ছবি: সংগৃহীত
হরিয়ানার ছোট্ট গ্রামে বেড়ে ওঠা জয়দীপ আহলাওয়াত আজ বলিউডে শক্তিশালী চরিত্রাভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তার জীবনকথা যেন রূপকথার মতো; গ্রামের সাধারণ এক তরুণ যেখানে হয়ে উঠেছেন হিন্দি সিনেমার আলোচিত অভিনেতাদের একজন।
অভিনেতা হওয়ার আগে জয়দীপের জীবন ছিল একেবারে সাধারণ। গরুর গোবর সংগ্রহ, গরুর লেজ ধরে সাঁতার শেখা—সবই ছিল তার শৈশবের অংশ। তিনি নিজেই বলেছেন, গ্রামের সেই দিনগুলো তাকে বাস্তবের সঙ্গে যুক্ত রেখেছে। হয়তো সেই অভিজ্ঞতাই তাকে পর্দায় এত বাস্তব করে তোলে। তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, মাসালাডটকম।
অভিনেতা হওয়ার জন্য যখন তিনি মুম্বাই আসেন, তখন শুরু হয় দীর্ঘ সংগ্রাম। এক বিএইচকে ফ্ল্যাটে ছয়জন বন্ধু মিলে থাকতেন। কাপড়ের স্তূপের মধ্যে, ছোট্ট ঘরে একসঙ্গে ঘুম, রান্না আর আড্ডা—তাদের দিন কেটেছে কঠিন অথচ আনন্দে ভরা।
প্রায় ১৫ বছর ভাড়াবাড়ির জীবনের পর জয়দীপ নিজের একটি ফ্ল্যাট কেনেন। কিন্তু সেখানেও মন ভরেনি। তার মতে, মানুষ কখনো সন্তুষ্ট থাকে না—এটাই স্বাভাবিক।
তবে সাফল্যকে তিনি বিলাসবহুল বাড়ি বা গাড়ির মাধ্যমে মাপেন না। তার ভাষায়, ‘প্রকৃত সাফল্য হলো টেবিলে তিন বেলা খাবার তুলে দিতে পারা।’ এই সংজ্ঞাই তাকে আলাদা করে দেয় বলিউডের অনেক সহকর্মীর থেকে।
অভিনেতা হিসেবে জয়দীপ প্রথম নজরে পড়েছিলেন প্রিয়দর্শন পরিচালিত ‘খাট্টা মিঠা’ ছবিতে। পরে অনুরাগ কাশ্যপের সঙ্গে ‘গ্যাংস অব ওয়াসেপুর’, ‘সন্দীপ অউর পিংকি ফারার’, ‘থ্রি অব আস’, ‘জানে জা’ দিয়ে অভিনেতা হিসেবে আলোচনায় চলে আসেন।
২০২০ সালে ‘পাতাল লোক’ ওয়েব সিরিজে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই তিনি দর্শকের নজরে আসেন। চরিত্রের গভীরতা আর অভিনয়ের শক্তি তাকে এক লাফে জনপ্রিয় করে তোলে। তারপর থেকে তিনি কেবল চরিত্রাভিনেতা নন—বরং গল্প একা কাধে টেনে নিয়ে যেতে পারেন এমন শক্তিশালী এক অভিনেতা।
শাহরুখ খানের নতুন ছবি ‘কিং’-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছেন জয়দীপ। এটি তার ক্যারিয়ারে নতুন অধ্যায় খুলে দিয়েছে। যিনি একসময় গোবর হাতে তুলতেন, তিনি এখন শাহরুখের সঙ্গে পর্দা ভাগাভাগি করেছেন; এটা যেন এক স্বপ্নপূরণের গল্প।
শৈশবে ছিল অভাব। বছরে এক জোড়া জুতার বেশি কেনার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। দীর্ঘ ১৫ বছর মুম্বাইয়ের এক সাধারণ ফ্ল্যাটে কাটিয়েছেন তিনি। অবশেষে স্বপ্নের বাড়ি কিনতে পেরেছেন, তবে তাতেও মন ভরেনি। আহলাওয়াত বলেন, ‘বাড়ি কেনার পর মনে হলো, পরেরবার আরও বড় বাড়ি কিনব। এটাই মানুষের স্বভাব—যা পাই, তাতে কখনোই পুরোপুরি সন্তুষ্ট থাকি না।'
টাকা নিয়ে তিনি সরলভাবে বলেন, ‘আমার মনে হয় টাকা গুরুত্বপূর্ণ। এটা আত্মবিশ্বাস দেয়। একবার অর্থ আসা শুরু হলে কাজের ক্ষেত্রে আরও স্বাধীনতা পাওয়া যায়। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবে যদি আমি জানি আমার পরিবারের অর্থের সমস্যা নেই, তবে আমি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারব। এক বছর একটি প্রজেক্ট করব।’
জে.এস/
খবরটি শেয়ার করুন