সামরিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর চার শিশুকে রাখা হয়েছে সরকারি শিশু সুরক্ষা সেবাকেন্দ্রে। সেখানে আঁকিবুকি করছে তারা। ১৪ জুলাই, বোগোতা, কলম্বিয়া। ছবি: রয়টার্স
কলম্বিয়ায় আমাজন জঙ্গলের গভীরে উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ৪০ দিন পর জীবিত উদ্ধার সেই ৪ শিশু হাসপাতাল ছেড়েছে। ৩৪ দিন চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী বোগোতার সামরিক হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে তারা। তবে এখনই তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে না।
এই ৪ শিশুর মধ্যে সবচেয়ে বড়টির বয়স ১৩ বছর, তার নাম লেসলি। সবচেয়ে ছোট ক্রিস্তিনের বয়স মাত্র ১ বছর। সোলেইনি ও তিয়েন নোরিয়েল নামের অপর দুই শিশু বয়স যথাক্রমে ৯ ও ৫ বছর।
গত ১ মে ছোট আকারের একটি উড়োজাহাজ আমাজন জঙ্গলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকে নিখোঁজ ছিল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর এই চার শিশু। ৪০ দিনের ব্যাপক তল্লাশি শেষে তাদের জীবিত উদ্ধার করা হয়। ওই তল্লাশি অভিযানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরসহ ১৫০ সেনাসদস্যকে মোতায়েন করা হয়। যোগ দেন নিখোঁজ শিশুদের বাবাসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর লোকজন।
কলম্বিয়ার শিশু কল্যাণ ইনস্টিটিউটের পরিচালক আস্ত্রিদ ক্যাসেরেস গত শুক্রবার সাংবাদিকদের জানান, তাদের (চার শিশু) ওজন ও উচ্চতা ঠিক আছে। সত্যিই তারা এখন খুব ভালো আছে।
এই শিশুদের দেখভাল ও সুরক্ষার দ্বিতীয় ধাপ শুরু হলো উল্লেখ করে আস্ত্রিদ ক্যাসেরেস বলেন, ‘জটিল পারিবারিক পরিস্থিতির’ কারণে তারা আপাতত শিশু কল্যাণ ইনস্টিটিউটের শিশু সুরক্ষা সেবাকেন্দ্রে থাকবে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
১ মের ওই উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় এই চার শিশুর মা মাগদালেনা মিউকুতিউ ও উড়োজাহাজের পাইলটসহ প্রাপ্তবয়স্ক তিন ব্যক্তি নিহত হন। মাগদালেনা মিউকুতিউ হুইতোতো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর নেত্রী ছিলেন।
তবে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্তের পর চার শিশুর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। এরপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। দুর্ঘটনার ৪০ দিন পর কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো এক টুইটে জানান, নিখোঁজ চার শিশুকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনা ‘পুরো দেশের জন্য আনন্দজনক’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জাগুয়ার, বিভিন্ন প্রজাতির সাপসহ নানা বন্য পশুপাখির আবাস আমাজন জঙ্গলে শিশু চারটির এত দিন বেঁচে থাকাকে ‘অলৌকিক’ বলেন কেউ কেউ। অনেকেরই মনে প্রশ্ন জাগে, এত দিন কীভাবে বেঁচে ছিল এসব শিশু?
আরো পড়ুন: নানির শেখানো কৌশলে ৪০ দিন বেঁচে ছিল সেই চার শিশু
সবচেয়ে বড় শিশু লেসলির বরাতে কর্তৃপক্ষ জানায়, টানা ৪০ দিন গভীর জঙ্গলে থাকার পরও চার শিশু বেঁচে ছিল ওদের নানির কল্যাণে। লেসলিকে তার নানি খুব ছোটবেলা থেকে গভীর জঙ্গলে মাছ ধরা ও শিকারের কলাকৌশল শিখিয়েছেন। প্রকৃতি থেকে খাবার সংগ্রহের উপায়ও শিখিয়েছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার পর এসব কৌশল চার শিশুকে আমাজনের গভীরে বেঁচে থাকার জন্য খাবার সংগ্রহে সহায়তা করেছে।
কলম্বিয়ার জাতীয় আদিবাসী সংগঠনের লুই আকোস্তা জানান, শিশুরা আমাজনের গভীরে থাকার সময় বিভিন্ন বীজ, ফল, শিকড়বাকড় খেয়েছে। তারা যেগুলোকে খাওয়া যাবে বলে মনে করেছে, সেগুলোই খেয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা
এম এইচ ডি/
লাতিন আমেরিকা শিশু উড়োজাহাজ আমাজন বন দুর্ঘটনা লাতিন আমেরিকা কলম্বিয়া
খবরটি শেয়ার করুন