শুক্রবার, ৫ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২১শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আফগান শরণার্থীদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করলো পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০২:৪৭ অপরাহ্ন, ৬ই অক্টোবর ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

অবৈধভাবে অবস্থান করা আফগান শরণার্থীদের উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পাকিস্তান। 

বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাসরত আফগান নাগরিকদের ২০টি পরিবারকে নিয়ে ১৬টি ট্রাক তোরখাম সীমান্তে পৌঁছেছে।

আইনি বাধ্যবাধকতা শেষ হওয়ার পরে ৩৫০ জন সদস্যের এই ২০টি পরিবারকে আফগানিস্তানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে। শুক্রবার (৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ আফগান নাগরিকদের উচ্ছেদ শুরু করার পাশাপাশি তাদের অবৈধ বসতিও ভেঙে দিচ্ছে পাকিস্তান। এরই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে রাজধানী ইসলামাবাদের মারগাল্লা টাউনের কাছে অবৈধ আফগান বসতি ভেঙে দিয়েছে ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ)।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী- বর্তমানে পাকিস্তানের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে নিবন্ধিত শরণার্থীর সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার। অনিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছেন ১৭ লাখের বেশি। যাদের কাছে কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই। এই শরণার্থীদেরই ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান।

ইসলামাবাদে প্রায় দুই মাস ধরে অবৈধ আফগান বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। পুলিশের মুখপাত্রের মতে, বিভিন্ন অভিযানে ১ হাজার ১২৬ জনকে তল্লাশি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে, বৈধ নথি দেখাতে সক্ষম হওয়ায় ৬২৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আর বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ৫০৩ জনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ৫০৩ জনকে ফরেনার্স অ্যাক্টের ১৪ ধারায় বিভিন্ন আদালতে হাজির করা হচ্ছে। মোট ২২ হাজার আফগান নাগরিক ইসলামাবাদে বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে অবৈধভাবে প্রবেশ করা ১৭ লাখ ৩০ হাজার আফগান অভিবাসীকে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পাকিস্তান ত্যাগের নির্দেশ দেয় পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির সরকার। গত মঙ্গলবার দেশটির তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী আনওয়ার উল হক কাকার এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি।

সংবাদ সম্মেলনে বুগতি বলেন, তাদের কাছে যে কোনো দেশ বা তার নীতির চাইতে পাকিস্তানের নাগরিকদের নিরাপত্তা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নিজেদের নাগরিকদের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই প্রথম ইসলামাবাদ এমন আল্টিমেটাম দিচ্ছে।

তত্ত্বাবধায়ক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরফরাজ বুগতি বলেন, আগামী ১ নভেম্বরের মধ্যে সব অবৈধ অনুপ্রবেশকারীকে নিজ দেশে ফেরত যেতে হবে। ১ নভেম্বরের পর থেকে অভিযানে নামবে আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সে সময় যদি কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশাকারী ধরা পড়েন, তাহলে তাদের জোর করে নিজেদের দেশে পাঠানো হবে।

সরফরাজ বুগতি সরাসরি কোনো নাম উল্লেখ না করলেও ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে তিনি যে নিবন্ধনহীন আফগান শরণার্থীদের বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট। কারণ পাকিস্তানে আফগানিস্তান ব্যতীত অন্য কোনো দেশের লোকজন শরণার্থী হিসেবে বাস করেন না।

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যেসব আফগান শরণার্থী সাধারণ পাকিস্তানিদের সঙ্গে মিশে যাওয়ার জন্য ভুয়া পরিচয়পত্র ব্যবহার করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে মাঠে নামবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলছে, ৩১ অক্টোবরের সময়সীমার মধ্যে দেশ ছেড়ে না গেলে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন শুরু হবে। এ বিষয়ে ফেডারেল পুলিশ কর্মকর্তা এবং ইসলামাবাদে আফগান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি বিশেষ বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 আরো পড়ুন : ১৭ লাখ আফগান শরণার্থীকে দেশ ছাড়ার আল্টিমেটাম পাকিস্তানের

উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে যে, আফগান নাগরিকদের যাদের পাকিস্তানে বসবাসের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই তাদের আফগানিস্তানে ফেরত পাঠানো হবে। এছাড়া খাইবার-পাখতুনখাওয়া প্রদেশে অবৈধভাবে বসবাসরত আফগানদের উচ্ছেদের চূড়ান্ত কর্ম পরিকল্পনা ঠিক করতে আগামী সপ্তাহে সেখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক ডাকা হয়েছে।

পাকিস্তানে সম্প্রতি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে জুন পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে অন্তত ২৭১টি হামলা হয়। পাকিস্তানের নিষিদ্ধ তালেবানপন্থি দল টিটিপি’র বিরুদ্ধে এসব হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এসব হামলার ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে নিবন্ধনবিহীন আফগান শরণার্থীদের।

উল্লেখ্য, পাকিস্তানে বসবাসরত আফগান শরণার্থীদের একটি অংশ পাকিস্তানে এসেছিলেন ১৯৭৯ সালে, আফগানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর। তারপর ১৯৯৫-৯৬ সালে তালেবান সরকার প্রথমবারের মতো ক্ষমতা দখলের পর শরণার্থী হিসেবে আসেন আরও কয়েক লাখ শরণার্থী।

এই শরণার্থীদের অধিকাংশই থাকেন পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ খাইবার পাখতুনখাওয়া এবং বেলুচিস্তানে। দেশটিতে বর্তমানে অনিবন্ধিত শরণার্থী রয়েছেন ১৭ লাখের বেশি, যাদের কাছে কোনও বৈধ কাগজপত্র নেই। এই শরণার্থীদেরই ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাকিস্তান।

এসকে/ 

আফগানিস্তান পাকিস্তান শরণার্থী তালেবান উচ্ছেদ অভিযান

খবরটি শেয়ার করুন