ছবি: সংগৃহীত
মুসলিমদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআন অবমাননার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ। বুধবার (১২ জুলাই) এক বিশেষ বৈঠকে ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রস্তাবটি পাস হয়েছে।
এতে বিশেষ করে ইউরোপে পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সম্প্রতি ইউরোপের দেশ সুইডেনে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনার প্রেক্ষিতে পাকিস্তানের আহ্বানে জাতিসংঘে বিশেষ বৈঠকের আহ্বান করা হয়। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে ওই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর প্রতি কোরআন অবমাননার নিন্দা জানানোর আহ্বান জানানো হয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় দেশগুলো নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তারা বলছে, এটা ‘মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে তাদের অবস্থানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক’।
কয়েকটি দেশের বাধার মুখে মঙ্গলবার প্রস্তাবটি নিয়ে কোনো ভোটাভুটি করা সম্ভব হয়নি। বুধবার (১২ জুলাই) এক ভোটাভুটির মাধ্যমে ধর্মীয় বিদ্বেষ প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে প্রস্তাবটি পাস হয়।
জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের ৪৭ সদস্যের মধ্যে এই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশসহ মোট ২৮টি দেশ। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ মোট ১২টি দেশ বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ৭টি দেশ।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংগঠন ইউএনএইচআরসি-এর প্রধান ভলকার টার্ক বলেছেন, ‘মুসলিমবিদ্বেষ, ইসলামবিদ্বেষ, ইহুদিবিদ্বেষ কিংবা খ্রিস্টানদের নিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
‘একইভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যেমন আহমাদি, ইয়াজেদি, বাহাইদের বিরুদ্ধেও বিদ্বেষপূর্ণ আচরণও অন্যায়। এ সবকিছুই অন্যায় এবং তা বন্ধ করা প্রয়োজন।’
আলোচনা, শিক্ষা ও ধর্মীয় আদানপ্রদানের মাধ্যমে বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন টার্ক। এর জন্য সমস্ত দেশকে এগিয়ে আসতে হবে এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তার মতে, পবিত্র কোরআন পোড়ানোর ঘটনা সার্বিকভাবে বিদ্বেষ তৈরি করেছে, সহিংসতার জন্ম দিয়েছে এবং মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসে আঘাত হেনেছে। এ ধরনের ঘটনা অনভিপ্রেত। এগুলো বন্ধ হওয়া দরকার।
ইউএনএইচআরসির প্রস্তাব মানতে কোনো দেশ বাধ্য নয়। তবে সংস্থাটির যেকোনো প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন বা অসমর্থন সদস্য রাষ্ট্রগুলোর শক্তিশালী রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি হিসেবে দেখা হয়।
আরো পড়ুন: মামলার বিচার বিলম্ব করার আবেদন ট্রাম্পের
গত মাসের ২৮ জুলাই ঈদুল আজহার দিন স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের বাইরে সালমান মোমিকো নামের এক ব্যক্তি কোরআনে আগুন ধরিয়ে দেন। এ ঘটনায় মুসলিম বিশ্বে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। মুসলিম দেশগুলোর জোট অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায়। পরে পাকিস্তানের আহ্বানে মঙ্গলবার (১১ জুলাই) জরুরি বৈঠকে বসে ইউএনএইচআরসি।
প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে যেসব দেশ
বাংলাদেশ, আলজেরিয়া, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, ক্যামেরুন, চীন, কিউবা, ইরিত্রিয়া, গ্যাবন, গাম্বিয়া, ভারত, আইভরি কোস্ট, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, মালাবি, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, পাকিস্তান, কাতার, সেনেগাল, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, ইউক্রেন, সংযুক্ত আরব আমিরাত, উজবেকিস্তান ও ভিয়েতনাম।
প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে যারা
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি, বেলজিয়াম, কোস্টারিকা, চেক প্রজাতন্ত্র, ফিনল্যান্ড, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবার্গ, মন্টিনিগ্রো, রোমানিয়া।
ভোটদানে বিরত ছিল যেসব দেশ
নেপাল, বেনিন, চিলি, জর্জিয়া, হন্ডুরাস, মেক্সিকো ও প্যারাগুয়ে।
এম/