প্রতীকী ছবি
আগামী ২৫শে ফেব্রুয়ারি (রোববার) দিবাগত রাতে সারা দেশে পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। গত রোববার (১১ই ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় দেশের আকাশে শাবান মাসের চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এই দিন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই হিসেবে সোমবার (১২ই ফেব্রুয়ারি) থেকে শাবান মাস গণনা শুরু হয়।
মহান আল্লাহ তাআলা ইমানদারদের অনেক বরকতময় দিন-রাত ও ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ দান করেছেন। ইবাদতের এসব উর্বর সময়কে যথাযথভাবে ঐকান্তিকতার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারলে— সামান্য সাধনা, ক্ষুদ্র পরিশীলন ও অনুশীলনের মাধ্যমে প্রশান্তির বারিধারায় সিক্ত হতে পারে। অর্জন করতে পারবেন মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও অনুকম্পা। সেসব রাতের অন্যতম একটি হলো- পবিত্র শবে বরাত।
শবে বরাত রাসুল (সা.)-এর ভাষায়, ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’। অর্থাৎ শাবান মাসের ১৫তম রাত। বিখ্যাত সাহাবি মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘অর্ধ শাবানের রাতে অর্থাৎ শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতে মহান আল্লাহ তাআলা সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও হিংসুক-বিদ্বেষী লোক ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৯০; সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৬৬৫)
আসিম ইবনে মুহাম্মদ ইবনে আবি বকর তার পিতার সনদে দাদা আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুল (সা.) বলেন— ‘আল্লাহ তাআলা শাবানের ১৫তম রাতে দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং সব পাপীকে (যারা ক্ষমা প্রাার্থনা করে) ক্ষমা করে দেন। তবে মুশরিক (আল্লাহর সঙ্গে সমকক্ষ সাব্যস্তকারী) ও মুশহিন (হিংসুক) ছাড়া।’ (বায়হাকি : ৩৮৩৫)
মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.), আবু সালাম আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা), আবু মুসা আশআরী (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবু বকর (রা.), আউফ ইবনে মালিক (রা.) ও আয়েশা (রা.) সবাই এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। হাদিসবিশারদরা উক্ত হাদিসের বর্ণনাকারীদের সিকাহ তথা বিশ্বস্ত বলেছেন। মূল কথা হাদিসটি ‘সহিহ’। (আত তারগিব ওয়াত তারহিব, খণ্ড : ০২, পৃষ্ঠা : ১১৮)
শবে বরাতের ফজিলত
এ রাতে করণীয় সম্পর্কে আলী বিন আবু তালিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অর্ধ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছো কি? আমি তাকে রিজিক প্রদান করবো। আছো কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করবো। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)
আয়েশা (রা.) বলেন— ‘একবার রাসুল (সা.) রাতে নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হলো- তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আয়েশা তোমার কি এই আশঙ্কা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না- হে আল্লাহর রাসুল। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা। তখন নবী (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি জান এটা কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুল (সা.) তখন ইরশাদ করলেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনোযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহপ্রাার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।’(বায়হাকি, হাদিস : ৩৮২; তাবরানি, হাদিস : ১৯৪)
আরও পড়ুন: সেহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রকাশ
শবে বরাতের আলাদা কোনো নামাজ নেই। নির্দিষ্ট সুরা দিয়ে নির্দিষ্ট রাকাত নামাজ পড়ার রীতি ভুল প্রচলন। এটা থেকে বেঁচে থাকা দরকার। পারলে সারারাত ইবাদত-বন্দেগি করা। সেটা হতে পারে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ, দোয়া-দরুদ, তওবা-ইস্তেগফার, দান-সদকা, উমরি ক্বাজা নামাজ, কবর জিয়ারত ইত্যাদি। তবে দলবদ্ধ ছাড়া একাকীভাবে কবর জিয়ারতে কোনো সমস্যা নেই। রাসুল (সা.) চুপিসারে একাকী জান্নাতুল বাকিতে কবর জিয়ারত করেছেন।
আয়েশা (রা.) বলেন- ‘এক রাতে হজরত রাসুল (সা.) কে না পেয়ে খুঁজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকিতে গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন- “কি ব্যাপার আয়েশা? তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তার রাসুল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন?” আয়েশা (রা.) বললেন, আমার ধারণা হয়েছিল— আপনি অন্য কোনো বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসুল (সা.) তখন বললেন, যখন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রাত আসে, তখন আল্লাহ তাআলা এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরির পশমে চেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৯)
সম্ভব হলে পরদিন অর্থাৎ ১৫তম দিনে একটি নফল রোজা রাখা। কোনো ধরনের আনুষ্ঠানিকতা ও জামাত ছাড়া একাকীভাবে সামর্থ্য অনুযায়ী নফল ইবাদত-বন্দেগি করা। তবে হ্যাঁ, কোনো প্রকার ঘোষণা ছাড়া, প্রস্তুতি ছাড়া কিছু মানুষ একত্রিত হয়ে গেলে সমস্যা নেই। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে, যেসব ইবাদত সমবেতভাবে আদায় করার প্রচলন রাসূল (সা.) থেকে প্রমাণিত, তা সমবেতভাবে আদায় করা। বাকিগুলো একাকী করা।
ইসলামি স্কলারদের মতে, আল্লাহতায়ালা নফল ইবাদতকে নীরবে পালনকারীকে বেশি ভালোবাসেন। আর ইখলাসের সঙ্গে স্বল্প আমল ঐকান্তিকতাহীন অধিক আমল থেকে উত্তম
সূত্র: এহসান বিন মুজাহির (সাংবাদিক, কলামিস্ট ও অধ্যক্ষ, শ্রীমঙ্গল আইডিয়াল স্কুল, মৌলভীবাজার)
এসকে/
খবরটি শেয়ার করুন