সোমবার, ৮ই জুলাই ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে আষাঢ় ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কম্বোডিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংসের জন্য দায়ী চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ১০:৫০ অপরাহ্ন, ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২৩

#

ছবি : সংগৃহীত

পনেরো বছর আগে শুরু হওয়া দক্ষিণ কম্বোডিয়ার সমুদ্রতীরবর্তী দারা সাকোর রিসোর্টে এখন দেখার মতো তেমন কিছুই নেই।

এ স্থানটিকে পর্যটন শহর হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে চীন। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, গভীর সমুদ্র বন্দর, পাওয়ার স্টেশন, হাসপাতাল, ক্যাসিনো এবং বিলাসবহুল অনেক বাড়ি নিয়ে গঠিত এ স্থান। তবে বিমানবন্দরের কাজ এখনও পর্যন্ত অসমাপ্ত রয়েছে।

পর্যটন শিল্প হিসেবে কার্যক্রম শুরু করা এ স্থান অতি অল্প সময়ের মধ্যেই এশিয়ার প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং সেখানকার নাগরিকদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

কম্বোডিয়ায় চীনের অর্থনৈতিক সহায়তার পরিমাণ এখনো অন্য অনেক স্থানের তুলনায় নগন্য। এখানে অনেক কম অর্থই বিনিয়োগ করেছে চীন। তবে চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো কম্বোডিয়া। 

একসময়ের উপকূলীয় শান্ত শহর সিহানুকভিল চীনা চাহিদা মেটাতে বর্তমানে জুয়ার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কোভিডের সময় এখানে জুয়ার আধিক্য অর্থনীতির পতন ঘটায়। দারা সাকোরও ভবিষ্যত এমন হতে পারে বলে আশংকা করছেন অনেকে।

দারা সাকোর কম্বোডিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হুন সেনের পছন্দের জায়গা ছিল।

তবে চীনের যেকোন পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি ধোঁয়াশা থেকেই যায়। 

১৯৯০ এর দশকে বিগত তিন দশকের বিধ্বংসী যুদ্ধ এবং বিপ্লবের পরিসমাপ্তি ঘটানো হুন সেনের কাছে চীন কী ধরনের প্রস্তাব রেখেছিল তা এখনও জানা যায়নি।

তবে কম্বোডিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য হুন সেন যে চীনের কাছে অনেক কিছু ত্যাগ করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায়।

২০০৮ সালে বেসরকারি চীনা কোম্পানি ইউডিজি ১০ লাখ মার্কিন ডলার একক আমানতের বিনিময়ে ৯৯ বছরের জন্য দারা সাকোর বন্ধক নেয় এবং শুরু করে দারা সাকোর প্রকল্প। প্রাথমিকভাবে কোম্পানিটিকে ৩৬ হাজার হেক্টর জমি প্রদান করা হলেও পরবর্তীতে আরো ৯ হাজার হেক্টর জমি যোগ করা হয়।

১০ বছরের জন্য ইউডিজিকে কোন ধরনের অর্থ প্রদান করতে হয়নি। পরবর্তীতে ইউডিজি ১০ লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করে। অর্থাৎ কম্বোডিয়ার এত সুন্দর পর্যটন স্থান চীনকে অনেক সস্তায় দিয়ে দেওয়া হয়।

প্রকল্পটি ১০ হাজার হেক্টর আইনি সীমা অতিক্রম করলেও সেসময় এ তথ্য প্রকাশ্যে না আসায় চীন কোন ধরনের সমালোচনা ছাড়াই দার সাকোর দায়িত্ব পেয়ে যায়।

চীনের হাতে এ অংশের মালিকানা যাওয়ার পর থেকে অর্থাৎ ২০০৮ সালের পর থেকে জাতীয় এ উদ্যানটি ২০% বনাঞ্চল হারিয়েছে। তাছাড়া এখানকার এক হাজারেরও বেশি পরিবারকে এ স্থান ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। 

উচ্ছেদকৃত জমির বাসিন্দারা তাদের জমির প্রাপ্যমূল্য পান নি। বরং তারা বর্তমানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। 

মূলত চীনা সংস্থাটি শুধুমাত্র তাদের অর্থনৈতিক দিকটিই দেখছে এবং পরিবেশের উপর তারা এতো গুরুত্ব প্রদান করছে না।

এ প্রকল্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

২০২০ সালে, ইউএস ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট স্থানীয়দের উচ্ছেদ করায় ইউডিজিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী হিসেবে দাবি করে। তাছাড়া পরিবেশ দূষণের জন্যেও কোম্পানিটিকে দায়ী করা হয়।

সিহানুকভিলের কাছে চীনা নৌবাহিনী স্থাপন নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের নিয়মই হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লোভ দেখিয়ে ঋণ প্রদান করে পরবর্তীতে জোরপূর্বক নৌঘাঁটি স্থাপনের মাধ্যমে তাদের প্রভাব বিস্তার করা। 

অন্যদিকে ইউডিজির দাবি ২০৩০ সালের মধ্যে দারা সাকোরকে চমকপ্রদ এক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা। এক বছরে প্রায় ৭০ লাখ পর্যটক এবং ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে কোম্পানিটি। তবে ২০১৯ সালে দারা সাকোরে পর্যটকের সংখ্যা ছিল ৬০ লাখেরও কম।

এজন্য কোম্পানিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করলেও প্রকল্পের শুরু থেকেই চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এ ব্যাপারে শক্তিশালি সমর্থন দিয়ে গেছে।

চীনের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরিকল্পনা সংস্থা, ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরের আগেই অনুমোদন প্রদান করে।

ইউডিজি কম্বোডিয়ার শাসক দলের সিনিয়র ব্যক্তিদের সাথেও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলে। কোম্পানিটি কম্বোডিয়ান রেড ক্রসকে অনেক বড় অনুদান প্রদান করে। রেড ক্রসটি হুন সেনের স্ত্রী বুন রানি দ্বারা পরিচালিত হতো।

তাছাড়া কম্বোডিয়ার অন্যতম শক্তিশালী শাসক প্রাক্তন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী টি বানের সাথেও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে ইউডিজির।

অনেকের মতে দারা সাকোর প্রকল্প মূলত পরিচালনা করছে সিসিসিসি, যা মূলত একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। 

দারা সাকোরের আরেক বিনিয়োগকারী হলেন শে ঝিজিয়াং নামের এক চীনা উদ্যোক্তা, যিনি মূলত ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য কুখ্যাত। তিনি ক্যাসিনো ব্যবসার পেছনে মানব পাচারকারী হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেন।

কম্বোডিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রীও তার পূর্বসূরির পথ ধরেই হাঁটছেন এবং সম্প্রতি শিয়ের সাথে দেখা করে চীন-কম্বোডিয়ার শক্তিশালী সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলেন।

দারা সাকোর প্রকল্প এখন কম্বোডিয়ার কুখ্যাত প্রকল্পগুলোর মধ্যে একটি। একটি দেশের শাসক নিজ দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের বৃহত্তম অংশ অন্য দেশের হাতে তুলে দিয়েছে এ বিষয়টি লজ্জাজনক।

এসকে/এএম/

চীন কম্বোডিয়া প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

খবরটি শেয়ার করুন