ছবি : সংগৃহীত
মোবাইল সদৃশ একটি ডিভাইস, যেটি ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে পরিচালনা সম্ভব। এতে কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রবেশ করালে সঙ্গে সঙ্গেই মিলে যায় তার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য। এর মাধ্যমে নিমিষেই জানা সম্ভব হচ্ছে, ওই ব্যক্তি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি না। অপরাধীদের শনাক্ত করতে অনসাইট আইডেন্টিফিকেশন অ্যান্ড ভেরিফিকেশন সিস্টেম (ওআইভিএস) নামে এ প্রযুক্তি নিয়ে নির্বাচনের মাঠে রয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
র্যাব জানায়, দীর্ঘদিন পলাতক ও ছদ্মবেশে থাকা অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে তাদের পরিচয় নিশ্চিত করা এবং পূর্ববর্তী অপরাধ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আগে সাধারণত কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে আলামত হিসেবে অপরাধীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ অন্যান্য তথ্য ঘটনাস্থল থেকে উদঘাটন করা সম্ভব হতো না। তাই নিকটস্থ র্যাব কার্যালয়ে নিয়ে পরিচয় শনাক্ত করতে হতো, যা ছিল সময়সাপেক্ষ বিষয়।
এ পরিস্থিতিতে সফলভাবে আইন প্রয়োগের স্বার্থে উন্নত বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও সরকারি বিভিন্ন জাতীয় ডাটাবেজে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তাৎক্ষণিক প্রবেশাধিকার জরুরি হয়ে পড়ে। এসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ সমাধানে র্যাব প্রয়োজনীয় হার্ডওয়ার, সফটওয়্যার ও ডাটাবেজের সমন্বয়ে ২০২১ সালে ওআইভিএস প্রবর্তন করে।
জাতীয় নির্বাচনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট নিশ্চিত করতে এবারই প্রথমবারের মতো র্যাব ওআইভিএস ব্যবহার করছে বলে জানান কর্মকর্তারা।
এ প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ওআইভিএস ডিভাইস দিয়ে কার্যক্রম শুরুর ফলে তাৎক্ষণিকভাবে যেকোনো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। মোবাইল সদৃশ এ ডিভাইস ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে যেকোনো স্থান থেকে পরিচালনা করা সম্ভব। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ও অপরাধী শনাক্তের ক্ষেত্রে ডিভাইসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
ডিভাইসটির মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র, অপরাধীদের ডাটাবেজ ও কারাভোগের তথ্য পাওয়া যায়। এতে কোনো ব্যক্তির জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, জন্ম তারিখ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রবেশ করালে ওই ব্যক্তির তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়। এতে করে নিমিষেই জানা সম্ভব হচ্ছে অপরাধমূলক কোনো কাজের সঙ্গে ওই ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না।
এ ডিভাইসের মাধ্যমে শুধু অপরাধী শনাক্তই নয়, অজ্ঞাতনামা মরদেহের পরিচয়ও শনাক্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে এ ডিভাইসের মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধী এবং অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ডিভাইসটি দিয়ে ঘটনাস্থল থেকেই অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির আঙ্গুলের ছাপ, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর বা জন্ম তারিখ ব্যবহার করে জানা যাচ্ছে ব্যক্তির পরিচয়সহ অন্যান্য তথ্য। এতে অপরাধ তদন্তে গতিশীলতা বেড়েছে।
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, অপরাধীদের শনাক্তে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে ওআইভিএস নতুন ধারা উন্মোচন করেছে। ওআইভিএস ডিভাইসটি র্যাবের অফিসার বা কর্মকর্তারা পরিচালনা করেন। অপতৎপরতামূলক কাজে কেউ যাতে ডিভাইসটি ব্যবহারের সুযোগ না পান, সেক্ষেত্রে ডিভাইসটির সুরক্ষা ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
ইতোমধ্যে ডিভাইসটি র্যবের ১৫ ব্যাটালিয়ন ও কোম্পানি পর্যায়ে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং তা পরিচালনার জন্য বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডাররা ডিভাইসটি পরিচালনা করছেন।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্ম তারিখ ছাড়াও এ প্রযুক্তিতে ছবি সংযোজন করা হবে, যা কোনো ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত আরও সহজতর হবে। তদন্তের প্রয়োজনে র্যাব কোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে বিষয়েও তথ্য থাকবে ডিভাইসটিতে।
এ ছাড়া পাসপোর্ট, বিআরটিএ ও পুলিশের ডাটাবেজের তথ্য সহায়তা ওআইভিএস ডিভাইসের মাধ্যমে পাওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ ডাটাবেজগুলোর তথ্য ডিভাইসটিতে পেতে কার্যক্রম চলছে বলে জানা গেছে।
র্যাব জানায়, ওআইভিএস ডিভাইসটি ব্যবহারের শুরু থেকেই অপরাধী শনাক্তসহ অজ্ঞাতনামা ভুক্তভোগীর পরিচয় নিশ্চিতে র্যাবের সাফল্য মিলছে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আগামী ৭ই জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে সমগ্র দেশের নিরাপত্তা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র্যাব মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে।
চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে র্যাব গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রতিটি সংসদীয় আসনে মোতায়েন রয়েছে। এ ছাড়া স্থাপন করা হয়েছে ৩০টির বেশি অস্থায়ী ক্যাম্প।
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় সম্পদ সুরক্ষা করতে র্যাব পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের নাশকতা কিংবা সহিংসতা প্রতিরোধে দেশব্যাপী সর্বমোট ৭০০টির বেশি টহলদল আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে।
আরো পড়ুন: মাঠে নামলো বিজিবির স্পেশাল টিম ‘র্যাট’
এইচআ/ আই.কে.জে
খবরটি শেয়ার করুন