বৃহস্পতিবার, ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২রা মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীনা মুদ্রা আরএমবি আন্তর্জাতিকীকরণে চ্যালেঞ্জসমূহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

🕒 প্রকাশ: ০৭:৪২ অপরাহ্ন, ৬ই জুন ২০২৩

#

একবিংশ শতকে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সাফল্যের মধ্যে, চীন আন্তঃসীমান্ত লেনদেন, বিনিয়োগ এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভসহ বিভিন্ন কাজে জাতীয় মুদ্রা রেনমিনবি (আরএমবি) এর আন্তর্জাতিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ করছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক লেনদেনের কাজে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে মার্কিন ডলার, যা যুক্তরাষ্ট্রকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। অন্যদিকে বৈশ্বিক রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে ডলারের কার্যত ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য অর্থনীতির উপর প্রভাব বিস্তারের সুযোগ প্রদান করে। ডলার, ইউরো এবং ইয়েনের মতো বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রার বিকল্প হিসেবে রেনমিনবি এর ব্যবহার ভবিষ্যতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে চীনকে শক্তি প্রদান করবে। বেইজিং এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ক্রমবর্ধমান প্রতিকূল সম্পর্কের মধ্যে চীনের আরএমবিকে আন্তর্জাতিকীকরণের প্রচেষ্টার দ্বারা বুঝা যায় এ দেশ বিশ্বব্যাপী তার ক্ষমতা জাহির করতে আগ্রহী।

আরএমবি এর ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য চাপ প্রয়োগ একবিংশ শতাব্দীতে চীনের জন্য একটি মূল অর্থনৈতিক নীতির লক্ষ্য হয়ে উঠেছে। ২০০৯ সালের প্রথম দিকে, বেইজিং একটি প্রোগ্রাম চালু করেছিল যা চীনা এবং বিদেশী কোম্পানিগুলোকে আরএমবি-এর মাধ্যমে তাদের লেনদেন নিষ্পত্তি করার অনুমতি প্রদান করে। এ নীতিগুলো তখনকার যখন চীনের রাজস্ব জাতীয় রপ্তানি আয়কে ছাড়িয়ে যেতে শুরু করেছিল। বর্তমানে আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্র হিসেবে মার্কিন ডলারের চাহিদা সর্বোচ্চ হওয়ার কারণে তা ব্যাপক সুযোগ সুবিধা ভোগ করে।

এমডিবি, যেমন এনডিবি এবং এআইআইবি চীনকে এক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করে, এবং প্রায়শই তারা বিনিয়োগের কাজগুলো আরএমবি এর মাধ্যমে করে থাকে। চীনা নেতৃত্বাধীন অবকাঠামো প্রকল্পগুলো, উদাহরণস্বরূপ, বিআরআই-এর অংশ হিসেবে, পরবর্তীকালে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যা আরএমবি-নির্ধারিত আর্থিক উপকরণ এবং বিনিয়োগের চাহিদা তৈরি করে এবং বজায় রাখে। উভয় ব্যাংকই তাদের আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রম সহজতর করার জন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরএমবি-নির্ধারিত ঋণ প্রদানের মাধ্যমে আরএমবি-এর ব্যবহার প্রচার করে। 

এনডিবি প্রাথমিকভাবে ২০১৪ সালে ব্রিকসের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ব্রিকস ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে একত্রিত করে। এনডিবি এর প্রাথমিক নীতির উদ্দেশ্য হল উদীয়মান অর্থনীতিতে অবকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন। এনডিবি উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের একটি বিকল্প উৎস প্রদানের সাথে সাথে বিদ্যমান এমডিবি-এর পরিপূরক হিসেবে কাজ করে।

শুরু থেকেই, এনডিবি মৌলিকভাবে বহুপাক্ষিক স্তরে কাজ করছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠাতা ব্রিকস সদস্যরা ব্যাংকের মূলধন ভিত্তির একটি অভিন্ন অংশ (সদস্য প্রতি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার) প্রদান করে। বাংলাদেশ, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত পরবর্তী পর্যায়ে ব্যাংকে যোগদানের পর থেকে এনডিবি তার সদস্যপদ প্রসারিত করেছে।

আরএমবি আন্তর্জাতিকীকরণ এনডিবি নীতির একটি মূল দিক। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে এনডিবি প্রথম এমডিবি হিসেবে আরএমবিতে ত্রিশ কোটি মূল্যের বন্ড ইস্যু করে। এনডিবি একটি আরএমবি নির্ধারিত ঋণ সুবিধা প্রতিষ্ঠা করেছে যা সদস্য দেশগুলোতে অবকাঠামো এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে সমর্থন করার জন্য আরএমবি-তে অর্থায়ন প্রদান করে। এছাড়াও, এনডিবি আন্তঃসীমান্ত লেনদেনে আরএমবি ব্যবহারের প্রচারের জন্য চীনা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ২০১৭ সালে, এনডিবি প্রকল্প অর্থায়ন, বিনিয়োগ এবং মুদ্রা বিনিময়ের জন্য চীনা ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সাথে একটি সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করে। এনডিবি এবং সিডিবি-এর মধ্যে আন্তঃসীমান্ত লেনদেনে আরএমবি-এর ব্যবহার প্রচারের বিধানও এই সমঝোতা স্মারকে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়াও এনডিবি সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতা দেশগুলোর মধ্যে আরএমবি নির্ধারিত লেনদেনের সুবিধার্থে ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অফ চায়না (আইসিবিসি) এবং ব্যাংক অফ চায়না (বিওসি) এর সাথে চুক্তি করেছে। অন্যান্য মূল এনডিবি নীতিগুলোর মধ্যে রয়েছে চীন-নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিকীকরণ উদ্যোগের জন্য সমর্থন। 

তবে এখনও আন্তর্জাতিক বাজারে ডলার কিংবা ইউরোর জনপ্রিয়তা আরএমবি এর ব্যবহার সীমিত করে দেয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরএমবি বিনিময় হারে উল্লেখযোগ্য অস্থিরতার সম্মুখীনও হয়েছে, যার ফলে এনডিবি-এর জন্য আরএমবি-নির্ধারিত লেনদেনের মূল্য নির্ধারণ এবং পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীরাও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। 

এনডিবি অন্যান্য বহুপাক্ষিক উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর কাছ থেকেও প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে এবং বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনার সম্মুখীন হচ্ছে। আরএমবির আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য এনডিবি-এর প্রচেষ্টা চীনের সাথে অন্যান্য রাজ্যগুলোর ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের দ্বারাও প্রভাবিত হচ্ছে। 

অর্থাৎ আরএমবি আন্তর্জাতিকীকরণকে উন্নীত করার জন্য এনডিবি-এর প্রচেষ্টা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে আরএমবি-এর সীমিত বৈশ্বিক ব্যবহার, আরএমবি বিনিময় হারে অস্থিরতা, আরএমবি নির্ধারিত সম্পদের সীমিত প্রাপ্যতা, নিয়ন্ত্রক চ্যালেঞ্জ, অন্যান্য এমডিবি থেকে প্রাপ্ত প্রতিযোগিতা এবং ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা।

এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক (এআইআইবি) হল আরেকটি চীন-সংযুক্ত এমডিবি যার লক্ষ্য এশিয়ার প্রকল্পগুলোতে অবকাঠামোগত অর্থায়ন প্রদান করা। এখানে চীনের প্রভাব আরও সুস্পষ্ট। এআইআইবি তে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার মূলধন প্রদান করে সর্বোচ্চ মূলধন প্রদানকারী দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় চীন। এখানে দ্বিতীয় মূলধন প্রদানকারী দেশ হচ্ছে ভারত। ভারত মূল মূলধনের ৭.৬০% প্রদান করে। চীন এআইআইবিকে আধিপত্যবাদী বৈদেশিক নীতির উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে।

মুদ্রা আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য এআইআইবি এর মূল উপাদান বিআরআই। মূলত বিআরআইকে সমর্থন প্রদানের জন্যেই এর জন্ম। এআইআইবি বিআরআই-এর জন্য তহবিলের একটি মূল উৎস প্রদান করে, যেখানে এআইআইবি এর সমস্ত ঋণের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ সরাসরি বিআরআই প্রকল্পের অর্থায়নে যায়।

প্রধানত অবকাঠামোগত অর্থায়ন এবং টেকসই উন্নয়নের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে, এনডিবি-এর মতোই, এআইআইবি অন্যান্য এমডিবি এবং অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোর সাথে সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছে। তবে এআইআইবিও বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

আফ্রিকা, এশিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকার ক্রমবর্ধমান সংখ্যক উন্নয়নশীল অর্থনীতি চীনের সাথে তাদের লেনদেনে আরএমবি ব্যবহার শুরু করেছে এবং ক্রমবর্ধমানভাবে প্রাথমিকভাবে আরএমবি-তে লেনদেন করছে। তাছাড়া বিআরআই প্রকল্পের অধীনে থাকা দেশগুলো আরএমবি এর মাধ্যমে লেনদেন করছে।

আই. কে. জে/    


Important Urgent

সুখবর এর নিউজ পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

খবরটি শেয়ার করুন