শুক্রবার, ১৩ই সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাবেক ১১ মন্ত্রী-এমপিসহ ৩১ জনের সম্পদের তথ্য চাইলো অন্তর্বর্তী সরকার

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, ১৭ই আগস্ট ২০২৪

#

ছবি : সংগৃহীত

সদ্য পদত্যাগকারী আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ৬ প্রভাবশালী মন্ত্রী, ৫ জন সাবেক সংসদ-সদস্য এবং তাদের স্ত্রী, সন্তান ও সহযোগীসহ ৩১ জনের অর্থ-সম্পদের তথ্য সংগ্রহের পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে দেশে ও বিদেশে থাকা সব ধরনের অর্থ-সম্পদের অনুসন্ধান শুরু হয়েছে।

এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে ওইসব ব্যক্তি ও তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে তাদের অর্থ-সম্পদের তথ্য চেয়ে বিদেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউ এসব তথ্য সংগ্রহ করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করবে। তারা নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী তদন্ত করবে। ইতোমধ্যে এসব সংস্থা গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করতে কাজ শুরু করেছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, এখন পর্যন্ত ছয়জন সাবেক প্রভাবশালী মন্ত্রীর তথ্য চেয়ে বিদেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ। এদের প্রত্যেকের স্ত্রী, সন্তান, স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে বিদেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে এদের নামে স্থাবর ও অস্থাবর কোনো সম্পদ থাকলে তা জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

সাবেক এমপিদের মধ্যে রয়েছেন, জামালপুর-৩ আসনের মির্জা আজম, সিরাজগঞ্জ-২ আসনের জান্নাত আরা হেনরী, ময়মনসিংহ-১০ আসনের ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল, নাটোর-২ আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুল ও পিরোজপুর-১ আসনের মহিউদ্দিন মহারাজ।

আরো পড়ুন : সাবেক সচিবের বাসায় মিললো ৩ কোটি টাকা ও বিপুল পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা

মন্ত্রী-এমপি ছাড়া আরও রয়েছেন আইনমন্ত্রীর সহযোগী সিটিজেন ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান তৌফিকা আফতাব, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ত্রী ও সন্তান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুই সন্তান, আইনমন্ত্রীর স্ত্রী ও দুই সন্তান, ভূমি প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও দুই সন্তান, তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী ও দুই সন্তান, তথ্য প্রতিমন্ত্রীর স্ত্রী।

জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিল। ওই সময়ে তারা নানাভাবে দুর্নীতি, ঘুষ ও কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের অর্থ সম্পদ গড়েছেন। এগুলোর বড় অংশই বিদেশে পাচার করেছেন। ওইসব সম্পদ দিয়ে তারা বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যও করছেন। এতে দেশের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। গত আড়াই বছর ধরে দেশে যে ডলার সংকট চলছে এবং তা থেকে মূল্যস্ফীতির লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি হয়েছে তার অন্যতম কারণ দেশ থেকে টাকা পাচার। দেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নতুন সরকার পাচার করা টাকা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। সেজন্য তাদের নামে অর্থ সম্পদের তথ্য চাওয়া হয়েছে।

বিএফআইইউসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রাথমিক তদন্তে আলোচ্য ৩১ জনের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল অঙ্কের অর্থ-সম্পদের সন্ধান মিলেছে। যে কারণে এখন আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিদেশের পাশাপাশি তাদের নামে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

এ ছাড়া অন্যান্য সম্পদের তথ্যও নেওয়া হচ্ছে। এসব তথ্য সংগ্রহ করে বিএফআইইউ থেকে দুদক ও সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে সরবরাহ করা হবে। এর আলোকে সংস্থাগুলো আরও তদন্ত করে অভিযুক্তদের নামে মামলা করবে।

জানা গেছে, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক একটি বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন। সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের প্রয়াত বাবা আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর নামে লন্ডনে বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল। এগুলোকে পরে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদ আরও বাড়িয়েছেন। দুবাইয়ে তিনি একটি পাঁচতারা হোটেল নির্মাণ করছেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যে তার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 

গত নির্বাচনের আগে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, সরকারের একজন মন্ত্রীর বিদেশে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ও ব্যবসা রয়েছে। পরে জানা যায়, ওই মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী।

সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম স্ত্রীর নামে নাটোরে জান্নাতি প্যালেস নামে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। পাশাপাশি কানাডায় একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাবেও রয়েছে অর্থ। যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নামে-বেনামে সম্পদ রয়েছে তার।

এর বাইরে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আরও সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও ব্যবসায়ী নেতাদের নামে দেশে-বিদেশে বিপুল অর্থ-সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। বিএফআইইউ সেগুলো নিজস্ব গোয়েন্দা সূত্রের মাধ্যমে তদন্ত করছে। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে তথ্য চাওয়া হবে বলে জানা যায়।

এস/  আই.কে.জে/

সম্পদ অন্তর্বর্তী সরকার

খবরটি শেয়ার করুন