ছবি : সংগৃহীত
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে চাষ হচ্ছে সাচি ও মিষ্টি পান। যা এখন স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে তিন দেশে। তবে করোনার আগে এ পান রপ্তানি হতো বিশ্বের ৮ থেকে ১০টি দেশে। করোনাকালীন নিষেধাজ্ঞার পর পানচাষ লাভজনক হওয়ায় আবারও নতুন করে পান চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের। তবে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে।
রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার আড়কান্দি, বেতাঙ্গা, চরআড়কান্দি, ইলিশকোল, স্বর্পবেতাঙ্গা, খালকুলা, বহরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় সাচি ও মিষ্টি পান আবাদ করছেন চাষীরা। পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রাখতে এ অঞ্চলের চাষীরা পানের আবাদ করে আসছেন। প্রতিটি গাছ থেকে সপ্তাহে দুইবার দুই থেকে তিনটি করে পাতা সংগ্রহ করা হয়। পান পাতা বাজারে বিক্রি হয় পণ হিসেবে। প্রতি পণে ৮০টি পাতা থাকে। স্থানীয় বাজারে আকার ভেদে প্রতি পণ পানের দাম পাওয়া যায় ৫০ থেকে ২০০ টাকা। বিদেশে রপ্তানির জন্য বাছাই করা প্রতি পণ ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়ও বিক্রি হয়।
জানা গেছে, এক বিঘা জমিতে পান চাষে চাষীদের খরচ হয় দুই লাখ টাকা এবং চাষ থেকে শুরু করে ৬ মাস পর্যন্ত করা হয় পান বরজের পরিচর্যা। ৬ মাস পর থেকে পান সংগ্রহ শুরু হয়। শুধু জৈব সার দিয়ে পান আবাদ করা হয়। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে কীটনাশক ও ভিটামিন স্প্রে করা হয়। বর্তমানে এখানকার পান রাজবাড়ী, ফরিদপুর, কুষ্টিয়াসহ বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। করোনা মহামারির আগে এই উপজেলার পান ভারত, পাকিস্তান, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, সৌদি আরব, মালয়েশিয়াসহ ৮ থেকে ১০টি দেশে রপ্তানি হতো। করোনায় এলসি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রপ্তানিও বন্ধ ছিল। তবে নতুন করে শুরু হয়েছে আবারও রপ্তানি। বতর্মানে ভারত, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া- এই ৩ দেশে রপ্তানি হচ্ছে পান এবং অন্যান্য দেশে রপ্তানির জন্য কৃষি অধিদপ্তর চেষ্টা করছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৮৫ হেক্টর জমিতে সাচি ও মিষ্টি পান চাষ হয়েছে। এরমধ্যে ৬৫৮টি মিষ্টি ও ১৫৬টি সাচি পানের বরজ রয়েছে।
আরো পড়ুন : লিচুর মুকুলের ঘ্রাণে মেতে উঠেছে পঞ্চগড়
পান চাষী সনদ কুমার দাস, সম্পদ কুমার দাস, শিপ্রা দাস ও হযরত জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই পান চাষ করে আসছে তার পরিবার এবং এ পান চাষের ওপরেই তারা নির্ভরশীল। এর আয় দিয়েই মেটান সংসারসহ অন্যান্য খরচ। করোনার পর থেকে তাদের ব্যবসা কমে গেছে। তবে এবার বাজার ভালো থাকায় লাভের আশা করছেন তারা।
সাচি ও মিষ্টি (দেশি) দুই ধরনের পান চাষ করছেন তারা। বর্তমানে তাদের পান রাজবাড়ীসহ আশপাশের জেলায় বিক্রি করছেন। করোনার আগে যেভাবে বিদেশে পান যেতো, আবার সেভাবে গেলে তারা লাভবান হবেন। মুলত সাচি পান বিদেশে যেতো। এখন অনেক কমে গেছে, যার কারণে সাচি পানের চাষও কমেছে। নিজেদের জমি হলে ভালো হয়, আর অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষ করলে তেমন একটা লাভ হয় না। সরকারীভাবে ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার জন্য কৃষি বিভাগের সহযোগিতা কামনা করছেন তারা।
অন্য চাষী মামুন মল্লিক, ছবেদ আলী, মো. রহিম জানান, এক বিঘা জমিতে তাদের পান চাষে প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। প্রথম অবস্থায় ৬ মাস পান চাষে কোনও আয় হয় না। ৬ মাস পর থেকে পান সংগ্রহ করতে পারেন। চাষে খৈলের জৈব সার ছাড়া আর কিছু ব্যবহার করেন না। পোকার আক্রমণ দেখা দিলে স্প্রে ও কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভিটামিন দিতে হয়। এগুলো আগে দেওয়া লাগতো না। পান চাষে তারা লাভবান, কিন্তু সরকারীভাবে তাদের সহযোগিতা করা হলে তারা আরও লাভবান হতেন।
এস/ আই. কে. জে/