সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উইঘুর মুসলিমদের সমর্থনে বাংলাদেশে প্রতিবাদ সভা

নিউজ ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০১:৩১ অপরাহ্ন, ৫ই মে ২০২৩

#

ছবি: সংগৃহীত

৫ মে, ঐতিহাসিক দোপ্পা দিবস উপলক্ষে ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের খেলাফত আন্দোলন পৃথকভাবে প্রতিবাদ সভা এবং মানববন্ধনের আয়োজন করে।

ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে উইঘুর মুসলমানদের উপর চীনের অকথ্য নির্যাতনের প্রতিবাদস্বরূপ এক প্রতিবাদ ও আলোচনা সভার আয়োজন করে ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশ।

ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এড. খায়রুল আহসানের সভাপতিত্বে উক্ত আলোচনা ও প্রতিবাদ সভার প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের আমীর-ই-শরীয়ত মাওলানা আবু জাফর কাসেমী।

আলোচনায় আরো বক্তব্য রাখেন ইসলামী প্রগতিশীল জনতা ফ্রন্টের চেয়ারম্যান মাওলানা আতাউর রহমান আতিকী, নেজামে ইসলাম বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান মাওলানা হারিসুল হক, মুসলিম জনতা পার্টির চেয়ারম্যান মাওলানা আজিজুর রহমান, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েব-এ-আমীর মাওলানা আবুল কাশেম কাসেমী, ইসলামিক মুভমেন্ট বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি রফিকুল ইসলাম এবং যুগ্ম মহাসচিব মো. নাসির উদ্দিন, যুগ্ম মহাসচিব মো. হুমায়ুন কবির, যুগ্ম মহাসচিব নূর-ই-হেলাল, সাপ্তাহিক অপরাধ বিচিত্রা এর সম্পাদক এ.এস.এম. মোরশেদ, ঢাকা প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো.সানাউল্লাহ ভূঁইয়া প্রমুখ।

উল্লেখ্য, চীনের দখলকৃত মুসলিম দেশ পূর্ব তুর্কিস্তানের অধিবাসী উইঘুরদের মাথার টুপি ও সংগ্রামের প্রতীক এই দোপ্পা। ১৯৪৯ সালে স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র পূর্ব তুর্কিস্তানকে ক্ষমতা দেখিয়ে জোর করে নিজের দখলে আনে চীন। প্রায় ৭২ বছর ধরে এ অঞ্চলের মানুষদের প্রতি অমানবিক আচরণ করে যাচ্ছে চীন। খুন, গুম, কারাবন্দিসহ নানা উপায়ে উইঘুরদের প্রতিহত করে পূর্ব তুর্কিস্তানকে নিজেদের হাতের মুঠোয় রাখছে চীন। 

উইঘুর মহিলাদের উপর চলছে চীনের সামরিক বাহিনির নিষ্ঠুর অত্যাচার। তাদের জোরপূর্বক গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্বকরণ করিয়ে চীনা সরকার উইঘুরদের ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছেন। তাছাড়া উইঘুর শিশুদেরকে জোরপূর্বক তাদের মা-বাবার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া হয়। শিক্ষার নাম করে তাদেরকে ছোটবেলা থেকেই নিজের ধর্ম, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য থেকে দূরে রেখে তাদের মনে চীনা সংস্কৃতির বীজ বপন করা হয়। উইঘুরদের বাড়িঘরে সি.সি. ক্যামেরা লাগিয়ে তাদের সর্বক্ষণ নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। শিক্ষা প্রদানের নাম করে ৩৯ টি কারাগার নির্মাণ করে প্রায় ২০ লাখ উইঘুর নাগরিকদেরকে সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বন্দিদের উপর শারীরিক, মানসিক অত্যাচার চালানো এবং নারীদেরকে নিজেদের যৌন লিপ্সা মেটাতে ব্যবহার করাটাই এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনের কাছে।

সম্প্রতি এসব বিষয়ে মানবাধিকার কমিশনে চীনের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করে জাতিসংঘ। উইঘুরদের উপর অত্যাচারের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে জাতিসংঘ এবং এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বারবার সেখানে পরিদর্শনে যেতে চাইলেও চীনা সরকার বারবার এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। 

তাছাড়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নাম করে চীন সম্প্রতি বিভিন্ন দেশে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। চীনের উন্নয়ন প্রকল্পের জেরে শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা ভয়াবহ। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ভিন্ন মতাদর্শের নাগরিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের জন্য বেআইনি পুলিশ স্টেশন স্থাপন করেছে চীন।

উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাওলানা আবু জাফর কাসেমী বলেন, চীন বারবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘৃণ্য কাজ করে যাচ্ছে কিন্তু তবুও সারাবিশ্ব এ ব্যাপারে চুপ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো চীনের বিরুদ্ধে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। শুধুমাত্র মুসলমানদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে বলেই কি চীন বারবার পার পেয়ে যাচ্ছে?

এড. খায়রুল আহসান বলেন, চীনের স্বৈরশাসক উইঘুর নাগরিকদের রক্ত দিয়ে তার আসন পাকাপোক্ত করেছেন। তবে সারা বিশ্বের এখন জেগে উঠার সময় এসেছে। জাতিসংঘ বিল পাসের মাধ্যমে উইঘুরদের নিজেদের স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে।

এভাবেই উইঘুরদের স্বাধীনতার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং চীনের ঘৃণ্য কাজের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রকাশ করে শেষ হয় এই আলোচনা ও প্রতিবাদ সভা।

অন্যদিকে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন। মহানগর আমীর মাওলানা মোহাম্মদ হোসাইন আখঞ্জীর সভাপতিত্বে উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন দলের কেন্দ্রীয় আমীর, আমীর-ই-শরীয়ত আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আবু জাফর কাসেমী, কেন্দ্রীয় নেতা মো. খালেদ হোসেন, আলহাজ্ব মাওলানা ইব্রাহিম বিন আলী, আলহাজ্ব আলী মাকসুদ (মামুন) খান, মাওলানা মুফতি কামান উদ্দিন আশরাফ প্রমুখ।

বক্তারা চীনের সাম্রাজ্যবাদ, ঔপনিবেশিক চিন্তাচেতনা, সারাবিশ্বব্যাপী প্রভাব বিস্তারের নীতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা জানান। পূর্ব তুর্কিস্তান (জিনজিয়াং) প্রদেশের উইঘুর মুসলমানদের উপর চীনের অকথ্য নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তীব্র নিন্দা জানান বক্তারা।

তাছাড়া ২০২২ সালে বাংলাদেশের চট্টগ্রামের বাঁশখালিতে নির্মাণাধীন একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিকেরা শুক্রবারে নামাজের ছুটি ও কর্মঘন্টা আন্তর্জাতিক মানে রাখার দাবি জানালে তাদের উপর আক্রমণ করেন চীনা কর্মকর্তারা। চীনা নেতৃত্বাধীন এ কোম্পানির এই অপরাধের আজ পর্যন্ত কোনও বিচার হয় নি। 

চীন যতোই শক্তিশালী হোক না কেন, তার আর কোন অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না বলে জানান বক্তারা। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি বক্তারা দাবি জানান উইঘুরদের স্বাধীনতা অবিলম্বে ফেরত দিতে হবে। মানববন্ধনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে একটি লিখিত ইশতেহারও জারি করা হয়।

আইকেজে /

Important Urgent

খবরটি শেয়ার করুন