ছবি: সংগৃহীত
মারিয়া কোরিনা মাচাদো নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়ার পর নোবেল কমিটিকে নিন্দা জানায় মার্কিন প্রশাসন। সে সময় কোনো মন্তব্য করেননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরে মাচাদো ও ট্রাম্প দুজনেই জানান, গতকাল শুক্রবার (১০ই অক্টোবর) তাদের ফোনালাপ হয়েছে। খবর বিবিসি, সিএনএন ও রয়টার্সের।
বহুবার প্রকাশ্যে এই পুরস্কার জেতার আকাঙ্ক্ষা জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই পুরস্কার পাওয়া উচিত বলে সম্প্রতি বিশ্বনেতাদের অনেকে মতও দিয়েছেন। বিশেষ করে তার গাজা শান্তি পরিকল্পনা গতিশীল হওয়ায় সেই দাবিগুলো আরও জোরালো হয়েছে। তবে নোবেল পুরস্কারের নিয়ম অনুযায়ী, বছরের জন্য মনোনয়নের সময়সীমা জানুয়ারি পর্যন্ত।
গতকাল শুক্রবার ভেনেজুয়েলায় গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় কাজ এবং ‘একনায়কতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে ন্যায়সংগত ও শান্তিপূর্ণ উত্তরণে সংগ্রামের জন্য’ ২০২৫ সালের শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে মারিয়া কোরিনা মাচাদোর নাম ঘোষণা করে নোবেল কমিটি।
স্প্যানিশ সংবাদপত্র এল পাইসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মারিয়া কোরিনা মাচাদো জানান, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলেছেন, তবে তাদের কথোপকথনের বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান। পুরস্কার পাওয়া নিয়ে বক্তব্যের মতোই তিনি ট্রাম্পের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প নিজেই মাচাদোর সঙ্গে কথা হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ট্রাম্প বলেন, ‘যিনি আসলে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন, তিনি আজ আমাকে ফোন করে বললেন, আমি এ পুরস্কারটি আপনার সম্মানে গ্রহণ করছি। কারণ, আসলে আপনিই এটি পাওয়ার যোগ্য।’
ট্রাম্প মজার ছলে যোগ করেন, ‘এটা খুবই সুন্দর একটা ব্যাপার। আমি কিন্তু বলিনি তাহলে আমাকেই দাও। যদিও আমার মনে হয়, উনি হয়তো দিতেও পারতেন। উনি খুবই ভালো।’
ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমি ওকে অনেকভাবে সাহায্য করে আসছি। ভেনেজুয়েলায় এখন ভয়াবহ পরিস্থিতি। সম্পূর্ণ বিপর্যয় বলা যায়। তাই আপনি এটাও বলতে পারেন, পুরস্কারটি ২০২৪ সালের জন্য দেওয়া হয়েছে। আর আমি ২০২৪ সালে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলাম।’
নোবেল পুরস্কারের ঘোষণা আসার পরপরই ট্রাম্প প্রশাসন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ পরিচালক স্টিভেন চুং লেখেন, ‘নোবেল কমিটি প্রমাণ করল, তারা শান্তির চেয়ে রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব দেয়।’
মাচাদো বহু বছর ধরে ভেনেজুয়েলায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে আসছেন এবং নিজের আজীবন লক্ষ্যকে বর্ণনা করেছেন ‘গুলির চেয়ে ব্যালটের জয়’ হিসেবে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর ভিন্নমতের ওপর কঠোর দমননীতির সময় তিনি আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হন।
অতীতে ট্রাম্প প্রশাসনের অনেক সদস্য মাচাদোর কাজের প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসন বারবার মাদুরোর সরকারকে নিন্দা করেছে এবং ‘মাদকবিরোধী অভিযান’ চালানোর অজুহাতে ওই অঞ্চলে শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি গড়ে তুলেছে, যা অনেকের মতে মাদুরোকে দুর্বল করে ক্ষমতা থেকে সরানোর কৌশলেরই অংশ।
২০২৪ সালে মাচাদোকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়া আইনপ্রণেতাদের একটি দলের মধ্যে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বর্তমান জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক ওয়াল্টজ।
২০২৪ সালের নভেম্বরে তারা এক চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমরা যারা পশ্চিমাসহ বিশ্বের বিভিন্ন একনায়কতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে নীতি নির্ধারণে কাজ করি, মারিয়া কোরিনা মাচাদোর মতো এমন সাহস, নিঃস্বার্থতা ও নৈতিক দৃঢ়তা আমরা খুব কমই দেখেছি।’
খবরটি শেয়ার করুন