, টিএনএলএ ও শান স্টেট প্রোগ্রেস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করে ঘোষণা করে যে, চীনের তীব্র চাপের কারণে তারা আর অস্ত্র সহায়তা দিতে পারবে না। এই প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষকেরা বলেন, মিন অং হ্লাইংয়ের সি চিনপিংকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানানোর বিষয়টি অবাক করার মতো কিছু নয়।
শনিবারের বৈঠকে, মিন অং হ্লাইং ও সি চিনপিং মিয়ানমারের ‘শান্তি প্রক্রিয়া’, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) ও চায়না-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডর (সিএমইসি) প্রকল্প ত্বরান্বিত করা এবং জান্তার পরিকল্পিত নির্বাচনের জন্য চীনের সমর্থন নিয়ে আলোচনা করেছেন। সি বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা এবং মিয়ানমারের আন্তর্জাতিক মান-সম্মান ও আঞ্চলিক সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে সমর্থন জানিয়েছেন।
চীনের পক্ষ থেকে যেমন চীন-মিয়ানমার সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার যৌথ প্রচেষ্টা এবং চীনা কর্মী, প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করা হয়েছে। তেমনি, বিপরীতে মিন অং হ্লাইং ‘ওয়ান চায়না’ নীতিতে মিয়ানমারের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনঃনিশ্চিত করেছেন এবং বিআরআই প্রকল্পগুলোতে যৌথ উন্নয়নের অঙ্গীকার করেছেন।
সফরে মিন অং হ্লাইং চীনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দেখা করেছেন। তিনি তাদের মিয়ানমারে বাণিজ্য, অবকাঠামো, বৈদ্যুতিক যানবাহন, খনিজ, শক্তি ও প্রাকৃতিক গ্যাস উৎপাদনে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এরপর, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়, যা তথ্য বিনিময়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং শুল্ক নীতির মতো ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
খবরটি শেয়ার করুন